asad71
PROFESSIONAL
- Joined
- May 24, 2011
- Messages
- 6,863
- Reaction score
- 4
- Country
- Location
বিডিটুডে.নেট:ভিডিও >> স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান মুজিব কাকু: তাজউদ্দীন কন্যা
ভিডিও >> স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান মুজিব কাকু: তাজউদ্দীন কন্যা
24 Apr, 2014
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে রেকর্ডে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান অস্বীকৃতি জানান বলে দাবি করেছেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে এসব কথা লিখেছেন, যা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে।
তাজউদ্দীন কন্যার বর্ণনা অনুযায়ী, স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর অস্বীকৃতি জানানোর পর তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে।
এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’
‘তাজউদ্দীনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল মুজিব বাহিনী’ শীর্ষক মানবজমিনের প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু তুলে দেয়া হলো;
২৭শে মার্চ সকালে কারফিউ তুলে নেয়া হয় দেড় ঘণ্টার জন্য। এই সময় আব্বু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন যে, সাতমসজিদ রোড পার হয়ে রায়ের বাজারের পথ দিয়ে শহর ত্যাগ করবেন। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা টুপি পরিহিত ও হাতে লোকদেখানো বাজারের থলির আড়ালে কোমরে গোঁজা পিস্তল আড়াল করে আব্বু চললেন গ্রামের উদ্দেশ্যে।’
যুদ্ধাকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এভাবেই বেরিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনের উদ্দেশ্যে।
তাজউদ্দীন আহমদের যুদ্ধযাত্রার এ বর্ণনা দিয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন আহমদ। ১৯৯০ সালে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ ও উইমেন্স স্টাডিজ স্কলারসহ উইমেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, যাওয়ার পথে পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম আগারগাঁয়ে শুকুর মিয়া নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মীর বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন। এই বাড়ির সকলেই তাঁতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখানে তারা শুনতে পান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা। ২৭শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত এই ঘোষণাটি আব্বুসহ সামরিক ও বেসামরিক সকল বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করে। পরদিন ভোরেই তাঁরা সেই স্থান ত্যাগ করেন।
এরপর তাজউদ্দীন আহমদের ভারত যাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বভার গ্রহণ, মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার বিশদ বিবরণ লিখেছেন শারমিন আহমদ। তিনি লিখেছেন, ১১ই এপ্রিল সকালে ময়মনসিংহের তুরা পাহাড়ের কাছে আব্বু, এম. মনসুর আলী ও আমীর-উল ইসলাম অবতরণ করলেন সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্ধানে। বিএসএফ’র সহায়তায় তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আবদুল মান্নানের খোঁজ পেলেন। আব্বু ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম একান্তে আলাপ করলেন। আব্বু তাকে জানালেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনসহ সব ঘটনা।
খোন্দকার মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকামূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণীও লিখেছেন শারমিন আহমদ। মুজিব বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, সরকার গঠনের পক্ষে উত্থাপিত যুক্তিবলে যখন বিপ্লবী কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবটি ভেস্তে যায় তখন বিএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক রুস্তামজির বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘র’-এর সহায়তায় শেখ মণির নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। এক বাক্সে সব ডিম না রাখার পক্ষপাতী ভারত সরকারও মুজিব বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে গোপন রাখে। সমগ্র জাতির মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে আব্বুর নিবেদিত কর্মপ্রয়াসের বিপরীতে অনুগত তরুণদের ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে গঠিত মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। একপর্যায়ে মুজিব বাহিনীর এক নেতা এতটাই হিংসাত্মক ও মরিয়া হয়ে ওঠে যে, সে আব্বুকে হত্যারও প্রচেষ্টা চালায়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন কন্যা লিখেছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চের ভয়াল কালোরাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সাথে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। বড় কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আব্বুর উপদেশ গ্রহণে মুজিব কাকু এর আগে দ্বিধা করেননি। আব্বুর সে কারণে বিশ্বাস ছিল যে, ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে মুজিব কাকু কথা রাখবেন। মুজিব কাকু, আব্বুর সাথেই যাবেন। অথচ শেষ মুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুর স্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) অবস্থিত বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে এবং তাঁরা গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়ে শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে (বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো প্রসঙ্গে) আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ওই শোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন। পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এই সব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যাঁরা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মুজিব কাকু তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন।
