Amar baje kotha, 70s e Uttam, Suchitra, Soumitra, Aparna sobai cinema koreche. Sudhu matro 1970 tei ei Aranyer Dinratri, Nishi Padmo ar Sagina Mahato release korechilo.
আচ্ছা, ঠিক আছে, কলকাতার ছবি অনেক উপরে ছিলো বাংলাদেশি ছবির চাইতে। এবার খুশি।
বাই দ্য ওয়ে, কলকাতায় নাকি শহীদ মিনার করবে মমতা। সে নিজে বাংলাদেশ বিদ্বেষী । সে আবার ভাষা শহীদদের জন্য করবে শহীদ মিনার। আমার বিশ্বাস হয় না। জ্যোতি বসু বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু ছিলেন। মমতা যেদিন ক্ষমতা ছাড়া হবে সেদিন বাংলাদেশে মিষ্টি বিতরন হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
কলকাতা নেই কলকাতায়
আবদুল মান্নান | আপডেট: ০০:০৭, অক্টোবর ১৪, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
ভারত উপমহাদেশ তো বটেই, বিশ্বে এমন মানুষ কম আছে, যারা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নাম শোনেনি। ১৯১১ সাল পর্যন্ত এটাই ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। কলকাতা তখন লন্ডনের চেয়ে অনেক উন্নত শহর। কালক্রমে সেই শহর অনেকটা ক্ষয়রোগীর মতো ধুঁকে ধুঁকে মরছিল। ১৯৭২ সালে প্রথমবার কলকাতায় গিয়ে মনে হয়েছিল আফ্রিকার কোনো দেশের শহর। লোডশেডিং শব্দটির সঙ্গে প্রথমবার পরিচয় এই কলকাতায়। তখন বাংলাদেশের মানুষকে ওপারের বাঙালিরা বলত ‘জয় বাংলার’ লোক। সোজা কথা নয়, মাছে-ভাতে বাঙালি নিজেদের জন্য একটা দেশকেই যুদ্ধ করে স্বাধীন করে ফেলেছে। এই পারের বাঙালদের তখন কদরই আলাদা। প্রথম বছর দুই তো ১০০ টাকা দিলে সরকারের পাসপোর্ট অফিস থেকে একটা পারমিট মিলত আজমির-দিল্লি যাওয়ার জন্য। সেটা দেখালেই বনগাঁ পার হয়ে সীমান্তের ওপার। তারপর মুরগির মতো গাদাগাদি করে ট্রেনে শিয়ালদা স্টেশন। সেখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার ভরসা টানা রিকশা অথবা অ্যাম্বাসেডর ট্যাক্সি। ২০ টাকা দিয়ে শিয়ালদা থেকে বন্ধুর বাড়ি শ্যামবাজার গিয়েছিলাম। বদলে যেতে দেখেছি সেই কলকাতাকে গত ৪০ বছরে। বদলের প্রথম পদক্ষেপ কলকাতার মেট্রোরেল। কেন্দ্রে তখন রেলমন্ত্রী মালদাহের গনি খান চৌধুরী। কেন্দ্র থেকে টাকা বরাদ্দ দিলেন এই মেট্রোর জন্য। অন্য রাজ্যগুলোর সে কী প্রতিবাদ! পরিবেশবাদী আর বামরা বললেন, কংগ্রেস সরকার দিল তো কলকাতার সব ঐতিহ্য শেষ করে। জমির মালিকেরা বললেন, জান দেব তো মেট্রোর জন্য জমি দেব না। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র জনগণকে বোঝাল কেন এই মেট্রো প্রয়োজন। সেই মেট্রো শেষ করতে ১২ বছর কলকাতার মানুষ কষ্ট স্বীকার করেছে। এখন কলকাতার মানুষ গর্ব করে বলে, ভাগ্যিস আমাদের গনি খানের মতো একজন মন্ত্রী ছিলেন। এখন সস্তায় দুই ঘণ্টার পথ ২০ মিনিটে যাওয়া যায়।
বছর খানেক পর এবার কলকাতায় পদার্পণ করে দেখি, সেই পুরোনো নেতাজি সুভাষ বোস বিমানবন্দর কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল অত্যাধুনিক বিমানবন্দর, যার পুরোটাই নির্মিত হয়েছে স্টিল, কাচ আর অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। ভুল জায়গায় এসে পড়িনি তো? না, বিমানবন্দরের লোকজন বাংলায় কথা বলছে। দিকনির্দেশনাগুলোও হিন্দির পাশাপাশি বাংলায়। ইমিগ্রেশনের দার্জিলিং-কন্যা হাসি দিয়ে যথারীতি নাম-ঠিকানা জানতে চাইলেন। বলি সুন্দর বিমানবন্দর। কথা না বাড়িয়ে পাসপোর্টে সিল মেরে বললেন, ভালো থাকবেন। বাহ্, পরিবর্তনটা তো বেশ হয়েছে বলতে হয়!
আগে থেকে কথা ছিল সাংবাদিক বন্ধু সুনীলের সঙ্গে পরদিন দুপুরে খাব। ফোন করি তাকে। সুনীল বলে সে দুঃখিত, কাল দুপুরে আসতে পারবে না। কারণ, কাল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী স্থানান্তরিত হচ্ছে। বলে কী সুনীল! খোদ রাজধানীটাই স্থানান্তরিত হয়ে যাবে? বলি ঠাট্টা রেখে আসল কথা খুলে বলতে। বলে, কাল পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র এবং মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর ঐতিহাসিক ‘মহাকরণ’ ছেড়ে দূরে হাওড়া জেলায় অত্যাধুনিক ‘এইচআরবিসি’ ভবনে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ভবনের আদুরে নাম দিয়েছেন ‘নবান্ন’। ‘নবান্ন’ কাগজপত্রে হাওড়ায় হলেও ১৪ তলা এই সম্পূর্ণ কাচে ভরা ভবন থেকে দেখা যাবে এক কালের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা। মহাকরণ থেকে ১১টি মন্ত্রণালয় এই ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। সুনীল বলে, তাকে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত কভার করতে যেতে হবে। কলকাতার প্রায় আড়াই শ বছর পুরোনো ‘মহাকরণ’ ছেড়ে ‘নবান্নে’। কে হাতছাড়া করতে চায় এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত? বলে রাতে এসে কথা বলবে।
ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর এম আর আখতার মুকুলের বাবা সাদাত আলী আখন্দ তের নম্বরে পাঁচ বছর নামে এক চমৎকার বই লিখেছিলেন সেই পঞ্চাশের দশকে। লেখক এই মহাকরণে চাকরি করেছিলেন পাঁচ বছর। সেটি সম্ভবত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিস ছিল। তেরো নম্বরটি তাঁর বিভাগের নম্বর হবে। সেই বই পড়ে প্রথম মহাকরণের সঙ্গে পরিচয়। করণিক মানে কেরানি থেকে মহাকরণ। মানে বড় বড় কেরানিরা এখানে বসেন। এর আরেক নাম রাইটার্স বিল্ডিং।
পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলা দখল করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৭ সালে ছোট কেরানিদের অফিস হিসেবে থমাস লিয়নের নকশা অনুযায়ী এই রাইটার্স ভবন বানিয়েছিল। পর্যায়ক্রমে এটি অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবে বড় হয়েছে। সামনে লালদিঘি। ইংরেজরা এলাকাটাকে নাম দিয়েছিল বড় লাট লর্ড ডালহৌসির নামে। গত শতকের ত্রিশের দশকে বাংলার যুব বিদ্রোহের সময় তিন বাঙালি যুবক বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত আর দীনেশ গুপ্ত পিস্তল নিয়ে রাইটার্সে ঢুকে পুলিশের মহাপরিদর্শক কর্নেল এন এস সিম্পসনকে তার অফিসে হত্যা করেছিল। সিম্পসন কোনো বাঙালি যুবক রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হলে তার ওপর চরম অত্যাচার করত। বিনয় দেহরক্ষীদের গুলিতে মারা যায়। বাদল ধরা পড়ার পূর্বমুহূর্তে সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করে আর দীনেশের ফাঁসি হয়।
ষড়যন্ত্রকারী ওয়ারেন হেস্টিংস যখন ভারতের বড় লাট, তখন ফোর্ট উইলিয়ামস কলেজ রাইটার্সে ইংরেজ কেরানিদের দেশি ভাষার তালিম দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সত্তরের দশকে ডালহৌসির নতুন নামকরণ হলো বিনয়-বাদল-দীনেশে বাগ। কিন্তু কলকাতার একশ্রেণীর মানুষের এখনো ইংরেজপ্রীতি অক্ষুণ্ন আছে। তাদের কাছে এই স্থানের নাম ডালহৌসি। সুনীল রাতে ফোন করে বলে, ‘নবান্নে’ দিদির অন্য চেহারা। সাধারণত দিদি সিপিএম-ফোবিয়ায় ভোগেন। কেউ তাঁকে তাঁর অপছন্দের প্রশ্ন করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে ফেলেন নিঃসন্দেহে এটি সিপিএমের ষড়যন্ত্র। সুনীল বলে, দিদির সামনে ‘নবান্নের’ উদ্বোধনের সময় কয়েক শ সাংবাদিক আর টিভি ক্যামেরা। শুরুতেই দিদি বলে দিয়েছেন আজ কোনো প্রশ্ন নয়, আজ ‘নবান্নের’ জন্মদিন। সুতরাং সবাইকে তিনি মিষ্টিমুখ করাবেন।
সুনীল জানাল, আসলে মহাকরণের সংস্কার হবে, তাই অস্থায়ীভাবে মহাকরণের আংশিক স্থানান্তর করা হয়েছে ‘নবান্নে’। তবে দিদির একটা মন্তব্য ইতিহাসপ্রেমীদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। উদ্বোধনের পর নিজের কক্ষে পা রেখে তাঁর মন্তব্য, ‘এই ভবনটিকে আমার ভালো লাগা শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি রাইটার্সে ফিরে না যাই?’ ‘নবান্ন’ দৃষ্টিনন্দন হতে পারে, তবে মহাকরণের প্রায় আড়াই শ বছরের ইতিহাসের কী হবে? সুনীল নিজে সিপিএমের ভক্ত। জানতে চাই, মমতা এত সব কাণ্ডকীর্তির পরও সামনের নির্বাচনে কি জিতবেন? সুনীলের মতো কলকাতার অনেকেই মনে করেন, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করার মতো দল নেই। নেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কংগ্রেস এখানে মৃতপ্রায়। বামফ্রন্টও ধুঁকছে। বামফ্রন্টের যা কিছু জনপ্রিয়তা ছিল, তার সবটুকু শেষ করেছে তার অঙ্গসংগঠনগুলো। অন্যরা কাঁধে শান্তিনিকেতনি ব্যাগ ঝুলিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত। সুস্থ রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের কেউ তেমন আসছে না। রাজনীতি অনেকটা পেশিশক্তির কাছে জিম্মি। অনেকটা বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিচ্ছবি।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই মুহূর্তে মমতার কারণে দুটি বড় অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে। একটি সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন আর দ্বিতীয়টি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। প্রথম চুক্তিটিতে সেই ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু আর ইন্দিরা গান্ধী স্বাক্ষর করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশে সেই চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ অনুমোদন করে নেয়, ভারত এখনো পারেনি। এর আগে এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি আর ভারতও গা করেনি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে আবার উদ্যোগ শুরু হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলে হবে। দিদি আর বিজেপি বলে হবে না। কারণ, বাংলাদেশের লাভ বেশি। অদ্ভুত যুক্তি! দিদির তৃণমূল আর বিজেপির সমর্থন ছাড়া এই বিল লোকসভায় পাস হবে না। শুনেছি, সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে দিদি একটু নমনীয় হয়েছেন। কেন্দ্র বলেছে, লোকসভার সামনের শীতকালের অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে সুনীলের মতে, দিদি সকালে এক কথা বলেন, আবার বিকেলে অন্য। অনেকটা আমাদের এরশাদের মতো। তবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এই যাত্রায় যে হচ্ছে না, তা অনেকটা নিশ্চিত। দিদি বলেন, এই চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি। তবে এই দুটি চুক্তির বিষয়ে দ্রুত ফয়সালা না হলে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল তা একটি ইস্যু করবে। অবশ্য বিরোধী দল কখনো ক্ষমতায় গেলে এ ব্যাপারে কিছু করার তেমন মুরোদ আছে বলে মনে হয় না। নির্বাচনে যদি পরিস্থিতির রদবদল হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের যে কত বড় ক্ষতি হবে, তা এখনো তারা হয়তো আঁচ করতে পারেনি। ভারত কখনো ঠিকমতো এটি উপলব্ধি করতে পারে না, অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করে ফেলা আসলে তাদের জন্য কতটা মঙ্গলজনক।
মূল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বন্ধু জ্যোতি বসু অথবা তাঁর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টও ক্ষমতায় নেই আর কলকাতাও কলকাতায় নেই। বাংলাদেশ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বন্ধুত্বসুলভ। রাজ্যের অদূরদর্শী রাজনীতি যত সমস্যা। কলকাতা যেমন কলকাতায় নেই, ঠিক তেমনি ওপারের রাজনীতিও আর আগের জায়গায় নেই। সময় থাকতে দিদি তা উপলব্ধি করবেন বলে মনে হয় না। না করলে ষোলো আনা লোকসান তাঁর।
আবদুল মান্নান: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কলকাতা নেই কলকাতায়