What's new

Who killed the greatest Bangladeshi film maker just after 1971 war?

So killing them is good?

So, when BNP comes to power, they should kill the intellectuals too?

When was the last time you did anything of value? Never. You should be killed too, according to your logic.

This has nothing to do with BNP or AL. I would say the same words for the likes of it in India or for that matter in Pakistan or even in the United States. Some folks tend to worship these idiots as the conscious of the society. Conscious my foot !
 
.
This has nothing to do with BNP or AL. I would say the same words for the likes of it in India or for that matter in Pakistan or even in the United States. Some folks tend to worship these idiots as the conscious of the society. Conscious my foot !
So, it is alright to kill them?
 
. .
বৃহস্পতিবার, ১৮ মাঘ ১৪২৫; ৩১ জানুয়ারী ২০১৯; সকাল ১১:১৭(ঢাকা সময়)







সংবাদ >> জাতীয়
জহির রায়হানের গুম : যেভাবে সফল হয় সুপরিকল্পিত কুচক্রান্ত


425227_1.jpg
30 Jan, 2019

জহির রায়হান বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা এক ‘সূর্যসন্তান’ যাকে আমরা হারিয়েছিলাম আজ, অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি। আজ থেকে ৪৭ বছর আগে। যে হারানোটা ছিল একটি স্বাধীন দেশে আমাদের জন্য এক বিশাল ধাক্কা এবং যা অপ্রত্যাশিত। জহির রায়হান’কে নিয়ে এর আগে গতবছর ১৯ শে আগস্ট আমি একটা নোট প্রকাশ করেছিলাম । আজ সবার জন্য সেই নোটটির সাথে কিছু তথ্য প্রমাণ যুক্ত করে নতুন ভাবে প্রকাশ করলাম।

বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা প্রতিভা কিংবদন্তি পরিচালক জহির রায়হানের আজ তম অন্তর্ধান দিবস। আমার কাছে জহির রায়হান হলেন সত্য ও সাহসিকতার চেতনা। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় জহির রায়হান হলেন সেই বিরল হতভাগা যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতেন তাঁর চলচ্চিত্রে কিন্তু দেশ যখন সত্যি সত্যি স্বাধীন হলো তখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তি হয়ে গেলেন জহির রায়হান। অর্থাৎ জাতির সূর্য সন্তান জহির রায়হানকে দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে গুমের মতো একটি জঘন্য রাজনৈতিক চক্রান্তের শুরু হয়।

শুরুতেই জহির রায়হান সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলি— জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে জহির রায়হান দু’বার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দু’জনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

শুরুতে জহির রায়হান সম্পর্কে একটু জেনে নিই — জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারি হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি ‘যে নদী মরুপথে’তেও সহকারি হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে ‘এ দেশ তোমার আমার’এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি রূপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ মুক্তি দেন। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’তে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। (সুত্র : উইকিপিডিয়া)

এবার আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জহির রায়হানের নির্মিত কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ সম্পর্কে ও ছবিটি নির্মাণের পেছনের কিছু তথ্য দিচ্ছি— ১৯৭০ সালে নির্মিত ও মুক্তিপ্রাপ্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা চলচ্চিত্রে যে ছবিটি পুরো পাকিস্তান কাঁপিয়ে দিয়েছিল তার নাম ‘জীবন থেকে নেয়া’ । ছবিটির পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অগ্নিপুরুষ জহির রায়হান । ‘জীবন থেকে নেয়া’ শুধুই একটি পারিবারিক ড্রামা নির্ভর একটি সাধারণ ব্যবসাসফল বাণিজ্যিক ছবি নয়। ‘জীবন থেকে নেয়া’ হলো একটি পরাধীন দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া একটি ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল। ‘জীবন থেকে নেয়া’ হলো একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে নিষ্পেষিত জনতার জেগে উঠার প্রতিচ্ছবি। ‘জীবন থেকে নেয়া’ হলো একটি দেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের পটভূমির জলজ্যান্ত চিত্র। তাইতো সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা বাংলা ছবির একটি জহির রায়হান এর ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি। আমি ছবিটি সম্পর্কে আজ কোন আলোচনা করবো না। কারণ এই ছবি দেখে বহুজন বহুবার তাঁদের বিশ্লেষণ ও ভালো লাগা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজ আমি ছবিটি তৈরি করার পেছনের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করবো। কারণ সবাইকে জানতে হবে কি কারণে ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি তৈরি করেছিলেন জহির রায়হান এবং কিভাবে তা হয়ে যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যে কজন তরুণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যে ১০ জন ব্যক্তি কারাবরণ করেছিলেন জহির রায়হান সেই ১০ জনের একজন ছিলেন। সেই সময়ে জহির রায়হান তার ভাষা আন্দোলনের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘পোস্টার’ নামে একটি গল্প ও ‘আরেক ফাগুন’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। জহির রায়হানের ইচ্ছা ছিল ৫২’র ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি ছবির তৈরি করার। সেই ছবিটি তৈরি করার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন সরকার ছবিটি তৈরি করতে অনুমতি না দেয়ায় তা আর তৈরি করতে পারেননি। তবুও তিনি দমে যাননি। মনে মনে ঠিকই পরিকল্পনা করেন রূপক অর্থে হলেও তিনি বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম আর শোষকের হিংস্ররূড সিনেমায় তুলে ধরবেনই। রাজনৈতিক মতাদর্শে জহির রায়হান ছিলেন একজন প্রগতিশীল ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী। বাংলা চলচ্চিত্রের সুচনার পর থেকেই জহির তার স্বপ্ন, আদর্শ ফুটিয়ে তোলার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণে জড়িয়ে পড়েন । একে একে তৈরি করেন কাঁচের দেয়াল, সংগম, বাহানা, আনোয়ারা, টাকা আনা পাই ছবিগুলো। উল্লেখ্য যে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছায়াছবি ‘সঙ্গম’ উর্দুতে নির্মাণ করেছিলেন জহির রায়হান। সেটাই ছিল পূর্ব–পশ্চিম দুই পাকিস্তানেরই প্রথম রঙিন ছায়াছবি। ১৯৬৯–৭০ পর্যন্ত জহির প্রস্তুতি নেন তার বহু আকাঙ্ক্ষিত ছবিটি নির্মাণ করার। এবার জহির সরাসরি শাসকগোষ্ঠীকে আঘাত না করে পারিবারিক গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি শাসকের অত্যাচার আর সাধারণ জনতার জেগে উঠার চিত্র তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭০ সালের মধ্য জানুয়ারিতে জহির রায়হান তার বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত ছবিটি নির্মাণ শুরু করেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। এই সময়টাকেই জহির রায়হান বেছে নেন ছবিটির কাজ শুরু করার। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন যে জহির তার লিখা কাহিনী নিয়ে শুধু ছবিটি প্রযোজনা করবেন আর পরিচালনা করবেন নুরুল হক বাচ্চু। ছবিটির নাম রাখা হয় ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ’, কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরেই ছবির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’ আর জহির শুধু প্রযোজক নয় পরিচালনাও করবেন। গল্পের বিভিন্ন চরিত্র ছিল তখনকার সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনার এক একটি রূপক চরিত্র যেখানে আনোয়ার হোসেন সেই সময়ের জনপ্রিয় কোন রাজনৈতিক নেতার প্রতিনিধিত্বকারী, রাজ্জাকের ছাত্রনেতা ফারুক চরিত্রটি প্রতিবাদী ছাত্রনেতার প্রতিনিধি, মহুরি খান আতাউর রহমান স্বাধীন চেতনার পরিচায়ক, উগ্রচণ্ডী-দজ্জাল রওশন জামিল একনায়কতন্ত্র স্বৈরশাসক আইয়ুব বা ইয়াহিয়ার রূপক চরিত্র। সেই সময়ের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার দৃ্শ্যটি সরাসরি ২১’র প্রভাতফেরিতেই চিত্রায়ণ করা হয় যেখানে সারিবেঁধে খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া সবই ছিল বাস্তব’র সেই ১৯৭০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে নেয়া। ছবির কাহিনীটি সাজানো হয় উগ্রচণ্ডী দজ্জাল বড় বোন রওশন জামিলের নির্যাতনে স্বামী খান আতাউর রহমান নিষ্পেষিত, দুই ভাই শওকত আকবর ও রাজ্জাক, দুই ভাইয়ের দুই বধু রোজী ও সুচন্দা এবং বাড়ির চাকর-বাকর ও রোজী–সুচন্দার বড় ভাই জনপ্রিয় দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে।