আব্বু বললেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো- পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ রূপেই নেতৃত্বশূন্য করে দেয়া। এই অবস্থায় মুজিব কাকুর ধরা দেয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যার শামিল। তিনি বললেন, মুজিব ভাই, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হলেন আপনি। আপনার নেতৃত্বের ওপরই তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে। মুজিব কাকু বললেন, ‘তোমরা যা করবার কর। আমি কোথাও যাবো না।’ আব্বু বললেন, ‘আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তো তা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারও নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।’
আব্বুর সেদিনের এই উক্তিটি ছিল এক নির্মম সত্য ভবিষ্যদ্বাণী। তাজউদ্দীন কন্যার বর্ণনা অনুযায়ী, স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর অস্বীকৃতি জানানোর পর তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে।
মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’
শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, আব্বুর লেখা ওই স্বাধীনতার ঘোষণারই প্রায় হুবহু কপি পরদিন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। ধারণা করা যায়, ২৫শে মার্চের কয়দিন আগে রচিত এই ঘোষণাটি আব্বু তার আস্থাভাজন কোন ছাত্রকে দেখিয়ে থাকতে পারেন। স্বাধীনতার সমর্থক সেই ছাত্র হয়তো স্বউদ্যোগে বা আব্বুর নির্দেশেই স্বাধীনতার ঘোষণাটিকে বহির্বিশ্বের মিডিয়ায় পৌঁছে দেন। মুজিব কাকুকে স্বাধীনতার ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে রাত ৯টার দিকে আব্বু ঘরে ফিরলেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে। আম্মাকে সব ঘটনা জানালেন।
প্রসঙ্গত, তাজউদ্দিন আহমদের আরেক কন্যা সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০৯ সালে জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পদত্যাগ করেন।
উৎসঃ আরটিএনএন
Share on facebook Share on email Share on print 92
This is the Original Sin for which Bangladeshis keep suffering. Tajuddin's daughter has published a book where she chronicles events around the 25th March crackdown by PA.She says Mujib had refused to sign the declaration of independence that Tajuddin had placed before him.
ভিডিও >> স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান মুজিব কাকু: তাজউদ্দীন কন্যা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে রেকর্ডে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান অস্বীকৃতি জানান বলে দাবি করেছেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে এসব কথা লিখেছেন, যা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে।
তাজউদ্দীন কন্যার বর্ণনা অনুযায়ী, স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর অস্বীকৃতি জানানোর পর তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে।
এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’
‘তাজউদ্দীনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল মুজিব বাহিনী’ শীর্ষক মানবজমিনের প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু তুলে দেয়া হলো;
২৭শে মার্চ সকালে কারফিউ তুলে নেয়া হয় দেড় ঘণ্টার জন্য। এই সময় আব্বু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন যে, সাতমসজিদ রোড পার হয়ে রায়ের বাজারের পথ দিয়ে শহর ত্যাগ করবেন। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা টুপি পরিহিত ও হাতে লোকদেখানো বাজারের থলির আড়ালে কোমরে গোঁজা পিস্তল আড়াল করে আব্বু চললেন গ্রামের উদ্দেশ্যে।’
যুদ্ধাকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এভাবেই বেরিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনের উদ্দেশ্যে।
তাজউদ্দীন আহমদের যুদ্ধযাত্রার এ বর্ণনা দিয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন আহমদ। ১৯৯০ সালে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ ও উইমেন্স স্টাডিজ স্কলারসহ উইমেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, যাওয়ার পথে পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম আগারগাঁয়ে শুকুর মিয়া নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মীর বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন। এই বাড়ির সকলেই তাঁতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখানে তারা শুনতে পান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা। ২৭শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত এই ঘোষণাটি আব্বুসহ সামরিক ও বেসামরিক সকল বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করে। পরদিন ভোরেই তাঁরা সেই স্থান ত্যাগ করেন।
