Here is the detail news of Awami League regime using police to abuduct and detain witness from court gate so that he cannot give his statement in the court. Regardless of Jamaat top leaders are guilty or not, Awami League regime abducting and detaining witness came to give his statement is gross violation law and human rights and reflects face of fascist regime. When Awami League using state power to abuse and oppress people (not just Jamaat) everyone has right to fight back.
-------
ট্রাইব্যুনাল গেট থেকে সাঈদীর সাক্ষী অপহরণ করল ডিবি : কারাগারে পাঠিয়ে যা করার করে ফেলুন, নাটকের দরকার নেই - সাঈদী
স্টাফ রিপোর্টার
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টায় আল্লামা সাঈদীর দুই আইনজীবীসহ গাড়িতে করে ওই সাক্ষী ট্রাইব্যুনালের গেটে আসার পরপরই অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বর্জন করেছেন। এতে সাঈদীর আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সরকারপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে।
আইনজীবীদের অনু-পস্থিতিতে সরকারপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে আপত্তি জানান আল্লামা সাঈদী নিজে। তিনি একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ করে বলেন, আমাকে কথা বলতে না দিলে কারাগারে পাঠিয়ে দিন। আপনি হয়ত অদৃশ্য কোনো হাতের লেখা রায় পড়ে শোনাবেন। অদৃশ্য হাতের লেখা রায় কবুলের জন্য আমি প্রস্তুত আছি। কারাগারে পাঠিয়ে যা করার করে ফেলুন। এ ধরনের নাটকের কোনো প্রয়োজন নেই।
এদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের গাড়ি থেকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা সুখরঞ্জন বালীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক নামিয়ে অপহরণ করা এবং পরবর্তীতে আদালত কক্ষে চিফ প্রসিকিউটর কর্তৃক এ ঘটনা অস্বীকার করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের সমন্বয়ক আইনজীবী তাজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ৪৬ সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা দুরূহ, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং আদৌ সম্ভব নয় জানিয়ে গত ২০ মার্চ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিল সরকারপক্ষ। পরে ট্রাইব্যুনাল ৩০ মার্চ এক আদেশে ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের নামে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেয়া হয়। এই ১৫ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন সুখরঞ্জন বালী (৫৭
। পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার উমেদপুর গ্রামের সুখরঞ্জন বালী (৫৭
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হাতে নিহত বিশা বালীর ছোট ভাই। অভিযোগে জানা যায়, সুখরঞ্জন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখালে তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সম্প্রতি তিনি সত্য ঘটনা ট্রাইব্যুনালে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এতে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিজ থেকে সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি প্রদানের জন্য আবেদন করেন। গতকাল সেই আবেদন শুনানির জন্য ধার্য ছিল। এর আগেই ট্রাইব্যুনাল গেট থেকে তিনি অপহরণের শিকার হন।
ধার্য তারিখ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু সাঈদীর আইনজীবীরা তাদের পক্ষে বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বলে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে অভিযোগ করেন।
সাক্ষীকে যেভাবে ধরে নেয়া হয় : আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সোয়া দশটার দিকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের পাশে মাজার সংলগ্ন গেটে আসার পর দায়িত্বরত পুলিশ গাড়িটি থামানোর সংকেত দেয়। গাড়িটি থামলে পুলিশ সব আইনজীবীকে নামতে বলেন। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, হাসান আল বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তখন তাদের হেঁটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলা হয়। এরপর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলেন পুলিশ। সাক্ষী নেমে আসার পর শুধু মিজানুল ইসলামকে গাড়ি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। এজন্য হাঁটতে পারেন না।
গাড়ি থেকে নেমে আইনজীবীদের সঙ্গে সুখরঞ্জন বালী দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় চারজন ডিবি পুলিশের সদস্য সাক্ষীকে দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। উপস্থিত আইনজীবীরা বাধা দিতে চাইলে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। সুখরঞ্জন বালীকে মাজার গেট দিয়ে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায় ডিবি। এ সময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে পুলিশের পিকআপ ভ্যান তাদের কাছে আসে। তখন সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, তাকে গাড়িতে উঠানোর সময় মারধর করা হয়।
সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখবো। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষীকে এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচার কাজে অংশ নিতে পারি না। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক। তখন সিনিয়র আইনজীবী বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ সিনিয়র আইনজীবীরাও সাঈদীর মামলায় অংশ নিতে উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তিনি আপনার কোর্টে আসছিলেন। তাকে ধরে নেবে কেন? তিনি বলেন, আপনার কোর্টে আমরা ৩১ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করি। আজ আমরা সুখরঞ্জনকে নিয়ে আসার পথে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে এজলাসে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেন বাইরে কি হয়েছে। তখন রেজিস্ট্রার বলেন আজ আমরা গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে একটু কড়াকড়ি করেছি। পাস ছাড়া কাউকে ট্রাইব্যুনালের গেটে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি শুনে চেয়ারম্যান বলেন, মিস্টার রাজ্জাক আজ আমরা একটু কড়াকড়ি আরোপ করেছি নিরাপত্তার জন্য। জবাবে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি তল্লাশি করতে পারেন, কিন্তু গাড়ি আসতে না দেয়া, সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়া কেমন কড়াকড়ি। তিনি বলেন, আমাদের আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ট্রাইব্যুনালে আসতে হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, এটা ঠিক হয়নি। আবদুর রাজ্জাক বলেন, আপনারা লার্জার বেঞ্চ। পুলিশ তাকে কোথায় নিয়ে গেছে তা দেখার এখতিয়ার আপনাদের আছে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে বলছেন এরেস্ট করে নিয়ে গেছে। এ সময় আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন—না, মাইলর্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এবং থাপ্পড় মেরেছে। তিনি বলেন, আমরা তো পাস ছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করি না। আগে তো ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে, তারপরে পাস নিতে হবে। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমি আপনার সঙ্গে একমত। মিজানুল ইসলাম বলেন, আজ যদি কড়াকড়ি হয়ে থাকে তাহলে গতকাল রেজিস্ট্রার বলতে পারতেন ট্রাইবু্যুনালের গেটে পাস লাগবে।
একপর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, এবং তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খানকে অপহরণের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালকে জানান, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সঙ্গে সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী তীব্র প্রতিবাদ জানান। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের কয়েকজন আইনজীবীর সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। যার গাড়ি থেকে নামিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা উপস্থাপন করলেন, আর সেটাও মিথ্যা হয়ে গেল? গাড়ি থেকে নামিয়ে ডিবি পুলিশ সুখরঞ্জন বালীকে ধরে নেয়ার সময় আইনজীবীদের মোবাইলে ওঠানো ছবি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। এতে ট্রাইব্যুনাল বলে, ঠিক আছে আমরা বিষয়টি দেখে দুটোয় জানাব। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, মাই লর্ড আমার দুই মিনিট কথা শুনতে হবে। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শুনেছি এখন আর কিছু শুনব না, বাকিটা দুটোয় শুনব। তাজুল ইসলামের বক্তব্য না শুনে ট্রাইব্যুনাল এজলাস থেকে উঠে গেলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ঘোষণা দেন। বিরতির পর আর তারা ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর মামলার কার্যক্রমে অংশ নেননি।
এরপর ডিফেন্সপক্ষে আসা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি উপস্থিত থাকা অবস্থায় ডিফেন্সের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের গাড়িতে করে একজন সাক্ষীকে নিয়ে আসার সময় সাদা পোশাকধারী পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, যাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার জীবন নিয়ে আমরা সঙ্কিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন শুধু রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার আশঙ্কা আছে বলা যাবে না। এ ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে একমাত্র নিরাপদ স্থান আদালতেও আর নিরাপদ নেই।
খন্দকার মাহবুব বলেন, আশা করব সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। তা নাহলে দেশে একটা ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, একজন আইনজীবীর গাড়ি থেকে লোক নামিয়ে ধরে নিয়ে যাবে অথচ তার বিচার হবে না তাহলে সে কোর্টে এসে তো ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা একেবারেই থাকে না। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সাক্ষী না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোর্টে আসব না।
দুপুর দুটোয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ফের শুরু হলে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী আসেননি। আসামিপক্ষের আইনজীবীর অনুপস্থিতেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তখন মাওলানা সাঈদীকে এজলাসে আনা হয়। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সরকারপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। এ সময় মাওলানা সাঈদী ডকে দাঁড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সকালে আমার পিটিশন শুনানি চলছিল, তখন আমাকে কোর্ট রুমে আনা হলো না। আর আমাকে এখন যখন আনা হলো, তখন দেখছি কোর্টে আমার আইনজীবীরা উপস্থিত নেই। পিটিশন শুনানিকালে আমাকে কেন আনা হলো না? আমার আইনজীবীরা কোর্টে নেই কেন? আপনি আমাকে কথা বলতে দিচ্ছেন না, আমার আইনজীবীদেরও কথা বলতে দেবেন না, তাহলে আমাকে কষ্ট দিয়ে আদালতে হাজির করিয়ে লাভ কী?