পুরো বাড়িতে দজ্জাল বড় বোন রওশন জামিলের একচ্ছত্র আধিপত্য চলতে থাকা অবস্থায় দুই ভাই বিয়ে করে নব বধুদের সংসারে প্রবেশ এবং পরবর্তীতে সংসারের চাবির গোছা নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখার কূটকৌশল চরমে পৌঁছে যা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ইয়াহিয়া বা আইয়ুব খানের শোষণ ও ক্ষমতায় থাকার কূট কৌশলের রূপক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন জহির রায়হান। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন ও রাজ্জাকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম জেল জুলুমের বাস্তবচিত্র ছিল ছবিটিতে। আনোয়ার হোসেন ও রাজ্জাকের জেলের ভেতর থাকা অবস্থায় নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি ব্যবহার করে মূলত আন্দোলনে থাকা বাঙালিদের উৎসাহ যোগান দেয়ার চিত্র। নবজাতক এর নাম ‘মুক্তি’ রূপক অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশ’র জন্ম ও শোষকের হাত থেকে মুক্তির বহিঃপ্রকাশ। ছাত্রনেতা ইকবালের গ্রেফতার হয়ে কারাগারে প্রবেশের সময় উচ্চারিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী’ ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উৎসাহের তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত যার সবই ছিল জহির রায়হান’র দূরদর্শী সৃষ্টি। এভাবেই জহির রায়হান ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমে ফ্রেমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। যার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ছবিতে জহির রায়হানের ব্যবহৃত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাটি স্বাধীন বাংলাদেশের ‘স্মৃতিসৌধ’ স্থান পেয়ে বাঙালির চির প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি যে স্বাধীন বাংলাদেশের ইঙ্গিত বহন করছে তা বিগ্রেডিয়ার রাও ফরমান আলী, মেজর মালেক ও তাদের এদেশীয় দোসররা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তারা ছবিটিকে সেন্সর ছাড়পত্র না দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু দেশপ্রেমিক সচেতন দর্শকদের মিছিল, স্লোগান ও দাবির মুখে সামরিক সরকার বাধ্য হয়েছিল এ ছবির ছাড়পত্র দিতে। নির্ধারিত তারিখের এক দিন পর অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল। শেষ পর্যন্ত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি মুক্তি দেন জহির রায়হান । ছবিটি মুক্তি দেয়ার ফলে ষড়যন্ত্রকারীরা হয়েছিল পরাজিত আর জনতাই হয়েছিল জয়ী। জীবন থেকে নেয়ার মাধ্যমে এভাবেই তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় আর বাংলা চলচ্চিত্র পেয়েছিল এক অসাধারন কালজয়ী ছবি।

JTN.jpg



জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রখ্যাত পরিচালক ও জহিরের সহকর্মী আমজাদ হোসেন বলেন “প্রথম দিনই নিষিদ্ধ হলো এর প্রদর্শনী। সব সিনেমা হল থেকে পাক আর্মি জব্দ করে নিয়ে গেল সিনেমার রিল। ঢাকার গুলিস্তান হলের সামনে শুরু হলো বিক্ষোভ। পরদিন সেন্সর বোর্ড আবার বসবে সিনেমাটি দেখতে। সাথে থাকবে রাও ফরমান নিজে। জহির অনেক ভেবে একজনের কথাই স্মরণে আনতে পারলেন, যিনি পারেন ছবিটিকে আবার আলোর মুখ দেখাতে। জহির আমজাদকে দায়িত্বটা দিলেন। কারণ আমজাদের এলাকার মানুষ তিনি। আমজাদ গেলেন সেন্সর বোর্ডের সদস্য নাট্যকার আসকার ইবনে সাইকের কাছে। ভদ্রলোক আবার নিয়মিত নামায রোজা করতেন। আমজাদ হোসেন তার হাটুর কাছে বসে পা টিপতে টিপতে বললেন, স্যার আপনার উপরে সবকিছু। আপনি প্লিজ কালকে যাবেন। উনি বললেন, আমি অসুস্থ। হাই প্রেসার তাই যেতে পারবো না। ফ্যান ছেড়ে হাত পা ছেড়ে বসে রইলেন। আমজাদ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললেন, স্যার সারাদেশ আপনার দিকে তাকিয়ে।

পরদিন সাইক সাহেব গেলেন সেন্সর বোর্ডে। বোর্ডে উপস্থিত অল পাকিস্তান সেন্সর মেম্বার। মানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সকল সদস্য। আর আমজাদ প্রজেকশন রুমে চুরি করে অবস্থান নিয়ে প্রজেকশনের ছোট ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। ছবিটি শেষ হলো। রাও ফরমান সহ বাকি সদস্যরা ছবিটি দেখলেন। ছবি শেষ হলে পিন পতন নিস্তব্ধতা গোটা রুম জুড়ে। চেয়ারম্যান সাহেব সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কি মনে করে আসকার ইবনে সাইককে বললেন, আপনি বলেন। তিনি, কিছুণ চুপ থেকে তারপর দাঁড়ালেন। সবার মুখের দিকে একবার চেয়ে বললেন, ‘স্যার পবিত্র কোরআনে কোন মিথ্যে কথা বলা নেই। মিথ্যে কথা বলবার কোন সুযোগও সেখানে দেয়া হয়নি। জহির হয়ত ভুল করে একটা সত্য সিনেমা বানিয়ে ফেলেছে। এই সত্যকে আমি কিভাবে মিথ্যা বলি!’ কেউ আর কোন কথা বলল না। ছবিটি মুক্তি পেল। তবে প্রজেকশন শেষে রাও ফরমান জহিরকে বললেন, ‘ছবিটি ছেড়ে দিলাম। বাট আই উইল সি ইউ’। আর এই ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ছবিটি নিজেই হয়ে গেল এক জীবন্ত ইতিহাস। এটিই এদেশের প্রথম ছবি যা দেখার অধিকার আদায়ে এদেশের দর্শক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করেছে।’’

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জহির রায়হান আগরতলা হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। নিজেকে যুক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রচার কাজ সংগঠিত করার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন এবং পাকিস্থানের গণহত্যা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য ‘স্টপ জেনোসাইড’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যুদ্ধে শরণার্থী শিবিরে মানুষের দুর্দশার চিত্র, কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া বড় বড় নেতাদের আরাম আয়েশের চিত্র তুলতে গিয়ে জহির রায়হান মুজিব নগর সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন। সাধারণ মানুষদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার অমানুষিক পরিশ্রমের অনেক চিত্র তিনি জীবন বাজি রেখে ধারণ করেছিলেন । ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার সময় ও মুক্তির দেয়ার সময় কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতারা বারবার জহির রায়হানকে বাধাগ্রস্থ করেছিলেন যে সম্পর্কে জহিরের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবির বলেন, “তিনি (জহির রায়হান) যুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্যই ঢাকা ছেড়ে আগরতলা এবং পরে কলকাতা চলে যান। কলকাতায় তিনি প্রচার কাজ সংগঠিত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পতিত হন এবং তাঁকে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে হয়”।

rt.jpg



স্টপ জেনোসাইড’ মুক্তি দেয়ার প্রতিবাদে ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে কলকাতায় বসবাসরত আওয়ামী সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও ‘সন অব পাকিস্থান’ চলচ্চিত্রের পরিচালক ফজলুল হক [ চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর ও কেকা ফেরদৌসীর বাবা] অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে একটি চিঠি লিখেন যেখানে প্রামাণ্য চিত্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে/ বন্ধের ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। [সম্পূর্ণ চিঠিটা ছাপা আছে – বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র (৩য় খন্ড, পাতা ১২৭-১২৮), তথ্য মন্ত্রণালয়, গনপ্রজাতন্তী বাংলাদেশ সরকার। প্রথম প্রকাশ – নভেম্বর ১৯৮২।]

‘স্টপ জেনোসাইড’ ছবিটি নির্মাণের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে নানাভাবে বাঁধা দিয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে শুটিং করতে দেয়নি, এমন কি কোন কোন সেক্টরে তার গমন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।

… আওয়ামী লীগের নেতারা ছবি দেখে ছাড়পত্র না দেয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সেন্সর বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।” [তথ্যসূত্র : একুশে ফেব্রুয়ারী/ জহির রায়হান (ভূমিকা : শাহরিয়ার কবির) ॥ [ পল্লব পাবলিশার্স – আগস্ট, ১৯৯২ । পৃ: ১৩-১৬]

এবার সংক্ষেপে জহির রায়হানকে গুম করার কারণটা একটু বলছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর জহির রায়হান ঢাকায় ফিরে আসেন। ফিরে এসেই শুনলেন তার অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সার ১৪ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ। আদর্শস্থানীয় বড় ভাইকে হারিয়ে তিনি পাগলের মত তাকে খুঁজতে থাকেন। তার উদ্যোগে বেসরকারি বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনার প্রচুর প্রমাণাদি তিনি সংগ্রহ করেন এবং সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে, তার সংগৃহীত প্রমাণাদি প্রকাশ করলেই অনেকের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মাটিতে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন হোটেলে বিলাসবহুল ও আমোদ-ফুর্তিময় জীবনযাপন, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ আওয়ামী আদর্শে বিশ্বাসহীন বাঙালিদের নির্মূল করার ষড়যন্ত্র প্রভৃতির প্রামাণ্য দলিল জহির রায়হান কলকাতা থাকাকালে সংগ্রহ করেছিলেন। বড় ভাই শহীদুল্লা কায়সারের নিখোঁজ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলি তাকে বিচলিত করে। এসব ঘটনা তাঁর পূর্বেকার রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়।

এখানে উল্লেখ্য যে ২২শে ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর হাতে শহিদুল্লাহ কায়সারের অপহরণকারী হিসেবে চিহ্নিত রাজাকার এবিএম খালেক মুজমদার গ্রেফতার হয়েছিলেন যাকে শহিদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার উপস্থিত হয়ে নিজে শনাক্তও করেছিলেন। কিন্তু সেই খালেক মজুমদার সপ্তাহ খানেক পর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে। পরবর্তীতে দালাল আইনে গ্রেফতার হলেও শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমায় অন্য সকল যুদ্ধাপরাধীর মতো মুক্তি লাভ করে।

যাই হোক, ফিরে আসি জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ১৫ দিন পর ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃতি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ঘোষণা দেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনে নীলনকশা উদঘাটনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক গোপন ঘটনার নথিপত্র, প্রামাণ্য দলিল তার কাছে আছে, যা প্রকাশ করলে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই নেয়া অনেক নেতার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে পড়বে। আগামী ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এই প্রেসক্লাবে ফিল্ম শো প্রমাণ করে দেবে কার কি চরিত্র ছিল।

১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েকদিন পর ৩০ জানুয়ারি রোববার সকালে এক রফিক নামের অজ্ঞাত টেলিফোন আসে জহির রায়হানের কায়েতটুলির বাসায়। রফিক ছিলেন জহিরের পূর্ব পরিচিত যিনি ইউসিসে চাকরি করতেন । প্রথমে ফোন ধরেছিলেন জহির রায়হানের ছোট বোন ডাক্তার সুরাইয়া যার কাছে জহিরকে খোঁজা হচ্ছিল। সুরাইয়া জহির রায়হানকে ডেকে ফোন ধরিয়ে দেয় । টেলিফোনে জহিরকে বলা হয়েছিল, আপনার বড়দা মিরপুর বারো নম্বরে বন্দি আছেন। যদি বড়দাকে বাঁচাতে চান তাহলে এক্ষুণি মিরপুর চলে যান। একমাত্র আপনি গেলেই তাকে বাঁচাতে পারবেন। টেলিফোন পেয়ে জহির রায়হান দু’টো গাড়ি নিয়ে মিরপুরে রওনা দেন। তার সাথে ছিলেন ছোট ভাই মরহুম জাকারিয়া হাবিব, চাচাত ভাই শাহরিয়ার কবির, বাবুল (সুচন্দার ভাই), আব্দুল হক (পান্না কায়সারের ভাই), নিজাম ও পারভেজ। মিরপুর ২নং সেকশনে পৌঁছার পর সেখানে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে জহির রায়হানের টয়োটা গাড়ি (ঢাকা-ক-৯৭৭১)সহ থাকতে বলে অন্যদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। শাহরিয়ার কবির অন্যদের সাথে করে বাড়ি ফিরে আসেন । এভাবেই জহির চিরতরে হারিয়ে যায়। অথচ সেদিন বিকেলেই প্রেসক্লাবে তার কাছে থাকা অনেক দুর্লভ তথ্য প্রমাণ ফাঁস করার কথাছিল যা ফাঁস হলে অনেকের মুখোশ উম্মোচিত হয়ে যেতো যা আর কোনদিন করা হলো না ।

জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার মাস দেড়েক পর শহিদুল্লা কায়সার ও জহির রায়হানের বোন নাফিসা কবির, শহিদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, জহিরের ২য় স্ত্রী সুচন্দাসহ ১৯৭১ সালে নিহত বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের অনেকে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে গেলে শেখ মুজিবুর রহমান সবাইকে বাড়ির গেইটে অপেক্ষামান রাখেন । এক সময় শেখ মুজিবুর রহমান গেইটের সামনে এসে বিক্ষোভ ও দেখা করার কারণ জানতে চাইলে এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নাফিসা কবিরের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় —

মুজিব : অনেকে ত দালালী করে মরেছে।

নাফিসা কবির : বুদ্ধিজীবীরা কেউ দালালী করে মরেনি। দালালী যারা করেছে তারা এখনও বেঁচে আছে। সে দালালদের বিচারের দাবী জানাতে এসেছি।

[ শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদুল্লাহ কায়সারের বোন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ মুজিবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়কালে]

[ সূত্র – মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে / পান্না কায়সার [আগামী প্রকাশনী – ফেব্রুয়ারী, ১৯৯১ । পৃ: ১৬৮]

12592701_10208886659829915_750645018923442058_n-1-768x461.jpg



১৭ই মার্চ ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে বিক্ষুব্ধ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা। ছবি : রশিদ তালুকদার

জহির রায়হান নিখোঁজের প্রায় এক বছর পর (১৯৭৩ সালের ২২ শে জানুয়ারি) সাংবাদিক আহাম চৌধুরীর লিখা ‘জহির রায়হান হত্যা রহস্য আর কতদিন ধামাচাপা পড়ে থাকবে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, জহির রায়হান মিরপুর কলোনির অভ্যন্তরে যাননি। ক্যাম্প থেকেই তিনি নাকি নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন । কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই খবরও কারো অজানা নয় । সরকার নিখোঁজ জহির রায়হানকে খুঁজে বের করার কোন আন্তরিকতা দেখায়নি বরং জহির রায়হান নিখোঁজের রহস্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কতদিন থাকবে এই ধামাচাপা?

“জহির রায়হানকে যে কোন উপায়ে আটকাতে হবে । তাঁর তদন্ত কমিটি ভেঙে দিতে হবে নতুবা তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দাও ”— এই নির্দেশ খোদার গায়েবী আওয়াজের মতোই সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছিল। তাই জহির রায়হানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে চিরদিনের জন্য । মুজিবনগরে যে কজন রুই কাতলার সাথে জহির রায়হানের চিন্তাধারার সাথে বচসা হয়েছিল জহির হত্যাকাণ্ডে তারাও নাকি জড়িত রয়েছেন । জহির হত্যার পরিকল্পনা ১৫ দিন ধরে করা হয়েছিল । জহিরকে তিরিশে জানুয়ারি খাঁচায় পুরে একত্রিশ তারিখে অন্য একটি স্থানে সরিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তাকে তদন্ত কমিটি ভেঙে দেয়ার আহবান জানানো হয় । বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্তের চিন্তা না করে ভাতের চিন্তা করতে বলা হয় ।

জহির রায়হানের হত্যাকারী দল আরও একদিন তাঁকে চিন্তা করার সময়ও নাকি দিয়েছিলেন – আর সেদিনটি নাকি ছিল উনিশ’শ বাহাত্তর সালের দ্বিতীয় মাসের প্রথম দিন যথা সর্বনাশা ফেব্রুয়ারির সর্বনাশা মঙ্গলবার।”

জহির রায়হানের প্রথম স্ত্রী প্রয়াত অভিনেত্রী সুমিতা দেবী এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন “জহির রায়হান নিখোঁজ এই নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বেশ লেখালেখিও হলো। একদিন বড়দি অর্থাৎ জহিরের বড় বোন নাসিমা কবিরকে ডেকে নিয়ে শেখ মুজিব বললেন, জহিরের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে এ রকম চিৎকার করলে তুমিও নিখোঁজ হয়ে যাবে। পরে নাসিমা আর কিছু বলেনি। টেলিফোন করেছিল যে রফিক, তাকে নিয়ে যখন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হলো। তখন তাকে নাগরিকত্ব দিয়ে পুরো পরিবারসহ আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। এই ঘটনা জহিরের নিখোঁজ হওয়ার সম্পর্কে রফিকের ভূমিকাকে আরো সন্দেহযুক্ত করে তোলে আমার কাছে।’” (সূত্র : দৈনিক আজকের কাগজ, ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৩)

দৈনিক আজকের কাগজ ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সংখ্যা ‘জহির রায়হানের হত্যাকারী রফিক এখন কোথায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘রাহুর কবলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি’ গ্রন্থে সরকার সাহাবুদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘আজকের কাগজের ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সংখ্যায় জহির রায়হানের হত্যাকারী রফিক এখন কোথায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির রায়হান নিখোঁজ এই নিয়ে লেখালেখি হলে একদিন বড়দি অর্থাৎ জহির রায়হানের বড় বোন নাফিসা কবিরকে ডেকে নিয়ে শেখ মুজিব বললেন, জহিরের নিখোঁজ নিয়ে এ রকম চিৎকার করলে তুমিও নিখোঁজ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, জহির রায়হানের মতো একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বাধীনতার পর নিখোঁজ হয়েছে এটা নিয়ে চিৎকার হওয়াটাই স্বাভাবিক। জহির রায়হান তার বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে মিরপুরে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন। সম্ভব তাকে হত্যা করা হয়েছিল। সুতরাং তার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে তার আত্মীয়-স্বজন সোচ্চার হতেই পারেন। কিন্তু শেখ মুজিব কেন জহির রায়হানের বড় বোনকে ডেকে নিয়ে নিখোঁজ করে ফেলার হুমকি দিলেন। কি রহস্য ছিল এর পেছনে? তাহলে কি বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে শেখ মুজিব এমন কিছু জানতেন, যা প্রকাশ পেলে তার নিজের কিংবা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হতো? আর কেনইবা তড়িঘড়ি করে জহির রায়হানের তথাকথিত হত্যাকারী রফিককে সপরিবারে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়া হলো? রফিক কে ছিলেন/ কি তার রাজনৈতিক পরিচয়? (সূত্র : সরকার সাহাবুদ্দিন আহমদ, রাহুর কবলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১০৮)

৯ আগস্ট ১৯৯৯ দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জহির রায়হানের মেজো সন্তান অনল রায়হানের অভিযোগ। তিনি অভিযোগ করেন, “জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার এক ভুয়া তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। এই কমিটি কোনো কাজ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের প্যানপ্যানানি করে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলো …মুজিব হত্যার বিচার হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৯৭৫ সালে। এর আগে জহির রায়হানসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। কই তাদের তো বিচার হলো না।”

১৯৯২ সালের ১লা মে তারিখে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন শাহরিয়ার কবির। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সত্যজিৎ রায় শাহরিয়ার কবিরকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন,

-জহিরের ব্যাপারটা কিছু জেনেছো?

-তাকে সরিয়ে ফেলার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করে যা বুঝতে পেরেছি তাতে বলা যায়, ৩০ জানুয়ারি দুর্ঘটনায় তিনি হয়তো মারা যাননি। তারপরও দীর্ঘদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

-স্ট্রেঞ্জ! জহিরকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনে কারণ কি?

-সেটাই ষড়যন্ত্রের মূল সূত্র বলে ধরছি। মিরপুরে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে গভীর ষড়যন্ত্র মনে করার কোনো কারণ ছিল না। আমি যতদূর জানি, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যা অনেক রথী-মহারথীদের জন্যই বিপজ্জনক ছিল, সে জন্য তাকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল।

শুধু তাই নয় শাহরিয়ার কবির আরেকটি গ্রন্থে জহির রায়হানের অন্তর্ধান সম্পর্কে বলেছিলেন – ‘৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর শহিদুল্লাহ কায়সারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে জহির রায়হান একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন।

… বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে হানাদার বাহিনীর সহযোগী বহু চাই ব্যক্তির নাম সংগ্রহ করলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য তিনি আওয়ামী নেতৃত্বকেও দায়ী করেন। মুজিবনগর সরকারের সকল গোপন তথ্য ফাঁস করে দেবেন বলেও ঘোষণা করেন।

… তাঁর উপস্থিতি যাদের জন্য অস্বস্তিকর তারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেবে এটা খুব স্বাভাবিক। ৭২ এর ৩০শে জানুয়ারি মিরপুরে তাঁর অগ্রজকে (শহিদুল্লাহ কায়সার) খুঁজতে গিয়েছিলেন। তদন্ত করলে হয়ত জানা যেতো সেই অজ্ঞাত টেলিফোন কোত্থেকে এসেছিল, যেখানে তাঁকে বলা হয়েছিল শহিদুল্লাহ কায়সার মিরপুরে আছেন।

… এটাও বিস্ময় যে তাঁর (জহির রায়হানের) অন্তর্ধান নিয়ে কোন তদন্ত হয় নি। কেন হয় নি অনুমান করতে অসুবিধে হয় না।” – শাহরিয়ার কবির

[তথ্যসূত্র : একুশে ফেব্রুয়ারী / জহির রায়হান (ভূমিকা : শাহরিয়ার কবির) ॥ [ পল্লব পাবলিশার্স – আগস্ট, ১৯৯২ । পৃ: ১৩-১৬]

জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে প্রখ্যাত সাংবাদিক নির্মল সেন উল্লেখ করেন, “স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও একটি প্রশ্নের জবাব আমি পাইনি। প্রশ্নটি হচ্ছে, জহির রায়হানের ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের নিস্পৃহ আচরণ। একটি মানুষ যে এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। কেউ যেন তার খোঁজ রাখল না। আমরা ঘাতক দালাল নির্মূলের কথা বলি, গণআদালত করে গোলাম আযমের ফাঁসি দাবি করি। অথচ জহির রায়হানের নামটি চলচ্চিত্র জগৎ ছাড়া আর কোথাও উচ্চারিত হয় না। কেন হয় না, সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো কেউ এদেশে নেই।

12642663_10208886601988469_4800691133267421832_n-768x538.jpg



শহীদুল্লা কায়সারের অপহরণকারী এবিএম খালেক মজুমদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মুজিব বাহিনী। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সাম্প্রতিককালে জহির রায়হান নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে নতুন তথ্য শোনা গেছে। বলা হয়েছে— পাকিস্তানি হানাদার বা অবাঙালিরা নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশই জহির রায়হানকে খুন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অংশটির লক্ষ্য ছিল— বাংলাদেশকে স্বাধীন করা এবং সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীসহ সামগ্রিকভাবে বামপন্থী শক্তিকে নিঃশেষ করে দেয়া। এরা নাকি বামপন্থী বুদ্ধিজীবিদের হত্যার একটা তালিকা প্রণয়ন করেছিল। এদের ধারণা এ তালিকাটি জহির রায়হানের হাতে পড়েছিল। জহির রায়হানও জানত তার জীবন নিরাপদ নয়। তবুও সে ছিল ভাইয়ের শোকে মূহ্যমান। তাই শহীদুল্লা কায়সারের নাম শুনেই সে ছুটে গিয়েছিল মিরপুরে তারপর আর ফিরে আসেনি। এ মহলই তাকে ডেকে নিয়ে খুন করেছে।

তাহলে কোনটি সত্য? জহির রায়হানকে কারা গুম করেছে? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা, আল বদর, আল শামস্, না রাজাকার? নাকি মুক্তিবাহিনীর একটি অংশ? স্পষ্ট করে বললে বলা যায় – মুক্তিবাহিনীর এ অংশটি মুজিব বাহিনী।

১৯৭১ সালে প্রবাসী স্বাধীন বাংলা সরকারের অজান্তে গড়ে ওঠা মুজিব বাহিনী সম্পর্কে অনেক পরস্পরবিরোধী তথ্য আছে। বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলা হয়েছে, এ বাহিনী গড়ে উঠেছিল ভারতের সামরিক বাহিনীর জেনারেল ওবান-এর নেতৃত্বে। এ বাহিনী নাকি মিজোরামে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিজোদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। এদের নাকি দায়িত্ব ছিল— রাজাকার, শান্তি কমিটিসহ বাংলাদেশের সকল বামপন্থীদের নিঃশেষ করে ফেলা। মুজিব বাহিনী সম্পর্কে এ কথাগুলো বারবার লেখা হচ্ছে। কোন মহল থেকেই এ বক্তব্যের প্রতিবাদ আসেনি। অথচ দেশে মুজিব বাহিনীর অনেক নেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আছেন। তারা কোন ব্যাপারেই উচ্চবাচ্চ্য করছেন না। তাদের নীরবতা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বক্তব্যই প্রতিষ্ঠিত করছে এবং সর্বশেষ জহির রায়হানের নিখোঁজ হবার ব্যাপারেও মুজিব বাহিনীকেই দায়ী করা হচ্ছে।”

– নির্মল সেন / আমার জবানবন্দি [ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি, ২০১২ । পৃ: ৪০৫-৪০৬]

জহির রায়হানের সন্তান অনল রায়হান ১৯৯৯ সালে ‘সাপ্তাহিক ২০০০’ ম্যাগাজিনে ‘পিতার অস্থির সন্ধানে পুত্র’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন – “৪ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ এ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ‘জহির রায়হানের খোঁজ চলছে … রহস্যজনক ফোন আসছে’ শিরোনামে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে “বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নিখোঁজ জহির রায়হানের অনুসন্ধানের জন্য মিরপুরে ব্যাপক তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে । ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ, মিত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরা আলাদাভাবে দুটো বৈঠকে মিলিত হন। … অথচ এরমধ্যেও আসছে টেলিফোনে অজ্ঞাত পরিচয়ে নানা মহলের হুমকি”।

এসব পুরনো খবরের পাতা উল্টাতে উল্টাতে মনে হবে এক জীবন্ত মানুষের জন্য রাষ্ট্র, পত্রিকা বা মানুষজনের চিন্তার অন্ত নেই । কিন্তু এসব ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো না কেন এবং তা নিরুত্তর রয়ে গেলো কেন?”

স্বাধীন বাংলাদেশের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’র সব অপকর্মের প্রামাণ্য দলিল হাতে পাওয়ায় সেই গোষ্ঠীটি সুকৌশলে জহির রায়হান’কে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছিল যার কূল কিনারা সেইসময়ের শাসকগোষ্ঠী তো করেই নি বরং জহিরকে গুম করার বিষয়টিকে ধামাচাপা ও বৈধতা দিতে ২৮ বছর পর কোন এক হাবিলদার কে চাক্ষুস সাক্ষী বানিয়ে ১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারির ঘটনা শুনায় আর সেই স্বার্থান্বেষী মহলের হাতের পুতুল বর্তমানের অন্ধ যুব সমাজের একটি অংশ সেই মনগড়া কাহিনী প্রচার করে জহিরকে গুম করার অন্যায়টির বৈধতা দেয় । অথচ একবারও তাঁদের মনে নিচের প্রশ্নগুলো জাগে না—

১. ৩০শে জানুয়ারি জহির রায়হান বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের একটি রাজনৈতিক নেতাদের গোপন কিছু দুর্লভ তথ্য প্রমাণ প্রেসক্লাবে উপস্থাপন করার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন সেদিন তাঁকে অপরিচিত (সরকারি এক কর্মকর্তা) এক ব্যক্তি ফোন করে মিরপুরে যেতে বলেছিল কেন?