এরপর তাজউদ্দীন আহমদের ভারত যাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বভার গ্রহণ, মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার বিশদ বিবরণ লিখেছেন শারমিন আহমদ। তিনি লিখেছেন, ১১ই এপ্রিল সকালে ময়মনসিংহের তুরা পাহাড়ের কাছে আব্বু, এম. মনসুর আলী ও আমীর-উল ইসলাম অবতরণ করলেন সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্ধানে। বিএসএফ’র সহায়তায় তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আবদুল মান্নানের খোঁজ পেলেন। আব্বু ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম একান্তে আলাপ করলেন। আব্বু তাকে জানালেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনসহ সব ঘটনা।
খোন্দকার মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকামূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণীও লিখেছেন শারমিন আহমদ। মুজিব বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, সরকার গঠনের পক্ষে উত্থাপিত যুক্তিবলে যখন বিপ্লবী কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবটি ভেস্তে যায় তখন বিএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক রুস্তামজির বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘র’-এর সহায়তায় শেখ মণির নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। এক বাক্সে সব ডিম না রাখার পক্ষপাতী ভারত সরকারও মুজিব বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে গোপন রাখে। সমগ্র জাতির মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে আব্বুর নিবেদিত কর্মপ্রয়াসের বিপরীতে অনুগত তরুণদের ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে গঠিত মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। একপর্যায়ে মুজিব বাহিনীর এক নেতা এতটাই হিংসাত্মক ও মরিয়া হয়ে ওঠে যে, সে আব্বুকে হত্যারও প্রচেষ্টা চালায়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন কন্যা লিখেছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চের ভয়াল কালোরাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সাথে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। বড় কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আব্বুর উপদেশ গ্রহণে মুজিব কাকু এর আগে দ্বিধা করেননি। আব্বুর সে কারণে বিশ্বাস ছিল যে, ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে মুজিব কাকু কথা রাখবেন। মুজিব কাকু, আব্বুর সাথেই যাবেন। অথচ শেষ মুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুর স্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) অবস্থিত বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে এবং তাঁরা গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়ে শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে (বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো প্রসঙ্গে) আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ওই শোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন। পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এই সব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যাঁরা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মুজিব কাকু তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন।
আব্বু বললেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো- পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ রূপেই নেতৃত্বশূন্য করে দেয়া। এই অবস্থায় মুজিব কাকুর ধরা দেয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যার শামিল। তিনি বললেন, মুজিব ভাই, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হলেন আপনি। আপনার নেতৃত্বের ওপরই তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে। মুজিব কাকু বললেন, ‘তোমরা যা করবার কর। আমি কোথাও যাবো না।’ আব্বু বললেন, ‘আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তো তা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারও নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।’
আব্বুর সেদিনের এই উক্তিটি ছিল এক নির্মম সত্য ভবিষ্যদ্বাণী। তাজউদ্দীন কন্যার বর্ণনা অনুযায়ী, স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর অস্বীকৃতি জানানোর পর তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে।
মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’
শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, আব্বুর লেখা ওই স্বাধীনতার ঘোষণারই প্রায় হুবহু কপি পরদিন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। ধারণা করা যায়, ২৫শে মার্চের কয়দিন আগে রচিত এই ঘোষণাটি আব্বু তার আস্থাভাজন কোন ছাত্রকে দেখিয়ে থাকতে পারেন। স্বাধীনতার সমর্থক সেই ছাত্র হয়তো স্বউদ্যোগে বা আব্বুর নির্দেশেই স্বাধীনতার ঘোষণাটিকে বহির্বিশ্বের মিডিয়ায় পৌঁছে দেন। মুজিব কাকুকে স্বাধীনতার ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে রাত ৯টার দিকে আব্বু ঘরে ফিরলেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে। আম্মাকে সব ঘটনা জানালেন।
প্রসঙ্গত, তাজউদ্দিন আহমদের আরেক কন্যা সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০৯ সালে জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পদত্যাগ করেন।
উৎসঃ আরটিএনএন
Share on facebook Share on email Share on print 92
This is the Original Sin for which Bangladeshis keep suffering. Tajuddin's daughter has published a book where she chronicles events around the 25th March crackdown by PA.She says Mujib had refused to sign the declaration of independence that Tajuddin had placed before him.
Last edited: