Banglar Bir
SENIOR MEMBER
- Joined
- Mar 19, 2006
- Messages
- 7,805
- Reaction score
- -3
- Country
- Location
সরকার ভাবছে বিকল্প নিয়েও!
19 Aug, 2017
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সংসদ, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে তার সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে এবং পর্যবেক্ষণের অনাকাঙ্খিত বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না হলে তা আগামী দিনের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে তাও খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ ও সরকার।
তবে আগে যেহেতু কখনো পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে রিভিউ হয়নি এবং সাধারণত রিভিউতে আপিল বিভাগের রায়ে কোনো পরিবর্তন হয় না তাই প্রত্যাশিত রায় অর্থাৎ সরকারের দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণের 'আপত্তিকর' বক্তব্য প্রত্যাহার করা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান দলের আইনজীবী নেতারা।
দলটি মনে করছে, বিচার বিভাগের রায় দলিল হিসেবে রয়ে যায়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা রাজনীতিতে দলিল হয়ে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেজন্য যেসব বক্তব্য ক্ষতির কারণ হবে তা বিশ্লেষণ করে রিভিউ করা হবে এবং প্রত্যাহার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, কোন কোন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রিভিউ করা হবে তা পর্যালোচনা করছেন দলের আইনজীবী বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে দেশের খ্যাতনামা আইনজীবীদেরও পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষণের যেসব বক্তব্যকে সরকার 'অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রাসঙ্গিক' মনে করছে সেসব বক্তব্যের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং তার বিপক্ষে রিভিউ পিটিশনে কী কী তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে তা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কোন কোন পর্যবেক্ষণ অনাকাঙ্ক্ষিত তবে তা এক্সপাঞ্জ না হলেও ক্ষতি নেই। তারও বিশ্লেষণ হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব পর্যবেক্ষণে নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং সংসদ নিয়ে রায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়ে তা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে রিভিউতে। কারণ পর্যবেক্ষণে সংসদকে 'ইমম্যাচুউরড বা অপরিপক্ব' বলায় তা আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। নেতারা জানান, বিএনপি এমনিতেই বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে প্রচারণা চালায়। এরপর সংসদ নিয়ে বিচার বিভাগের এমন পর্যবেক্ষণ আগামী নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তাই এ বিষয়টি রিভিউতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে এবং এই পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য সব ধরনের যুক্তিতর্ক ও তথ্যপ্রমাণাদি উপস্থাপন করা হবে। আর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে যা বলা হয়েছে সে বিষয়ে দুই ধরনের মত আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের। এক পক্ষ বলছেন, ক্ষুদ্র পরিসরে দেখলে মনে হয় বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়, তাই এ নিয়ে রিভিউর দরকার নেই। আরেক পক্ষ বলছেন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে ও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সেজন্য রিভিউ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সূত্র জানায়, সাতজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে; এটি একক রায় নয়; তাই রিভিউ হলেও রায়ের পর্যবেক্ষণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে একাধিক আইনজীবী জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে। তবে প্রত্যাশিত রায় অর্জনের সম্ভাবনা কম। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে পারিপাশ্বর্িক চাপ সৃষ্টিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এছাড়া এই সময়ে বিএনপি যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে সে জন্য রাজপথে দলের শক্ত অবস্থান জরুরি। সেজন্য রায়ের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে জনমত তৈরি করা হচ্ছে। যাতে বিএনপি জনমনে আওয়ামী লীগ বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে। এছাড়া রিভিউতে যদি পর্যবেক্ষণের পরিবর্তন হয় তাহলে বিএনপি যাতে বলতে না পারে যে, গায়ের জোরে রায় পরিবর্তন হয়েছে এবং তা পুঁজি করে যেন রাজনীতি না করতে পারে সে কৌশলও নির্ধারণ করা হবে।
সূত্র জানায়, রায়ের ত্রিশ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। এ হিসেবে রিভিউ করার শেষ সময় ৩ সেপ্টেম্বর। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রিভিউ করার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে গ্রিন সিগনাল দেয়া হয়েছে। তবে কবে রিভিউ করা হবে এ বিষয়েও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
রিভিউ করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু যায়যায়দিনকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি।
তবে রিভিউ করলেও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রত্যাহার করার মতো কোনো বক্তব্য দেখছেন না সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামাল হোসেন আলোচিত এই মামলাটির আপিলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিয়া হিসেবে ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত রেখেছিলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের অংশটুকু এরই মধ্যে তিনবার পড়েছেন তিনি। এর মধ্যে একটি শব্দও এক্সপাঞ্জ করার মতো পাননি এবং এর মধ্যে এক্সপাঞ্জ করার মতো কিছু নেই।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করা হয়েছে। এ বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, 'উনি (প্রধান বিচারপতি) যেটা বলেছেন 'একক'। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী সেখানে এককের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী এই দেশটা কোনো এক ব্যক্তির কাছে থাকবে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুরই কথা।'
রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, 'কোনো জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, আমরা যদি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমিত্ববোধের ওই আত্মঘাতী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যে, কেবল একজন ব্যক্তি বা একজন মানুষই সব করেছে।'
এদিকে শাসক দলের একটি সূত্র জানায়, রায় নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না সরকার। সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করতে চায় তারা। তাই রায়ের বিষয়ে বিচার বিভাগকে সরকারের অবস্থান জানাতে ১২ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেয়ার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়েছিলাম। তার সাথে আমার দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ বা অবজারভেশন ছিল তা নিয়ে আমাদের পার্টির বক্তব্য জানিয়েছি। আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। আরও আলোচনা হবে। আলোচনা শেষ হয়নি। সময় হলে আপনারা সব কিছু জানতে পারবেন। আমিও বলব।'
একদিন পর ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওবায়দুল কাদের। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেদিন সকালে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।
এরপর ১৭ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সম্পর্কে সরকার ও দলীয় অবস্থান রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা সরকার ও দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
এদিকে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের বৈঠককে গায়ের জোরে রায় পাল্টানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপির। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমরা শুধু এইটুকুই বলতে চাই, অন্যায়ভাবে জোর করে, জবরদস্তি করে যে কাজ করানোর প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারছি, আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের যে হুমড়ি-তুমড়ি ও রাগে ক্ষোভে দুঃখে তাদের যে তৎপরতা আমরা দেখতে পারছি ক্রমাগতভাবে, এটা আর চলবে না। সেদিন শেষ হয়ে গেছে।'
তবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় পরিবর্তন করতে সরকার প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে- বিএনপির অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'কে কাকে চাপ দিয়ে কী করছে? এই গুজব কোথা থেকে আসছে? ওই পদের কাউকে চাপ দিয়ে কিছু করানো যাবে? এই কথা বলে তো তাদের ছোট করা হচ্ছে।' এছাড়া রায় নিয়ে সরকারে কোনো অস্থিরতা নেই বলেও জানান কাদের।
রিভিউয়ের জন্য তৈরি
হচ্ছে সরকার: মন্ত্রী
এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'রায়ের সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রায় ভালোভাবে পড়া হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রিভিউ আবেদন করা হবে।'
'রায়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা আছে। রিভিউয়ে সেগুলোও আসবে। সরকার তার জন্য তৈরি হচ্ছে। প্রকাশিত রায় এখন পাবলিক ডকুমেন্ট। যে ভাষায় বা যে প্রতিক্রিয়ায় আদালত অবমাননা না হয়, সেভাবেই রায়ের বিষয়ে সমালোচনা করা উচিত অথবা প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।'
এর আগে গত ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদসহ বেশ কিছু বিষয়ে 'অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক কথা' এসেছে জানিয়ে তা 'এক্সপাঞ্জ' করার উদ্যোগ নেয়া হবে বললেও তখন রিভিউয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি মন্ত্রী।
এবার রিভিউ আবেদনে সেইসব 'অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক কথা'র বিষয়ে আলোকপাত করা হবে বলে জানান আনিসুল হক।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
