বাংলাদেশে সিনেমা হলের ডিজিটাল পুনর্জন্ম!
রঞ্জন বসু, দিল্লি২২:৩৬, আগস্ট ১৬, ২০১৬
161
বাংলাদেশের সিনেমা হলে বাণিজ্যিকভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র দেখানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের সিনে-জগতে ঘোরতর আপত্তি আছে; আর তা বোধহয় সঙ্গত কারণেই। কিন্তু এবারে বলিউড দুনিয়ার একটি নামজাদা ডিজিটাল কোম্পানি বাংলাদেশে সিনেমা হলগুলোর মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তিকে ঢেলে সাজানোর জন্য এগিয়ে এসেছে, যে উদ্যোগ নিয়ে কোনও আপত্তি ওঠার কথা নয়। বরং আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য রুগ্ন সিনেমা হল এতে আবার প্রাণ ফিরে পাবে!
ভারতের মুম্বইভিত্তিক এই কোম্পানিটির নাম ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কস। ভারতের সিনেমা হলগুলিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমদানি করার ক্ষেত্রে তারা অন্যতম পথিকৃৎ। আর ঠিক একই কাজ তারা করতে চলেছে বাংলাদেশেও। এ জন্য তারা ইতোমধ্যেই গাঁটছড়া বেঁধেছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস জাজ এসকে মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে। দুই সংস্থার মধ্যে চুক্তির শর্ত অনুসারে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ‘ডিজিটাল সিনে সার্ভিস’ আর ‘টেকনিক্যাল নোহাও’ জোগাবে ভারতের ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কস। বিনিময়ে তারা পাবে সেই হলগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানোর সত্ত্ব।
কিন্তু এই ডিজিটাল সিনে সার্ভিস কীভাবে প্রাণ ফেরাতে পারে বাংলাদেশের মৃতপ্রায় সিমেনা হলগুলোতে?
দেশের গঞ্জ-মফস্বল বা জেলা শহরগুলোতে কিছুকাল আগেও সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তাদের নিশ্চয় মনে পড়বে কীভাবে সেলুলয়েডের ফিল্ম রিল চালিয়ে সেখানে সিনেমা দেখানো হতো। মাঝে মাঝেই ‘জাম্প’ করতো দৃশ্য কিংবা রোল চালানোর ভুলে কাটা পড়তো চরম গুরুত্বপূর্ণ সিকোয়েন্স। খুব হিট সিনেমা যখন একসঙ্গে শহরের দুটো হলে চলতো তখন এক হল থেকে রোল নিয়ে মোটরবাইকে চেপে অন্য হলে একটু পরের শো-র জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এমনও হয়েছে বহুবার।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় আটশ সিনেমা হল ছিল যার সবগুলোতেই ছিল এই অ্যানালগ প্রযুক্তি। এর মধ্যে বেশির ভাগ হলই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বড়জোর শ’তিনেক টিমটিম করে চলছে। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির আমদানি করে এই হলগুলোতেই এখন নিয়ে আসা হচ্ছে অত্যাধুনিক পিকচার ও সাউন্ড কোয়ালিটি, যাতে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাটাই এখন পাল্টে যেতে বাধ্য। সোজা কথায়, বাগেরহাটের সিনেমা হলে গিয়েও এখন আপনি পেতে পারেন প্রায় আধুনিক মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা।
ঠিক এই জিনিস আমরা উত্তর প্রদেশ বা বিহারের গ্রামে-গঞ্জে করেও সফল হয়েছি। ওই সব রাজ্যে বহু সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ডিজিটাল সিনে সার্ভিস চালু করে সেই সব হলেও আমরা আবার দর্শকদের টেনে আনতে পেরেছি। বাংলাদেশের মতো একটা ডেভেলপিং ইকোনমিতেও যে ঠিক একই জিনিস ঘটবে, তা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই’, বাংলা ট্রিবিউনকে এ সব কথা বলছিলেন ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কসের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা আশিস ভান্ডারী।
ভান্ডারী আরও জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ২৫৬টি সিনেমা হলে এই ডিজিটাল সিনেমা প্রযুক্তি সরবরাহ করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একশটির মতো সিনেমা-হলে এই প্রযুক্তি বসানোর পরিকল্পনা আছে। আর এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মোট অন্তত পাঁচশ সিনেমা হলে এই প্রযুক্তি চালু করে দিতে চায় ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কস।
এই ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে সিনেমার নির্মাতা বা পরিবেশকরাও খুশি। কারণ, এতে সিনেমার পাইরেসি বা জাল ভিডিও কপি তৈরি করার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ জন্য ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কসের একটি পেটেন্ট করা প্রোডাক্টও রয়েছে ‘ডিজিবিউটর’ নামে যার মাধ্যমে ৫১২-বিট এনক্রিপশনে সিনেমাগুলো পরিবেশিত হয়, আর নিশ্চিত করা যায় সর্বোচ্চ সুরক্ষা। সেই সাঙ্কেতিক কোড ভেদ করে ওই সিনেমাগুলোর বেআইনি কপি তৈরি করা শুধু কঠিনই নয়, একরকম অসম্ভব!
বাংলাদেশের শয়ে শয়ে সিনেমা হলে এই প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য সেখানে বিশাল মাপের সার্ভার ও প্রসেসিং ল্যাবরেটরিও বসাতে সাহায্য করছে মুম্বইয়ের এই কোম্পানিটি। স্থানীয়ভাবে তারা বহু কর্মীকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে, যাতে এই ডিজিটাল সিনে সার্ভিস চালানোর জন্য দক্ষ লোকবল গড়ে ওঠে। আর এই ‘টেকনোলজি ট্রান্সফারে’র বিনিময়ে ইউনাইটেড মিডিয়া ওয়ার্কস সেই সব সিনেমা হলের পর্দায় বিজ্ঞাপনী সত্ত্ব আদায় করার অধিকার পেয়েছে। মাস তিনেকের মধ্যেই যে বিজ্ঞাপন আসতে শুরু করবে বলে তাদের বিশ্বাস। ফলে, বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের দর্শকরাও অচিরেই তাদের প্রিয় শাকিব খান কিংবা পরীমণি-কে পাড়ার সিনেমা হলেই দেখতে পাবেন ঝকঝকে ডিজিটাল প্রিন্টের তকতকে চেহারায়, শুধু যার প্রযুক্তিটা জোগাবে একটি ভারতীয় সংস্থা।
http://www.banglatribune.com/national/news/132001/