২. সেদিন ছিল মিরপুর বিহারী পল্লীতে সামরিক অভিযানের দিন যেদিন ‘মিরপুর মুক্তদিবস’ পালন করা হয়। সেই সামরিক অভিযানে একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে কেন সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করানো হলো? ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর শুধু শহিদুল্লাহ কায়সার একাই নিহত হোননি সেদিন আরও অনেক বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, সেইসব বুদ্ধিজীবী পরিবারের কোন সদস্যকে তো সেই অভিযানে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে পাওয়া যেতে পারে বলে তো মিরপুরে ডেকে আনা হয়নি, তবে কেন শুধু বেছে বেছে জহির রায়হানকে শহিদুল্লাহ কায়সারকে পাওয়া যেতে পারে বলে ডেকে আনা হয়েছিল? জহির তো নিজে থেকেই সেখানে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হোননি, তাঁকে ফোন করে সেই ঠিকানায় যেতে বলা হয়েছিল, কেন?

৩. জহির যে তথ্যপ্রমাণ ৩০শে জানুয়ারি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন সেইগুলো কোথায় কেউ কি বলতে পারবেন? জহির গুম হওয়ার সাথে সাথে সেই প্রমাণাদি গুলোও কি গুম হয়ে গেলো? জহির তো সাথে করে সেইসব প্রমাণাদি কিছুই নেননি।

৪. শহিদুল্লাহ কায়সার’কে পাওয়া যাবে এমন কারনে জহিরকে বেছে বেছে জানুয়ারির ৩০ তারিখেই কেন মিরপুরে যেতে বলা হলো? এর আগে বা পরে নয় কেন? …… এসব প্রশ্ন অন্ধদের মনে জাগবে না কোনদিন। সত্যি হলো জহির ২৬ শে জানুয়ারি বিকেলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ৩০শে জানুয়ারিতে তিনি সব অজানা তথ্য প্রকাশ করবেন আর সেই ৩০ শে জানুয়ারি সকালেই জহিরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিরপুরে নিয়ে সামরিক অভিযানের মধ্যে ফেলে হত্যা করে লাশ গুম করা হয় আর দোষ চাপিয়ে দেয়া হয় বিহারী পল্লিতে থাকা পাকবাহিনীর উপর। একজন বেসামরিক লোককে সামরিক অভিযানের সংরক্ষিত এলাকায় সেনাবাহিনী প্রবেশ করতে দিলো আর শত্রুপক্ষ সেই লোকটিকে হত্যা করে ফেললো এমন ‘আষাঢ়ে গল্প’ বিশ্বাস করে যারা তারা আর যাই হোক স্বাধীন বাংলাদেশের, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষের ব্যক্তি নয় । আজও সেই ঘাতক দালালরা এই বাংলার মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে । একদিক না একদিন এই বাংলার মাটিতে জহির রায়হানের খুনিদের বিচার হবেই হবে ইনশাল্লাহ।

ছবি ও সহযোগিতায় : কায় কাউস ভাই, জুবায়ের আহমেদ ভাই, শামসুল আলম বাবু ভাই , শানু ভাই ও ক্যাপ্টেন নিমো।

উৎসঃ জবান


প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে এখানে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন



8

পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন

জেল থেকে বলছি : বিএনপি প্রার্থীর চিঠি ভাইরাল

18 Nov, 2018

যে কারণে আ’লীগ ছাড়লেন রেজা কিবরিয়া

01 Jul, 2017

সব দলের সঙ্গে সংলাপ করবে না ইসি

18 May, 2017

মুন্নী সাহার সাথেও ঘনিষ্ট ছবি, শুধু নিশোকে বরখাস্ত করা হবে?

29 Mar, 2017

আতিয়া মহল ঝাঝরা: ক্ষতিপুরণ দেবে কে?

23 Feb, 2017

যেভাবে এমপি হত্যার পরিকল্পনা করা হয়

27 Dec, 2016

হান্নান শাহ’র স্ত্রী দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে

18 Sep, 2016

নির্বাচনে মনোযোগ বিএনপির

03 Sep, 2016

২৬ জেলায় বসছে ফোনে আড়িপাতা যন্ত্র

31 Jan, 2019

তারেক-ফখরুলের ঊর্ধ্বে রিজভী!

31 Jan, 2019

সিম ছেড়ে আইপিতে ভরসা ছাত্রদল নেতাদের

31 Jan, 2019

বিএনপিতে আগে পুনর্বাসন, পরে পুনর্গঠন

31 Jan, 2019

সফল নির্বাচনের সংসদ : শেখ হাসিনা

30 Jan, 2019

জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি

30 Jan, 2019

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীকে পেটালো ছাত্রলীগ

30 Jan, 2019

সংসদের সংকট, সত্যিকারের বিরোধী দল নেই

30 Jan, 2019

যেভাবে ৯১৯ কোটি টাকা পাচার করে জাজ মাল্টিমিডিয়ার আজিজ

30 Jan, 2019

টিআইবির প্রতিবেদন বিএনপির সময় 'ঠিক ছিল', এখন 'স্বচ্ছ নয়' : তথ্যমন্ত্রী

30 Jan, 2019

‘মাতাল’ থাকায় ‘ফাঁসি থেকে রক্ষা’ এমপিপুত্র রনির!

