Deb with our Shakib 'lipstick' Khan
দুই বাংলার দুই তারকা
মেহেদী মাসুদ ও মনজুর কাদের | আপডেট: ০০:৪৫, মার্চ ০৬, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
‘বাংলাদেশে এসেছি, শাকিব খানের সঙ্গে দেখা হলে মন্দ হতো না।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে
প্রথম আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন দেব। তখনই এ কথা বলেন তিনি।
পরদিন শুক্রবার বিকেলে দেব ফিরে যাবেন কলকাতায়। হাতে সময় আছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাটুকু। রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বাংলাদেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান আর ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় নায়ক দেবকে আমন্ত্রণ জানায়
প্রথম আলো।
সময় নির্ধারণ করা হয় রাত সাড়ে আটটায়। দুজনই ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত। শাকিব খান ব্যস্ত হিরো
-দ্য সুপারস্টার ছবি নিয়ে আর দেব বুনোহাঁস নিয়ে। হিরো
-দ্য সুপারস্টার ছবিটি প্রযোজনা করছেন শাকিব খান। ছবিতে অভিনয়ও করছেন তিনি। আর বুনোহাঁস কলকাতার ছবি। সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস থেকে পরিচালনা করছেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী।
দুজনই এলেন প্রায় কাছাকাছি সময়ে। শাকিব খান রাত নয়টা ৫০ মিনিটে আর দেব রাত ১০টায়।
রুমে ঢুকেই দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন দেব। এগিয়ে গেলেন শাকিবের কাছে। দুজন শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। শুরুতেই দুজন দুজনকে ‘তুমি’ সম্বোধন করলেন। দেখে মনে হলো তাঁরা অনেক দিনের পরিচিত। মনেই হয়নি সেদিনই তাঁদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে বসা।
‘এবারই প্রথম ঢাকায় এলে?’ শাকিবের জিজ্ঞাসা।
দেব বললেন, ‘হ্যাঁ।’
: সারা দিন শুটিং করলে?
: হ্যাঁ, বুনোহাঁস ছবির।
: কমার্শিয়াল মুভি?
: না, একটু অন্য ধরনের ছবি। তোমারও শুটিং ছিল?
: হ্যাঁ, আমার নিজের ছবি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কাজ করেছি।
: তোমাদের এখানে বেশির ভাগ শুটিং ঢাকায় হয়?
: না, গল্পের ওপর নির্ভর করে। এপ্রিলে শুটিং করব সিঙ্গাপুরে। মে মাসে যাব লন্ডন। পুরান ঢাকার খাবার কিন্তু খুব বিখ্যাত। খাওয়া হয়েছে?
: দুপুরে হাজীর বিরিয়ানি খেয়েছি।
: বাংলাদেশের সঙ্গে কলকাতার ভাষা আর সংস্কৃতির চমৎকার মিল রয়েছে।
: ঢাকায় এসে তা বেশ বুঝতে পেরেছি। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। একটি পুরো ছবি কিংবা অর্ধেক ছবির কাজ দুই বাংলা মিলে যদি করা যায়, তাহলে মন্দ হবে না।
তখন রুমে এলেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও দুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পাওয়া সাউন্ড ডিজাইনার বিশ্বদীপ চ্যাটার্জি। তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী কর। বুনোহাঁস
ছবিতে অতিথি শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করছেন পীযূষ।
এরপর আলোচনায় আসে নানা বিষয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের সম্ভাবনা, ঢাকায় বুনোহাঁস
ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী, ঢাকায় দেবের আর কলকাতায় শাকিবের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার, বেড়ানো প্রভৃতি।
অনিরুদ্ধর কাছে দুই বাংলার দুই শীর্ষ নায়ককে নিয়ে ছবি তৈরির আহ্বান জানান পীযূষ।
‘তুমি কক্সবাজার গিয়েছ?’ দেবকে জিজ্ঞেস করলেন শাকিব।
: না।
: তাহলে তুমি খুব মিস করেছ। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত।
: এখান থেকে কতদূরে?