উৎসঃ যায়যায়দিন
http://www.mzamin.com/
19 Aug, 2017
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সংসদ, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে তার সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে এবং পর্যবেক্ষণের অনাকাঙ্খিত বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না হলে তা আগামী দিনের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে তাও খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ ও সরকার।
তবে আগে যেহেতু কখনো পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে রিভিউ হয়নি এবং সাধারণত রিভিউতে আপিল বিভাগের রায়ে কোনো পরিবর্তন হয় না তাই প্রত্যাশিত রায় অর্থাৎ সরকারের দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণের 'আপত্তিকর' বক্তব্য প্রত্যাহার করা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান দলের আইনজীবী নেতারা।
দলটি মনে করছে, বিচার বিভাগের রায় দলিল হিসেবে রয়ে যায়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা রাজনীতিতে দলিল হয়ে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেজন্য যেসব বক্তব্য ক্ষতির কারণ হবে তা বিশ্লেষণ করে রিভিউ করা হবে এবং প্রত্যাহার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, কোন কোন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রিভিউ করা হবে তা পর্যালোচনা করছেন দলের আইনজীবী বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে দেশের খ্যাতনামা আইনজীবীদেরও পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষণের যেসব বক্তব্যকে সরকার 'অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রাসঙ্গিক' মনে করছে সেসব বক্তব্যের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং তার বিপক্ষে রিভিউ পিটিশনে কী কী তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে তা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কোন কোন পর্যবেক্ষণ অনাকাঙ্ক্ষিত তবে তা এক্সপাঞ্জ না হলেও ক্ষতি নেই। তারও বিশ্লেষণ হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব পর্যবেক্ষণে নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং সংসদ নিয়ে রায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়ে তা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে রিভিউতে। কারণ পর্যবেক্ষণে সংসদকে 'ইমম্যাচুউরড বা অপরিপক্ব' বলায় তা আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। নেতারা জানান, বিএনপি এমনিতেই বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে প্রচারণা চালায়। এরপর সংসদ নিয়ে বিচার বিভাগের এমন পর্যবেক্ষণ আগামী নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তাই এ বিষয়টি রিভিউতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে এবং এই পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য সব ধরনের যুক্তিতর্ক ও তথ্যপ্রমাণাদি উপস্থাপন করা হবে। আর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে যা বলা হয়েছে সে বিষয়ে দুই ধরনের মত আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের। এক পক্ষ বলছেন, ক্ষুদ্র পরিসরে দেখলে মনে হয় বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়, তাই এ নিয়ে রিভিউর দরকার নেই। আরেক পক্ষ বলছেন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে ও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সেজন্য রিভিউ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সূত্র জানায়, সাতজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে; এটি একক রায় নয়; তাই রিভিউ হলেও রায়ের পর্যবেক্ষণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে একাধিক আইনজীবী জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে। তবে প্রত্যাশিত রায় অর্জনের সম্ভাবনা কম। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে পারিপাশ্বর্িক চাপ সৃষ্টিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এছাড়া এই সময়ে বিএনপি যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে সে জন্য রাজপথে দলের শক্ত অবস্থান জরুরি। সেজন্য রায়ের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে জনমত তৈরি করা হচ্ছে। যাতে বিএনপি জনমনে আওয়ামী লীগ বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে। এছাড়া রিভিউতে যদি পর্যবেক্ষণের পরিবর্তন হয় তাহলে বিএনপি যাতে বলতে না পারে যে, গায়ের জোরে রায় পরিবর্তন হয়েছে এবং তা পুঁজি করে যেন রাজনীতি না করতে পারে সে কৌশলও নির্ধারণ করা হবে।
সূত্র জানায়, রায়ের ত্রিশ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। এ হিসেবে রিভিউ করার শেষ সময় ৩ সেপ্টেম্বর। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রিভিউ করার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে গ্রিন সিগনাল দেয়া হয়েছে। তবে কবে রিভিউ করা হবে এ বিষয়েও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
