What's new

Nation celebrates Pahela Baishakh

Auranzeb was a hardliner who is equally hated by all in India by Sikhs and Hindus. He is well known for his obsession with religon and was highly against non muslims....

Not us though. We placed him high and consider him hero. I guess this is the difference between US and YOU. :azn:
 
.
ধিক!! বৈশাখী আয়োজনের নামে বাঙালী সংস্কৃতিকে অপমান
মোঃ আদনান আরিফ সালিম (অর্ণব) 
বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাস পুরাতন বছরের বিদায় আর নতুনকে বরণ নেয়ার উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে পালিত হলো আমাদের বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই অনুষ্ঠানটির একটি বিশেষ দিক হলো এটি একমাত্র অনুষ্ঠান যাকে অসাম্প্রদিক বলে চিহ্নিত করা যায়। তবে এদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজের সাথে মিল রেখে এই দিনে পালিত বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে মিলে যায় বলে অনেক গোড়া ধর্মীয় মতাদর্শিক এটাকে হিন্দুয়ানী উৎসব বলেও চালানোর চেষ্টা করেন। পহেলা বৈশাখকে আমরা যেহেতু মুখে বলি বাঙালির প্রাণের উৎসব একটিবারের জন্য হলেও সকলের উচিৎ একটু অনুসন্ধিৎসু চোখে পর্যবেক্ষণ করা এটার সাথে আমাদের নাড়ির যোগ কতটুকু থাকছে বা আমরা রাখার চেষ্টা করছি। আজকের দুর্মূল্যের বাজারে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়ার ক্ষমতা হয়তো অনেক মধ্যবিত্তের ও নাই । সেখানে এই ইলিশ আর পান্তাকে আমরা একটি উপস্থাপনিক মানদন্ড হিসেবে সারসত্তায়িত করে অনেকটা অবশ্য পালনীয় চেহারা দিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে তিন দিন পূর্বের ১১০০ টাকা মূল্যের ইলিশ মাছ নববর্ষের দিন সকালে কিনতে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় ৫০০০ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে পচাগলা পান্তাভাত বিরিয়ানির সমমূল্যে কিনে খাওয়ার পরও কেবলমাত্র অভ্যাস না থাকাতে মারাত্বক ডায়রিয়া দেখা গেছে অনেকের। আমরাদের অম্প্রদায়িক ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতি প্রকাশের উপলক্ষ্য সার্বজনীন একটি উৎসব হিসাবে পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণের দিন, সাদরে উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিদিনের যান্ত্রিকতা আর একঘেয়ে আটপৌরে বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ। এ বৈশাখ যেন চৈত্রের কাঠফাটা বোদের পর এক পশলা বৃষ্টির মতো আনন্দের বারতা নিয়ে আসে প্রতিটি বাঙালির মনে প্রাণে।

