Mother Language Day celebration in Kolkata
ওপার বাংলায়ও উদযাপিত হচ্ছে অমর একুশ
কলকাতা প্রতিনিধি । ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ৩:১৫
আজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। বাংলায় মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় রফিক-সালাম-বরকত-জব্বারদের আত্মোত্সর্গের দিন। সেই উপলক্ষে ওপার বাংলা কলকাতায়ও উদযাপিত হচ্ছে একুশ। আর এ উপলক্ষে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে থেকে রাতভর অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ভাষা ও চেতনা সমিতি। সেখানে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল-সহ বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীও যোগ দিচ্ছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এসএফআই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ভাষা দিবস উপলক্ষে শুরু হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। আয়োজনে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠন ফেটসু। মেলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির মানুষই শামিল হচ্ছেন এই সব অনুষ্ঠানে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের তরফে অনুষ্ঠান হবে দেশপ্রিয় পার্কের ভাষা স্মারক স্তম্ভ চত্বরে। বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী, কবি জয় গোস্বামী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত থাকবেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পালিত হবে ‘অমর একুশে’ দিবস৷ ভাষা উদ্যানেও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে বেলা একটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাংলা গান-কবিতা-নাটকের পাশাপাশি নিজেদের ভাষায় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন উত্তরবঙ্গ এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আসা পড়ুয়ারাও। ছাত্র সংসদের সহকারী সভাপতি অমরদীপকুমার সিং বলেন, ’ভাষা দিবস মানে কেবল বাংলা নয়, সাঁওতালি, নেপালি–সব ভাষার অধিকার রক্ষাই লক্ষ্য। তাই সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই আমরা সব ভাষাভাষি পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আবেদন করেছি।
কলেজ স্কোয়্যারে শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চের ডাকেও বিকেল চারটায় এক সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি তরুণ সান্যাল। অনুষ্ঠান চলাকালীন ছবি আঁকবেন শিল্পী সমীর আইচ, রবীন মণ্ডলরা। দুপুর একটায় বিভিন্ন পত্রিকা গোষ্ঠীর ডাকেও জমায়েতের আয়োজন হয়েছে। সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য শিল্পীরা। দুপুর দেড়টায় এলিয়ট পার্ক থেকে নন্দন পর্যন্ত পদযাত্রার ডাক দিয়েছে শিল্প-সংগঠন ‘আবরা কা ডাবরা’।
সকালে ভাষা দিবস উপলক্ষে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ লাইব্রেরি থেকে একটি সুদৃশ্য প্রভাতফেরী বের হয়। এসময় প্রভাতফেরীতে দূতাবাসের কর্মীদের পাশাপাশি কয়েক শত মানুষও যোগ দিয়েছিলেন। তাদের হাতে ছিল নানা বর্ণ মালার পোস্টার। পরে শহরের বেশকয়েকটি জায়গা ঘুরে সেই প্রভাতফেরী এসে পৌঁছয় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রাঙ্গণে।
সেখানে শহীদমিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, উপ-রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামসহ ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মুস্তাক আহমেদসহ বিশিষ্টরা। এরপরই ভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে একটি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়।
এদিকে কলকাতার রবীন্দ্রসদন চত্বরেও নবজাগরণ সংগঠন এবং ভাষা-চেতনা সমিতির যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে মহান একুশে দিবস ও ভাষা আন্দোলনের ৬২ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ, মেঘালয়, আসাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। উপস্থিত আছেন সুফি, কাওয়ালি, বাউল, জারি-সারি, ছৌ নাচের শিল্পীরা। রাত ১২ টায় বেরোয় মশাল মিছিল।
কলকাতা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ত্রিপুরা-বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টেও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করা হয়। উদ্যোক্তা ত্রিপুরা সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতর।
উল্লেখ্য, আজ থেকে ৬০ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য প্রায় দিয়েছিলেন বাংলাদেশের আটজন তরুণ। এরা হলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক প্রমুখ। তারপর থেকেই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ওপার বাংলায়ও উদযাপিত হচ্ছে অমর একুশ