: বিমানে ৪৫ মিনিট। আরও আছে সুন্দরবন, বান্দরবান, রাঙামাটি। বাংলাদেশ যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কতটা সমৃদ্ধ, তা না দেখলে বুঝতে পারবে না।
: তোমার কথা শুনে যেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
কিন্তু উপায় নেই। কালই (শুক্রবার) ফিরে যেতে হবে। দেখি, এরপর যখন আসব, তখন অবশ্যই যাব।
: দেব, তুমি কিন্তু কক্সবাজার আর বান্দরবানে ছবির শুটিং করতে পারো।
: আমারও খুব লোভ হচ্ছে। দেখি, সামনে আমার নিজের একটা পুরো ছবির শুটিং করব বাংলাদেশে। তাতে বাংলাদেশের পর্যটনের বিভিন্ন জায়গা রাখব। শাকিব, তুমি কলকাতার ছবিতে কাজ করেছ? ফেরদৌস তো করছে। খোকাবাবু ছবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।
: আমি কিন্তু যৌথ প্রযোজনার একটি ছবির কাজ করতে কলকাতায় গিয়েছেলাম। ওই ছবিতে স্বস্তিকা আর ভিক্টর ব্যানার্জি ছিলেন। এখন কলকাতার অশোক ধানুকা ফিল্মসের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা একটি ছবি তৈরি ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করছি, আমরা কাজটা করব।
: আমি বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতা আর তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় মুগ্ধ হয়েছি।
: তুমি বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর গান শুনেছ?
: জেমসের গান আমার খুব পছন্দ। অর্ণব ও আনুশেহর গানও শুনেছি। অনিরুদ্ধদা তো বুনোহাঁস ছবিতে ওদের গান রাখতে চেয়েছিলেন।
এরপর কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলেন দেব। আর পীযূষ বললেন, একটা বড় সময় শাকিব একাই ঢাকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ধরে রেখেছিলেন। এটা অনেকেই মনে রাখবে।
শাকিব প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন, ‘তোমাদের ওখানে এখন ছবির বাজেট কত?’
‘সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছে আমার চাঁদের
পাহাড় ছবিটি। এই ছবির বাজেট ছিল ১৫ কোটি রুপি। তবে গড়ে ছয় থেকে সাত কোটি রুপি তো খরচ হয়ই। তোমাদের?’
শাকিব বললেন, ‘আমাদের এখানে আড়াই-তিন কোটি টাকার নিচে কোনো ছবি হয় না।’
অনিরুদ্ধ বললেন, ‘বাংলাদেশের মাটির
ময়না, মনপুরা, টেলিভিশন, থার্ড
পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, রানওয়ে, চোরাবালির খবর আমাদের ওখানে অনেকেই জানে। বাংলাদেশের ছবির ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ আছে। কোয়েল মল্লিক তো আমাকে ওর জন্য বাংলাদেশের ভালো ভালো কিছু সিনেমার ডিভিডি নিয়ে যেতে বলেছে।’
পীযূষ বললেন, ‘দেব, তুমি কী কেনাকাটা করলে?’
দেব বললেন, ‘মা জামদানি শাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন। তা না হলে বাসায় ঢুকতে দেবেন না। কিন্তু ছবির শুটিং করতে গিয়ে তা আর হলো না। জানি না মাকে গিয়ে কী বলব!’
কথা ছিল, আড্ডা হবে আধা ঘণ্টা। কিন্তু ততক্ষণে এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট হয়ে গেছে। দুজনকে এবার উঠতে হবে।
‘আমি তোমার সঙ্গে একটা ছবি তুলতে পারি?’ শাকিবকে বললেন দেব। শাকিবও রাজি। এবার ছবি তোলার পালা। তার আগে দুজনই ধন্যবাদ জানালেন
প্রথম আলোকে।
দুই বাংলার দুই তারকা