বাংলাদেশ বাদ দিয়ে গোটা পৃথিবীর পরিমণ্ডল বিবেচনা করা হলে নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস খুঁজে পাই মেসোপটেমিয়ার উর্বর অর্ধচন্দ্রিমাতে গড়ে ওঠা ব্যবিলনীয় জনপদের বিকাশের সময় থেকে সময় থেকে। ব্যাবিলনের মানুষ নববর্ষের দিনে সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু বদ অভ্যাস ত্যাগ ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার সংকল্প করত, ধার করে আনা গৃহস্থালি ফেরত দিত এভাবেই চলে আসছিল যাকে আমরা আমাদের প্রচলিত হালখাতার সাথে তুলনা করতে পারি। গ্রেকোরোমান যুগেও নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে শিশুদের ঝুড়িতে নিয়ে বিশেষ কুচকাওয়াজ করে ভাবা হতো এতে আত্মার শক্তি বাড়বে। খ্রিষ্ট ধর্মীয় রীতি প্রাথমিক দিকে নববর্ষ উদযাপনের বিরোধীতা করলেও পরবর্তিকালে গির্জায় শিশুদের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করা একটি প্রথায় পরিণত হয়ে যায় যার দ্বারা মহান যীশুর বাল্যকালকে স্মরণ করা হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়– এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। বর্তমানে নতুন বছরের সূচনায় পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়ার পূর্বে এটি ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। বাংলা সব প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বের ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমরা ৭৮ খ্রিস্টাব্দ হতে কুষাণ সম্রাট কনিষ্ক কর্তৃক শকাব্দ, চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক ৩২০ খ্রিস্টাব্দ হতে গুপ্তাব্দ, সেন শাসনামলে লক্ষণাব্দ - ১১১৮ খ্রিস্টাব্দ, মুসলিম শাসনামলে পালিত হতে দেখি হিজরী সন কেন্দ্রিক নওরোজ। কৃষিভিত্তিক ভারতবর্ষের সাথে মিল রেঝে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর এর সময় ফতেহউল্লাহ সিরাজী বাংলা সন গণনা শুরু করেন। মানুষের মাঝে নববর্ষ নিয়ে অনেক বিশ্বাস পালিত হচ্ছে সেই আবহমান কাল থেকে। যেমন, অনেকে মনে করেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে যা করবেন, পরিধান করবেন বা খাবেন পুরো বছর জুড়ে তাই পারবেন। এজন্য অনেকেই বছরের পয়লা দিনের কিছু সময় আত্মীয় বা বন্ধু বান্ধবের সান্নিধ্যে সময় কাটান। অনেকে এই উদ্দেশ্য নিয়ে মিষ্টিমুখ করেন যেন বছরটি জুড়েই মুখ মিষ্টি থাকে। অনেকে বিশ্বাস করে, যদি বছরের প্রথম দিনে কোন কালো চুলের লম্বা দেহের কারো সাথে দেখা হলে তা তাদের সৌভাগ্য বয়ে আনবে। আমরা যেমন পান্তা ইলিশ খেতে চেষ্টা করি। আমেরিকার অধিকাংশ প্রদেশে এ দিন মটরশুটি ও শুকরের মাংস দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার খাওয়া হয় যাকে উন্নতির প্রতীক বলে ধরা হয়। বাঁধাকপিকেও তারা সৌভাগ্যের সবজি বলে মনে করে, প্রতীকি অর্থে এর প্রতিটি পাতাই যেন এক একটি কাগজের মুদ্রা।

আজ আমাদের দেশে নকশাঁ আঁকা শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন এদিনটিকে আর পালন করাই যায় না, কিন্তু উচ্ছলতা যখন সীমা অতিক্রম করে তা একদিনে যেমন উৎসবকারীদের সবার জন্য বেদনার কারণ হয় পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতিকেও করে যার পর নাই ক্ষতিগ্রস্ত। একুশ শতকে এসে এই বৈশাখী অনুষ্ঠান যেন রমনার বটমূল থেকে পুরো ঢাকা হয়ে প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। শুধু গ্রাম নয় শহর উপশহর এমনকি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন, খোলা স্থান আর অলিগলিতেও বসে বৈশাখি মেলা আর নববর্ষের আনন্দ আয়োজন। গীতি-সংগীত, সাজ-পোশাক, পান্তা- ইলিশ, ঢাক -ঢোলের টংকার, বাশির মোহনীয় সুর, বাজনায় আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় পূর্ণতা পাচ্ছে বাঙালির এ উৎসব মুখরতা।

ইতিহাসের বাস্তবতায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ই মার্চ বা ১১ ই মার্চ থেকে শুরু হওয়া গণনাকে কার্যকর ধরা হয় ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর তারিখ থেকে অর্থাৎ সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের তারিখ থেকে। প্রাথমিক পর্বে এটাকে ফসলি সন বলা হলেও কালের পরিক্রমায় এটি বাংলা বর্ষ হিসেবে পরিচিতি পায়। বাংলা মাসের নামগুলো এসেছে আসলে বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম হতে বিশাখা থেকে বৈশাখ, জেষ্ঠ্যা থেকে জৈষ্ঠ, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবনা থেকে শ্রাবন, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, কৃত্তিকা থেকে কার্ত্তিক, অগ্রইহনী থেকে অগ্রহায়ণ, পূষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফল্গুনি থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা থেকে চৈত্র। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ ই এপ্রিল নববর্ষ পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত পঞ্জিকা অনুসারে এ দিনটিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে যদিও বাংলার সাথে হিজরী ও খ্রিষ্ট্রীয় সনের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। হিজরী সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনের মধ্য দিয়ে, ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে আর বাংলা সনের শুরু হয় ভোরের সূর্য্য ওঠার সাথে সাথে।
আমাদের বর্ষবরণের মূল আয়োজন রমনার বটমূলকে ঘিরে যাকে কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ পহেলা বৈশাখের সমার্থক শব্দ বলে মনে করেন। মাটি আর মানুষের সুরের সাথে পান্তা ইলিশের আস্বাদনে জাতি নিজেকে খুঁজে ফেরে এই দিনে। শত ব্যাস্ততাকে দুপায়ে মাড়িয়ে একবারের তরে হলেও যেতে চেষ্টা করে বৈশাখী উৎসবে। ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন আর অনাগত সময়কে বরণের প্রাণউচ্ছ্বল পরিবেশে তাই সরগরম হয় বর্ষবরণ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারীর প্রতিবাদে ১৯৬৫ সাল (১৩৭৫ বঙ্গাব্দে) ছায়ানট রমনাতে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করেছিল প্রথম কিন্তু ধীরে ধীরে তা অনেকটা রবীন্দ্রাধিপত্যবাদে রূপায়িত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের সুশীলদের আবার কিনা রবি ঠাকুর থেকে দুই এক লাইন না বললে স্ট্যাটাস থাকেনা। ১৯৭২ সালের পর থেকে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি পায়। ১৯৮০ সালে বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এক ধাপ বাড়তি ছোয়া পায় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান।

বটমূলে সরাসরি উপস্থিতি তো আছেই পাশাপাশি বেসরকারি স্যাটেলাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কল্যাণে এখন ভোরে রমনা বটমূলে শুরু হওয়ায় বর্ষ বরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করে কয়েক কোটি বাঙ্গালি। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় প্রাণান্তকর পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। এবারও বৈশাখের প্রথম দিন ভোরেই শুরু হয় উৎসব। সুবিশাল রমনাতে কোথাও যেন তিল ধারণের সংকুলান হচ্ছেনা এমন অবস্থা। একবার গর্বে বুকটা ভরে উঠতে গিয়েই সব আনন্দ কেন যেন হঠাৎ করে উবে গেল যখন এর বিপরীতের কিছু চিত্র চোখে ভেসে উঠল যাহোক সেকথায় পরে আসছি। র্যাব পুলিশের পাশাপাশি সিসিটিভি আর ডগস্কোয়াডের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। বাঁশির মন মাতানো সুরলহরী আর ঢাকের বাজনায় মুখরিত পরিবেশে যখন উৎসব শুরু হয় তখন বাঙালি জাতির একজন ভাবতেই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছিল। আমার চোখে পড়ল বেশ কিছু উন্মুক্ত কনসার্টের বিবরণী যা নিয়ে আমার বিরক্তির অন্যতম কারণ সেটা পরে বলছি। টি এস সি ও এর আশেপাশেই বাউল লালন, জারী সারি, মুর্শেদী গানের আসর বসেছে এর মধ্যেই যা দেখতে আমার ক্যাম্পাস জাবিতে পালিত অনুষ্ঠানের কোন খোঁজই নিতে পারিনি সারাদিন। আমার লক্ষ্য ছিল একান্ত কাছে থেকে আমাদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতিকে প্রত্যক্ষ করা আর রাতে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন তৈরী করা। আমি এই সকল অনুষ্ঠানে যে অসঙ্গতি দেখেছি তার একটা ধারাবাহিক বিবরণী দিতে চেষ্টা করছি।

বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আকাশচুম্বী দামের কারণে অনেকটা অধরাই ছিল পান্তা পান্তা-ইলিশ। আর সন্ধার পর খবর পেলাম কোন অভ্যাস না থাকাতে হঠাৎ করে একদিন পান্তা খাওয়ার বীরত্ব দেখাতে গিয়ে আমার পরিচিত প্রায় আঠার উনিশজন মারাত্বক ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা অনেকটা যেন এমন হয়ে গেছে পান্তা ইলিশ না হলে আর পহেলা বৈশাখের কোন আমেজই থাকে না। এটা ভক্ষণেই মুক্তি ও নিজের বাঙালিত্বকে একদিনের জন্য হলেও জাহির করার এক অনন্য সুযোগ তো থাকছেই। কাকডাকা ভোরে খালি পেটেই হয়তো শিশুদের সাথে বাবা মা বেরিয়েছেন বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখতে কেউ হেটে কেউবা বাবার কাধে চড়ে। এ আসলেই এক অনন্য দৃশ্য। চিরাচরিত সংস্কৃতিকে কাচকলা দেখিয়ে বাবা মা যে শিশুকে তার জীবনের শুরু থেকেই ব্রেড, অমলেট, বানানা আর স্যান্ডউইচে অভ্যস্ত করে তুলেছেন তার কাছে এই পান্তা ইলিশ আর মারাত্বক ঝালের লঙ্কা চিবিয়ে বাঙালি সাজার অপচেষ্টাকে তো এক বিরক্তিকর লঙ্কাকাণ্ড বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই দেখলাম বেশির ভাগ শিশুই পান্তার সানকির সামনে বসে মারাত্বক ভেংচি দিচ্ছে, চোখে তার মারাত্বক ঘৃণা আর আপত্তি। আমি বলবো এই আপত্তিটা প্রতিকী। তার চোখের ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে লুকিয়ে আছে অনেক অভাব অভিযোগ যেটা এই পান্তার বিরুদ্ধে না। এটা আমাদের প্রচলিত সংস্কৃতিক ভাবধারা থেকে সরে আসার প্রতিবাদে বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। তাদের ওই বিরক্তি আর ঘৃণা মাখা চোখ যেন তাদের মনে কথা বলতে চাইছে। আমরা যখন বাঙালি পুরোটাই বাঙালি হইনি কেন, আর এই একদিন জোর করে চোর পুলিশের আদলে বাঙালি বাঙালি খেলা কেন??

আমার মতে নববর্ষের আয়োজনে সত্যিই এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রার প্রচলন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা যাদের নিপুণ সৃষ্টিশীল আচরণের জলন্ত দৃষ্টান্ত এই শোভাযাত্রা। ধীরে ধীরে সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যখন রমনা টিএসসি শাহবাগকে আমার মনে হলো এক জনসমুদ্র ঠিক তখন শুরু হয় মঙ্গলশোভা যাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক যথারীতি চক্কর দিল এই শোভাযাত্রা। পশু পাখির মুখাকৃতি, কৃষিভিত্তিক সমাজ, ঐতিহ্যের নানা অনুসঙ্গকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা রং বেরং-এর মুখোশ ও আলপনার মাধ্যমে। আমার মনে হল আমাদের পুরো আয়োজনটাই ছিল এই মুখোশের মতোই মেকী। আসলে একটু প্রগতিশীলতার ভান করা, নিজেকে আধুনিক আর সংস্কৃতি সচেতন প্রমাণ করতে গিয়ে আড়ং থেকে একটা পাঞ্জাবী কিনে এই শোভাযাত্রায় নেমে পড়ার সহজ সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাননি।

বৈশাখ মাস বলতে তো মেলার মাসকেই বোঝায়। একসময় শুধু গ্রাম গঞ্জে মেলা হলেও এখন এর পরিধি বিছিয়েছে শহরের বড়সর এপার্টমেন্ট ও হাই সোসাইটিতেও। তবে পার্থক্য থাকে গ্রামের আর শহুরে মেলার। বাঁশের বেতের তৈজস আর নানা জাতের খেলার সামগ্রী, নারকেল মুড়কিসহ আরো কত কি থাকে এসব মেলায়। তার ইয়ত্তা নেই। মেলার সময়ে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুস্তির আসর বসে। এখনও বাংলাদেশের চট্টগ্রামে লালদীঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলি খেলা। আর বর্ষবরণের এই মেলা প্রবাসীদের জন্য হয় মিলন মেলা। দীর্ঘ ব্যস্ততার অবসরে বৈশাখী মেলা প্রবাসী বাঙালিদের দেয় অফুরন্ত আনন্দ। জাপানে প্রতি বছরই অনেক ঘটা করে বিশাল পরিসরে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। জাপান প্রবাসীদের এ মিলন মেলার রেশটা থাকে সারা বছর জুড়ে। এছাড়া নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতে বসে বৈশাখী মেলার আয়োজন।

পত্রিকাতে লেখালেখি শুরু করার পর থেকেই আমার বেআক্কেল চোখ দুটো ইদানিং বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে মনে হয়। হালখাতার উৎসব কিভাবে পালিত হয় তার সরেজমিন অবস্থা দেখতে চক্কর দিয়েছে বায়ান্ন বাজার আর তিপ্নান্ন গলির নানা স্থান। পুরাতন ঢাকায় নানা স্থানে ঘুরে দেখতে চাইলাম তাদের ঐতিহ্য সচেতনতা এখনো কতটুকু টিকে আছে। প্রাচীন বর্ষবরণের রীতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবেই জড়িত একটি বিষয় হল হালখাতা। তখন প্রত্যেকে চাষাবাদ বাবদ চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করে দিত। এরপর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ভুমির মালিকরা তাদের প্রজা সাধারণের জন্য মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখতেন। যা পরবর্তীতে ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। পুরাতন ঢাকার দোকানীরা পুরো বছরের বাকীর খাতা সমাপ্ত করার জন্য পহেলা বৈশাখের দিনে অনেকটা ঐতিহ্যগত ভাবেই। কিন্তু এবার দেখলাম কিছুটা ভাটা পড়েছে। একবার মনে হলো সারাটা দিন টো টো করে ঘোরাটাই আমার বৃথা গেল। এখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে লেখালিখি করা আর ঢাকা নিয়ে গবেষণাকারী এক বড় ভাইয়ের সহকারী হওয়াতে পুরাতন ঢাকার পরিচিত অনেকে মিষ্টিমুখ না করিয়ে ছাড়লেন না। তবে তাদের প্রায় সবার কণ্ঠেই ছিল অনেকটা হতাশার ইঙ্গিত। তাদের মতে দুই একজনই আছেন যারা এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানকে অনেক সমস্যা হলেও বুকে ধরে রেখেছেন। একুশ শতকের এই দিনে স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের ছোয়া পাওয়া গ্রামগুলোর বাজার, বন্দর ও গঞ্জে নববর্ষে হালখাতার সেই হিড়িক পড়ে কিনা সন্দেহ থেকেই যায় সেখানে ঢাকা তো অনেক দুর।

যখন অনেক ছোট ছিলাম, খুব সম্ভবত প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি, দাদু অনেকটা লাঠিতে ভর দিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে পদ্মার পাড়ের বৈশাখী মেলায় বেড়াতে, যেতেন তার সাথে আজকের বৈশাখী মেলার কোন মিল পেলামনা। একবার ভাবলাম আমার আসলে দেখার চোখই নাই পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পাই এতো মেলার নামে এক সুন্দর বাণিজ্যিক মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু সে সময়ের মেলার সাথে ছিল মাটি ও মানুষের নিবিড় সম্পর্ক যা ছিল অনেকটাই মানবিক, এখনার মতো যান্ত্রিক আর অতিমানবিক বা অমানবিক নয়। এইতো মাত্র বছর তেরো আগের কথা, নববর্ষ মানেই স্কুল ছুটি, খুব ভোরেই ঘুম থেকে ওঠা। তারপর আমার আম্মা দাদিকে দেখতাম নানারকম পিঠা-পুলির আয়োজনে ব্যস্ত হতে। আমার ছোট চাচার আবার ঘোর আপত্তি ছিল পান্তা-ইলিশে, চাচা বলতেন এই একদিন পান্তা খাওয়া হলো হতদরিদ্র কৃষকদের অপমান করা, যে তোরা তো পুরো বছর এটা খাসই দেখ আমরাও খাই। কত মজা করে খাই। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ি।

মান্নাদের সুরে মন যেন অনেকটা কেঁদে কেঁদেই বলতে চাইছে “কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি নববর্ষের দিনগুলো সেই” ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিউটের কাছে আসলাম অনেকটা হাটতে হাটতেই। আজকের উৎসবের সাথে অনেকটা বিরোধিতা করেই কিনা একদম যানবহন ছিল না বললেই চলে। তাই কত যে হাটতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। পান্তা ইলিশ ছাড়া তেমন কোন খাবার নাই তাছাড়া সকালে নাস্তা করে এতোটা বেলা চরকির মতো ঘুরে অনেকটাই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত আর অবসন্ন দেহে যন্ত্রচালিতের মতো ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিউটের কাছে গিয়ে দেখি একটা বর্ণিল কনসার্ট। কাছে গিয়ে জানতে পারি রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই এই কনসার্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু চড়া সুরের মিউজিক আর ডিজে পার্টির স্টাইলের ড্রামস বিট শুনে আমার কাছে কেমন যেন খটকা লাগে। একটু এগিয়ে যাই কি ঘটছে দেখার জন্য। অনেকটা দক্ষতার সাথে ভিড় ঠেলে অনেকটা স্টেজ দেখা যায় এমন দুরত্বের মধ্যে চলে আসলাম। এখানে পহেলা বৈশাখের নামে যা করা হচ্ছে সেটা নিতান্তই আমাদের সমাজ সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক। স্বাধীনতার মাসে আমাদের সুশীল সমাজ শাহরুখের উড়ন্ত চুম্বন আর ভাষার মাসে শীলার যৌবনের তেজ দেখে ধন্য হয়েছিল এটা জানতাম। কিন্তু আজ নববর্ষের প্রথম দিনে মিলা, তিশমা, শিরীনের পাশাপাশি উন্মাদ যুবকদের অন্যতম আকর্ষণ তন্বী যখন মিনি স্কার্ট আর টাইট প্যান্ট পরে স্টেজে উঠে বাজেরে বাজেরে ঢোলের রিমিক্স গাইতে শুরু করে তখন আমি একটা কথাই ভাবছিলাম জাতির বিবেক কি এখন হারিয়ে গিয়ে নিদ্রা গেছে?? এটা বাদ দিন ঠিক এর কিছুক্ষণ পর পর অনেকটা খাট পোশাকে তন্বী যখন গাইতে শুরু করলো ‘‘ মাই নেম ইজ শীলা, শীলা কি জাওয়ানী, ..... আই’ম সো সেক্সি ফর ইউ, ম্যায় তেরি হাত না আনি’’ তখন যারা দেশের বৈশাখী অনুষ্ঠানকে যারা হিন্দুয়ানী বলে পরিচিত করতে আগ্রহী তারাই বা কোথায় ছিলেন আর সেই সব সুশীলর যারা কিনা সমাজ সংস্কৃতি আর প্রগতির নামে কথা বলতে বলতে অনেকটা দাঁত পড়ার যোগাড় করেন তারাই বা কই ছিলেন। উন্মাদ তরুণ সমাজ এই গানটার সময় জুতা না মারলেও অতিরিক্ত উন্মাদনবশত এমন হুড়োহুড়ি বাধালো আর এমনভাবে তাদের ক্যাপ, খেলনা সহ নানা বস্তু স্টেজের দিকে মারতে লাগলো কর্তৃপক্ষ দ্রুতই তন্বীকে স্টেজ থেকে সরিয়ে নেয়। বাকি অনুষ্ঠান শেষ করতে হয় শিশুশিল্পীদের দিয়ে তখন অনেকটা জাত রক্ষা করে জনসমাগম কমতে থাকে। পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন আবহমান কাল থেকেই বাঙালির প্রানের সাথে সংযুক্ত। তবে এর মূল গতিধারার সাথে আমাদের ক্রমশ বিচ্ছিন্নতা বৈশাখী অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যকে ম্লান করার পাশাপাশি কিছু উচ্ছৃখল আচরণের জমি তৈরী করে দিচ্ছে।

আসলে এ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক চরম দেউলিয়াত্ব সৃষ্টিরই প্রত্যক্ষ ফলাফল। আমাদের জানতে হবে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস। পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ব্যাপারেও একটা বদ্ধমূল ধারণা থাকতে হবে। এটা বুঝতে হবে পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় গৌরব প্রত্যেকের উচিত একে অন্তরে ধারন করা যেন এটি তার মূল স্রোতধারা খুঁজে পাবে। সংস্কৃতির এই চরম দেউলিয়াত্ব হতে উত্তরণে আমাদের প্রত্যেকের বিশেষত তরুণ সমাজের সচেতনতার একান্ত প্রয়োজন। তবে যে দেশে মূল ইতিহাস বিকৃত করে গৌরবের নগরী ঢাকার আটশো বছরের ঝলমলে অধ্যায়কে ধামাচাপা দিয়ে কিছু তথাকথিত কুপমন্ডুক সুশীল সমাজের প্রতিনিধি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে মগ্ন হয়ে খুব সহজে চারশো বছর গায়েব করে দিতে পারেন, সেখানে এই নববর্ষ নিয়ে কথা বলা আর আমাজন বনের গহীনে গিয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা বোধহয় একই, তবুও বলছি। আর কেউ না হোক আমাদের তরুণ যুবারা অন্তত একটু করে হলেও স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করুক সোনার বাংলাকে তিল তিল করে গড়ে তোলার। আর নিজেকে পরিচিত করুক সোনার বাংলার এই স্বপ্নযাত্রায় পথের একজন গর্বিত সারথির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে।

লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রত্নতাত্ত্বিক
Archaeology Of Humankind
 
.
বৈশাখ এসে তুই
কতো রঙে রাঙালি
জোর করে হতে হলো
ওয়ান টাইম বাঙালি !!