চেয়ারম্যান : আমাদের করণীয় কিছু নেই। আপনি আপনার আইনজীবীদের জিজ্ঞেস করেন তারা নেই কেন?
সাঈদী : তাহলে আমার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে আপনি আর্গুমেন্ট চালাতে পারেন না। আপনি সময় দিন, আমার আইনজীবীদের আসার সুযোগ দিন
চেয়ারম্যান : আমাদের করার কিছু নেই।
সাঈদী : তাহলে আমাকে কথা বলতে দিন। আপনি বলেছিলেন, আমাকে কথা বলতে দেবেন।
চেয়ারম্যান : প্রসিকিউশনের আর্গুমেন্ট শেষ হলে আপনি আপনার আইনজীবীদের মাধ্যমে কথা বলবেন, আপনার আইনজীবীরা কথা বলবেন।
সাঈদী : আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, চার্জ ফ্রেমিংয়ের দিনে যখন আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইউ গিল্টি অর নট গিল্টি, আমি তখন ৫-৭ মিনিট কথা বলেছিলাম। তখন আপনি বলেছিলেন, সাঈদী সাহেব আপনাকে সময় দেয়া হবে। আপনার যখন সময় আসবে তখন আপনি নিশ্চয়ই কথা বলবেন, আপনাকে যথেষ্ট সময় দেয়া হবে, নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। এখন কেন কথা বলতে দেবেন না? আপনি তো আর্গুমেন্ট শুরু করে দিয়েছেন! তাহলে কথা বলতে দেবেন কখন?
চেয়ারম্যান : আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
সাঈদী : আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ৪০ বছরের আগের মিথ্যা সব অপবাদ দিয়ে বিচার শুরু করা হয়েছে। আমাকে আমার কথা বলা থেকে আপনি বঞ্চিত করতে পারেন না। আর্গুমেন্ট শুরু হয়ে গেলে তো আমার আর কথা বলার সুযোগ থাকবে না। পৃথিবীর সব আইনে অভিযুক্তের কথা বলার অধিকার স্বীকৃত। আপনি এই আদালতে বলেছিলেন কেউ আপনার বন্ধু নয়, আবার কেউ আপনার শত্রুও নয়, আপনার এটা প্রমাণের সময় এসেছে। আমার বিরুদ্ধে শতাব্দীর নিকৃষ্ট সব মিথ্যাচার করা হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে কথা বলতে দিচ্ছেন না, আমার হক নষ্ট করলে দুনিয়া ও আখিরাতে আপনি দায়ী হবেন। আপনি আপনার নিজের বিবেকের কাছেও দায়ী থাকবেন।
আমার বিরুদ্ধে যখন সাক্ষী দেয়া হয়েছে, আপনি দিনের পর দিন হাসিমুখে তা শুনেছেন, কিন্তু নিকৃষ্ট সব মিথ্যাচার ও অভিযোগের ব্যাপারে আমি যখন কথা বলতে চাইছি, তখন আমাকে কথা বলতে দিচ্ছেন না। যদি আপনি এমনটাই করেন, তাহলে আমাকে এখানে কষ্ট দিয়ে বসিয়ে না রেখে কারাগারে পাঠিয়ে দিন এবং আপনি ও প্রসিকিউশন মিলে যা খুশি ইচ্ছা করুন বা রায় দিন। আপনাদের এখানের একজন তো তার নিজের বিবেকের তাড়নায় এখান থেকে বেরিয়ে গেছেন।
চেয়ারম্যান : তাই নাকি?
