এবার ঐতিহ্যবাহী তিন বাংলাদেশী পণ্যকে বিশ্ব দরবারে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করেছে ভারত।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও
ট্রেড রিলেটেড আসপেক্ট অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের (টিআরএআইপিআর
কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা এবং রাজশাহীর বিখ্যাত ফজলি আমকে তাদের নিজস্ব পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত নভেম্বরে জিআইএ’র কাছে এ তালিকা জমা দেয় ভারত।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র এবং শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক তাগাদা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এ যাবত্।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের এ জালিয়াতির কারণে এসব পণ্যের স্বত্ব দাবি করতে পারবে না বাংলাদেশ। ফলে বঞ্চিত হবে বিশাল অংকের রফতানি আয় থেকে। তারা বলেন, নিজেদের পণ্য এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমরা সচেতন না হলে অন্যরা তা দখল করে নেবেই।
জানা গেছে, ডব্লিটিও’র ভৌগোলিক সূচক আইন (জিআইএ
১৯৯৯ এর ২২, ২৩ এবং ২৪ ধারার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট অনুযায়ী সকল দেশ নিজেদের বিখ্যাত এবং বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রাখে। তবে স্বত্ব সংরক্ষণের জন্য জিআইএ’র তালিকাভুক্তির প্রয়োজন হয়। ভারত এ সুযোগে তাদের ১১৪টি পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশী এ তিন পণ্যকে নিজেদের পণ্যর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। বাংলাদেশী এ তিন পণ্যের মধ্যে রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত জামদানি শাড়ি, হস্তশিল্পের মধ্যে নকশিকাঁথা এবং রাজশাহীর সুস্বাদু ফজলি আম।
সূত্র জানায়, অন্ধ্র প্রদেশে নামমাত্র কিছু জামদানি শাড়ি, বাংলাদেশের নকল করে পশ্চিমবঙ্গের যত্সামান্য নকশিকাঁথা এবং মালদহের আমকে নিজেদের ফজলি আম বলে চালিয়ে দিয়েছে ভারত।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের পণ্য সংরক্ষণ এবং রাইট টু ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। বাংলাদেশী উল্লিখিত তিন পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে গত নভেম্বরে জিআইএ ভারত তাদের তালিকা জমা দিলেও এ বিষয়ে আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ কদর এবং চাহিদার কারণে রফতানিপণ্য হিসেবে বাংলাদেশের এ তিন পণ্যের স্বত্ব থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার জন্য ভারত এ কারসাজি করছে। তারা বলেন, পৃথিবীবিখ্যাত মসলিনের অনুসরণে ঐতিহ্যবাহী জামদানি বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও হয় না। এমনকি ভারতও বাংলাদেশ থেকে জামদানি শাড়ি আমদানি করে থাকে। তাদের আশঙ্কা, ভারতের এ কারসাজির ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজার থেকে নিজেদের স্বত্ব হারাবে বাংলাদেশ। ফলে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা দেকে বঞ্চিত হবে দেশ।
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান এ প্রসঙ্গে বলেন, নিজেদের পণ্য এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমরা সচেতন না হলে অন্যরা দখল করে নেবেই। আমরা কেবল আবেগি কথায় ব্যস্ত। সে কারণে আমাদের পণ্য নিয়ে অন্যরা ফায়দা লুটবে। আমি জানি না ভারত এ ধরনের অনৈতিক কাজ আদৌ করেছে কিনা। আম বলতে তারা কোন আমকে বুঝিয়েছি। তবে এর আগে আমাদের নিমের স্বত্ব আমরা হারিয়েছি আমেরিকার কাছে। জাপানের কাছে হারিয়েছি কারীর স্বত্ব। আমরা যদি নিজেদের পণ্য সংরক্ষণে সচেতন না হই তাহলে অন্যরা সুযোগ নেবেই। এভাবে দু’দিন পরে আমরা আমাদের পাট হারাবো, ইলিশও হারাবো।
We have fault too as we were not serious. But those intellectual rights belong to us not India, definitely.