রিভিউ করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু যায়যায়দিনকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি।
তবে রিভিউ করলেও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রত্যাহার করার মতো কোনো বক্তব্য দেখছেন না সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামাল হোসেন আলোচিত এই মামলাটির আপিলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিয়া হিসেবে ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত রেখেছিলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের অংশটুকু এরই মধ্যে তিনবার পড়েছেন তিনি। এর মধ্যে একটি শব্দও এক্সপাঞ্জ করার মতো পাননি এবং এর মধ্যে এক্সপাঞ্জ করার মতো কিছু নেই।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করা হয়েছে। এ বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, 'উনি (প্রধান বিচারপতি) যেটা বলেছেন 'একক'। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী সেখানে এককের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী এই দেশটা কোনো এক ব্যক্তির কাছে থাকবে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুরই কথা।'
রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, 'কোনো জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, আমরা যদি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমিত্ববোধের ওই আত্মঘাতী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যে, কেবল একজন ব্যক্তি বা একজন মানুষই সব করেছে।'
এদিকে শাসক দলের একটি সূত্র জানায়, রায় নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না সরকার। সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করতে চায় তারা। তাই রায়ের বিষয়ে বিচার বিভাগকে সরকারের অবস্থান জানাতে ১২ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেয়ার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়েছিলাম। তার সাথে আমার দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ বা অবজারভেশন ছিল তা নিয়ে আমাদের পার্টির বক্তব্য জানিয়েছি। আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। আরও আলোচনা হবে। আলোচনা শেষ হয়নি। সময় হলে আপনারা সব কিছু জানতে পারবেন। আমিও বলব।'
একদিন পর ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওবায়দুল কাদের। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেদিন সকালে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।
এরপর ১৭ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সম্পর্কে সরকার ও দলীয় অবস্থান রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা সরকার ও দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
এদিকে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের বৈঠককে গায়ের জোরে রায় পাল্টানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপির। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমরা শুধু এইটুকুই বলতে চাই, অন্যায়ভাবে জোর করে, জবরদস্তি করে যে কাজ করানোর প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারছি, আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের যে হুমড়ি-তুমড়ি ও রাগে ক্ষোভে দুঃখে তাদের যে তৎপরতা আমরা দেখতে পারছি ক্রমাগতভাবে, এটা আর চলবে না। সেদিন শেষ হয়ে গেছে।'
তবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় পরিবর্তন করতে সরকার প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে- বিএনপির অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'কে কাকে চাপ দিয়ে কী করছে? এই গুজব কোথা থেকে আসছে? ওই পদের কাউকে চাপ দিয়ে কিছু করানো যাবে? এই কথা বলে তো তাদের ছোট করা হচ্ছে।' এছাড়া রায় নিয়ে সরকারে কোনো অস্থিরতা নেই বলেও জানান কাদের।
রিভিউয়ের জন্য তৈরি
হচ্ছে সরকার: মন্ত্রী
এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'রায়ের সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রায় ভালোভাবে পড়া হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রিভিউ আবেদন করা হবে।'
'রায়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা আছে। রিভিউয়ে সেগুলোও আসবে। সরকার তার জন্য তৈরি হচ্ছে। প্রকাশিত রায় এখন পাবলিক ডকুমেন্ট। যে ভাষায় বা যে প্রতিক্রিয়ায় আদালত অবমাননা না হয়, সেভাবেই রায়ের বিষয়ে সমালোচনা করা উচিত অথবা প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।'
এর আগে গত ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদসহ বেশ কিছু বিষয়ে 'অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক কথা' এসেছে জানিয়ে তা 'এক্সপাঞ্জ' করার উদ্যোগ নেয়া হবে বললেও তখন রিভিউয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি মন্ত্রী।
এবার রিভিউ আবেদনে সেইসব 'অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক কথা'র বিষয়ে আলোকপাত করা হবে বলে জানান আনিসুল হক।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
উৎসঃ যায়যায়দিন
http://www.mzamin.com/