30 Jan, 2019

নির্বাচনে কে কয়টি আসন আ. লীগকে জিতিয়ে দিতে পারে, এই নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা ছিলো :শাহাদাত হোসেন সেলিম

30 Jan, 2019

মাঠের প্রথম কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ঢল, উজ্জীবিত

30 Jan, 2019

৭৫’র মতো দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে: ফখরুল

30 Jan, 2019

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ভুলত্রুটি ছিল : সিইসি

30 Jan, 2019

‘অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না’

30 Jan, 2019

বিএনপিকে সংসদে নিতে নানামুখী চাপ

30 Jan, 2019

বাংলাদেশ নিয়ে চীনের ভাবনা ও দুর্ভাবনা

30 Jan, 2019

সুলতান এখন কার

30 Jan, 2019

পুলিশ পদকের সব রেকর্ড ভঙ্গ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপহার

30 Jan, 2019

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কী, পরিষ্কার হতে চায় ভারত

30 Jan, 2019

অনুসন্ধান ঃ ৯০,০০০ বন্দি মানবেতর জীবন





Write to Editor: editorbdt@yahoo.com
All contents copyright © BD Today. All rights reserved.
 
.
When Sheikh Mujib strangled democracy in Bangladesh how many of these protested ? None.

How many intellectuals spoke out against the farcical election last month ? None.
When was the last time any of this guys created anything of value ? Never.
It was the intellectuals who supported and encouraged Mujib to nationalized everything. They spoke out vehemently against Zia and Ershad when they were trying to privatize the Govt owned companies.
I kind a agree with you. Many our party blind so called intellectuals are disgrace. But still, wishing them death at the hands of razakar is not right.
 
Last edited:
. . .
I kind a agree with you. Many our party blind so called intellectuals are disgrace. But still, wishing them death at the hands of razakar is not right.

So many people died, but a special day "Martyred Intellectual Day "is dedicated to these folks. Perhaps my words were a bit stronger than they needed to be, I have met a bunch of these guys in my life, these folks are generally so full of themselves.

These guys have extreme cases of illusion of grandeur and usually look down upon on average people.
 
.
On 30th December, 1972 Zahir Raihan received a call stating that his brother had been kept in a cell in Mirpur and that he had to come in person to save his brother. Zahir Raihan went to search for his brother in capital’s Mirpur area and was never to be seen or heard again. It is believed that he was killed in Mirpur by Pakistani soldiers in hiding and their Bihari collaborators while looking for the body of his brother at the Mirpur mass grave where many intellectuals were killed and buried.

Zahir Raihan lived only 36 years before he disappeared on January 30, 1972, but left his mark in the heart of every patriotic Bangladeshi with his great works.
I do not understand the discrepancy in citing the dates in the report. One says 30 December 1972, the other says 30 january 1972. So, which one is correct? As far as I know he went to Mirpur on 3o Dec 1971 to find out his missing brother Shahidullah Kaiser, a famous novelist.

Peace was not yet established in Mirpur although the PA troops surrendered on 16 Dec 1971. Fighting was still continuing between the Biharis and Mukti Bahini people and Zahir was killed in a cross fire in Mirpur. No one really can say for sure whose bullet had killed him, but everyone in those days said of a stray bullet from the Bihari side killed him. Only Allah knows the truth.
 
. . .
Biharis were wrong to take a side to begin with. It was inevitable that they would face backlash. The war didn't concern them much. There were many Bengalis who didn't participate in the war but didn't assist the Pak military either. Biharis should have done the some. They spent decades after 71, looking for Pak govt to take them back to Pakistan. Pakistan govt did bare minimal putting the future of the Biharis and their offsprings in jeopardy. It was much later some of them asked for BD citizenship.

I don't support the prosecution of Biharis. But their activities in 1971 were largely responsible for it. They supported an oppressive force against general people. When the oppressive force had to withdraw, obviously the biharis were going to be in the recieving end.

you misguided Banglais don't even know the real story why Pakistan army intervened in BD, you have been fed so much bullshit (a hindu design) that you don't even really care to find the truth. you all blabber about rapes and murders done by Pakistan Army and cite a handsome number of 3 millions raped...I have explained these 3 million rapes in another thread and if you care I can find the link for it for your curious mind but i must warn you it might hurt your feelings...now to this new revelation by you that "Biharis should not have taken the side". I hope there is one honest Bangali left in Bangladesh who can tell you the truth, the truth that Pakistan army only intervened when Banglais with help of their eastern randis Started mass killings and rapes of Biharis...a Hindu design to involve Pakistan army in this civil war....so my nincompoop friend Biharis did not chose the side they were fighting for their survival....go try hard and find one older honest Bangalis and ask him but I doubt there is any shame left in Bangalis to tell the truth or they are scared of being labelled Jamati and hanged so they are silent now.
 
.
you misguided Banglais don't even know the real story why Pakistan army intervened in BD, you have been fed so much bullshit (a hindu design) that you don't even really care to find the truth. you all blabber about rapes and murders done by Pakistan Army and cite a handsome number of 3 millions raped...I have explained these 3 million rapes in another thread and if you care I can find the link for it for your curious mind but i must warn you it might hurt your feelings...now to this new revelation by you that "Biharis should not have taken the side". I hope there is one honest Bangali left in Bangladesh who can tell you the truth, the truth that Pakistan army only intervened when Banglais with help of their eastern randis Started mass killings and rapes of Biharis...a Hindu design to involve Pakistan army in this civil war....so my nincompoop friend Biharis did not chose the side they were fighting for their survival....go try hard and find one older honest Bangalis and ask him but I doubt there is any shame left in Bangalis to tell the truth or they are scared of being labelled Jamati and hanged so they are silent now.
Is this what you are taught at school? Lmao.
Maybe his indian masters got rid of him after he demanded his money share for terrorism.
your very own Mukhti Bhani, the terrorist organization.
Expected from people who think Bin Laden was never in Pakistan. As expected you guys are hated by all your neighbors other than China who sees you as a cannon fodder.
 
.
He disappeared in Mirpur which was a stronghold of armed Bihari collaborators at that time. He was looking for his brother who disappeared in 14th December, 1971.
These traitor Biharis should have been kicked out of our country long ago.
 
.
These traitor Biharis should have been kicked out of our country long ago.
If you can identify the individuals responsible for crimes then they should be punished. As a community they have suffered enough. It is time to integrate them with our society. It is almost done too with the generations born after war. They speak fluent Bangla. The olds will die and the next generations with be Bengalified.
 
.

Country Latest Posts

Back
Top Bottom