বাঙালি নয়তো
খালি হাতের কাঙালি
সব কিছু বাদ দিয়ে
দাদাদের দালালি।

শেকড়কে ভুলে গিয়ে
সব কিছু খোয়ালি
অবশেষে মিছিমিছি
আধুনিক সাজালি।
 
. .
It is a shame. Hindus are leaving their own culture while some islamic name mushrik recreating their forefather heritage. Well Muslim can retaliate against this agression anytime.

Now I believe that there were a lot hindus from bangladesh and west bengal in that rally.

Shut it man, stay put in your pit and don't poke your nose in our affairs.
 
.
Not us though. We placed him high and consider him hero. I guess this is the difference between US and YOU. :azn:

yes we despise army of the rapists and those who kill on the name of religon and you call them heroes... Definitely there is difference between US and YOU and also in subhumans and humans
 
.
yes we despise army of the rapists and those who kill on the name of religon and you call them heroes... Definitely there is difference between US and YOU and also in subhumans and humans

I am sorry but if I am not wrong then I think Hanuman was not a Human althugh some people warship him. Hmmmmmm. :coffee:

Have you thought of giving up Taj Mahal, Lal Qilla and all the other stuff made by the accused sub human like us? :what:
 
. . .
I am sorry but if I am not wrong then I think Hanuman was not a Human althugh some people warship him. Hmmmmmm. :coffee:

we also worship plants and he was a living being and may be off a lost specie. At the same time he is considered avatar. we seek presence of god in almost everything. i can even pray looking in the mirror to myself.... so whats your point?
Have you thought of giving up Taj Mahal, Lal Qilla and all the other stuff made by the accused sub human like us? :what:

Just because some people made taj mahal does not make them free from the accusation of crimes they had done. since the mentioned buildings are in India we have the ful rights to endorse them including muslims of India

At the same time none of those rapist brigade and sadist religious slaughter house masters. are heroes for indian muslims
 
.
Shut it man, stay put in your pit and don't poke your nose in our affairs.

Forgive this man.

He is a Razakaar who has taken asylum, after bolting hotfoot to Bangladesh and now feels that Bengalis of Bangladesh should speak his language and his theological strain since he is turning out to be the odd man Jack and feeling immensely lonely and left out!
 
.
I am sorry but if I am not wrong then I think Hanuman was not a Human althugh some people warship him. Hmmmmmm. :coffee:

Have you thought of giving up Taj Mahal, Lal Qilla and all the other stuff made by the accused sub human like us? :what:

One must understand symbolism.

One cannot pray into vacuum.

That is why even in iconoclastic religions, there are symbols to focus veneration.

Like the statues of Jesus and Virgin Mary or praying at the Kaaba. Or going to the Church, mosque, gurudwara and temple, when one can pray anywhere to achieve the spiritual satisfaction.

One has to understand the deeper meaning behind the symbolisms and but then it is not everyone's forte to understand that since it require a educated mind. Thus, those who are not equipped talk like the common man in the street, who lacks the intellect to comprehend.
 
. .
Well, it's bit shameful but we hardly celebrate it like they do in Dhaka. Mostly people will have a special dinner in restaurants and nightclubs will play Bengali songs for a change.

Anyways here's some pictures.

Kolkata resturant celebrates Bengali New Year | Facebook

BCCI celebrates Poila Baisakh | Facebook

I was expecting this kind of reply and it shows the reality on the other side of the border. Now, I hope Al-Zakir will feel free to call Boishakhi festivals celebrated in Bangladesh as our own culture and not borrowed from or diluted that much by the Hindu culture, custom or habits.

Cheers for Al-Zakir, please make some positive comments about all these festivals which have Bangladeshi roots. Ask your grandmother not to utter wastagferulla by seeing some of these in the TV. These have nothing to do with SHIRK, then why wastagferulla? Stone headed Al-Zakir seems to be still young. So, I ask him not to take offence at something that he cannot control. It will make him a patient of blood pressure.
 
. .

Latest posts

Pakistan Defence Latest Posts

Back
Top Bottom