সাঈদী : আমাকে কথা বলতে দিন। প্রসিকিউশনে মিথ্যাচারের জবাব দিতে দিন। না দিলে আপনার বিবেকের কাছে আপনি দায়ী হবেন। আর এটা প্রমাণ হবে, আপনি অদৃশ্য কোনো হাতের লেখা রায় দিতে চান। চারদিকে শোনা যায়, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলে বেড়াচ্ছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ২-৩টি মামলার রায় দেয়া হবে, বিচার শেষ করা হবে। আপনার পাশে যিনি বসে আছেন, নতুন এসেছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তার নাম সম্ভবত, তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে মন্ত্রীরা, প্রসিকিউশনের লোকেরা এভাবে দিনক্ষণ ঠিক করতে পারেন না, এভাবে কথা বলা ঠিক নয়, কিন্তু আমাকে কথা বলতে না দিয়ে আপনার তাড়াহুড়ো দেখে মনে হচ্ছে, আপনি পূর্বনির্ধারিত কোনো রায় শোনানোর জন্য আর অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন না।
চেয়ারম্যান : সাঈদী সাহেব, আপনি এভাবে কথাটা বললেন, এভাবে না বললেও ভালো হতো। যাহোক, আমাদের আইনে অভিযুক্তের বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
সাঈদী : আমার ব্যাপারে পাহাড়সম মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার বড় ছেলে প্রসিকিউশনের মিথ্যাচার শুনতে শুনতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। ৮ মাস আগে আমার মা আমার ওপর করা জুলুম সহ্য করতে না পেরে ইন্তেকাল করেছেন। আমি মজলুম। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমার ওপর জুলুম করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগের প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি দাড়ি, কমা মিথ্যা, সর্বৈব মিথ্যা।
চেয়ারম্যান : সাঈদী সাহেব আমাদের রায়ে সত্যটাই থাকবে।
সাঈদী : আমি আমার মালিকের কাছে সেই দোয়াই করছি।
এদিকে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে উপস্থাপন করা দুটি আবেদনসহ অন্য আসামিদের মোট ১৪টি আবেদন গতকাল শুনানির জন্য ধার্য ছিল। আদালত এর মধ্যে ১৩টি খারিজ করে দিয়েছে। গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমির সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়টি মঞ্জুর করা হয়।
আইনজীবী তাজুল ইসলামের বিবৃতি : আইনজীবী তাজুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে জানান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এক আবেদনে সুখরঞ্জন বালীসহ আরও তিনজন সাক্ষীকে আদালতে স্বাক্ষ্যপ্রদানের অনুমতির অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদন দাখিল করলে, সেই আবেদন সাক্ষীদের উপস্থিতিতে শুনানির কথা ছিল। সেই উদ্দেশে সুখরঞ্জন বালীকে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম তার গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালের গেটে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সুখরঞ্জন বালীকে জোরপূর্বক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই সাদা পোশাকধারী আর একদল পুলিশ তাকে জোরপূর্বক ধরে ‘পুলিশ’ লেখা একটা গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তাকে থাপ্পড় মারা হয়, এমতাবস্থায় তাত্ক্ষণিকভাবে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামসহ সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এবং অন্য আইনজীবী বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করেন।
পুরাতন হাইকোর্টে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চতুর্দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান নেয়। অন্যদিনের তুলনায় গতকাল ট্রাইব্যুনালে চারপাশে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। ট্রাইব্যুনালে বাড়তি সতর্ক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাছির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রতিদিনই নিরাপত্তা থাকে তবে আজকে একটু বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজ একটি মামলার আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক
উপস্থাপন শুরু হবে। এজন্য নিরাপত্তা কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দিন থেকে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।
রমনা জোনের ডিসি নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন, এরই মধ্যে জামায়াত তাদের নেতাদের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এজন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সোর্সদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে কোনো সময় তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। এ কারণেই ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের চারপাশে নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলা হয়েছে।
???????????? ??? ???? ?????? ?????? ????? ??? ???? : ???????? ?????? ?? ???? ??? ?????, ?????? ????? ??? - ?????