Only a selfish Indian dadababu can project a terrorist who killed British woman and children in a terrorist attack a freedom fighter.Khudiram was a terrorist who have blood in his hand of innocent woman and children and he was working against muslims.
০৮
চেপে রাখা ইতিহাস- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আজ ২৫শে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। আজ থেকে ১৫০ বছর পূর্বে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কবিগুরুর জন্ম এবং মৃত্যু দিন বাঙ্গালীরা ঘটা করে পালন করে আসছেন। তাই আজকের এইদিনে কবিগুরুর কিছু চাপা পড়া ইতিহাস নিয়ে আমার এই সংকলিত প্রবন্ধ।
আজকের বাংলাদেশ তথা পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মীয়,সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জাগরণের মূল উৎস হচ্ছে প্রতিবেশী বর্ণহিন্দুদের প্রবল আন্দোলনে পূর্ববাংলা ও আসামকে নিয়ে নতুন করে সৃষ্টি প্রদেশকে বাতিল করার সময় থেকে। যা ইতিহাসে বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।
বিহার বাংলা এবং আসাম নিয়ে বঙ্গ প্রভিন্স ছিল। যা ছিল আয়তে বিশাল, ব্রিটিশদের জন্য প্রশাসনিক কার্যে নজরদারী করা বেশ কঠিন ছিল। তাছাড়া পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল মুসলিম এবং তাঁদের জীবন যাপন ছিল ছিল অত্যন্ত মানবেতর। যদিও পূর্ববাংলা ছিল সমস্ত বাংলার কাচা মালের উৎস ভূমি কিন্তু এই সব মানুষদের উন্নতির জন্য কেউ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পূর্ব বাংলার সম্পদ দিয়ে বছরের পর বছর পশ্চিম বাংলার মানুষের উন্নতি ঘটলে পূর্ব বাংলার মানুষের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
ব্রিটিশরা তাঁদের প্রশাসনের সুবিধা এবং মানবেতর জীবন যাপনকারী পূর্ব বাংলার মানুষের উন্নতির জন্য বৃহৎ বাংলাকে ভাগ করেছিল। আর এই মহৎ কাজটি করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন। পূর্ব বাংলার মুসলিমগণ এই নতুন সৃষ্ট প্রদেশ হবার ফলে কিছুটা অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং উন্নতির মুখ দেখে ছিল।
এই নতুন প্রদেশ সৃষ্টির ফলে বর্ণহিন্দুদের যুগ যুগ ধরে ভোগ করে আসা কায়েমি স্বার্থে আঘাত করে তখন বর্ণ হিন্দুরা বঙ্গ মাতার অঙ্গচ্ছেদ অজুহাত খাঁড়া করে নতুন প্রদেশকে বাতিল করতে রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নতুন প্রদেশ বাতিলের জন্য রসুনের শিকড়ের মত হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা এক হয়ে যান। সেই সময় ভারতীয় কংগ্রেস শুরু করে স্বদেশী আন্দোলন। কংগ্রেসি নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক হিন্দু জাতীয়তাবাদের জনক শিবাজীকে সীমাহীন ভাবে মহৎ বীর নায়ক বানানোর পিছনে ছিল সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের প্রাচীর গড়ে তোলার আয়োজন। শিবাজী ভারতের সকল হিন্দুর জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯০৪ সালে তিনি শিবাজী উৎসব চালু করেন। এর আগে তিনি ১৮৯৩ সালে পুনায় প্রতিষ্ঠা করেন “গো-রক্ষিণী সভা” আর এই সব আয়োজনের মাধ্যমে হিন্দু মুসলিমের মধ্যে তৈরি করেন সাম্প্রদায়িক হানাহানি। ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৭ সালে এর জন্য তিলককে গ্রেফতার করেন। তখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের সাম্প্রদায়িকতার জনক তিলককে মুক্ত করতে রাস্তায় নেমে পড়েন। তিনি মুক্ত করার জন্য টাকা সংগ্রহের জন্য দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে দ্বিধা-বোধ করেনি। শুধু অর্থ ভিক্ষা করে ক্ষান্ত হননি তিনি তিলকের আবিষ্কৃত শিবাজীর প্রদর্শিত পথে ভারতের হিন্দুদের মুক্তি দেখতে পেয়েছিলেন বলে তিনিও শিবাজী বন্দনায় মেতে উঠেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিবাজী উৎসব' কবিতা লিখে এ আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন। তিনি লিখলেন:
সেদিন শুনিনি কথা
আজি মোরা তোমার আদেশ
শির পাতি লব,
কণ্ঠে কণ্ঠে বক্ষে বক্ষে
ভারতে মিলিবে সর্বশেষ ধ্যান-মন্ত্র তব।
ধ্বজা ধরি উড়াইব বৈরাগীর উত্তরী বসন
দরিদ্রের বল,
এক ধর্ম রাজ্য হবে এ ভারতে
এ মহাবচন করব সম্বল।
মারাঠির সাথে আজি হে বাঙ্গালী
এক কণ্ঠে বল ‘জয়তু শিবাজী।
মারাঠির সাথে আজি হে বাঙ্গালী,
এক কণ্ঠে বল ‘জয়তু শিবাজী’
মারাঠির সাথে আজি হে বাঙ্গালি,
এক সঙ্গে চলো মহোৎসবে সাজি।
আজি এক সভা তলে
ভারতের পশ্চিম পুরব দক্ষিণ ও বামে
একত্রে করুক ভোগ এক সাথে একটি গৌরব
এক পুণ্য নামে।—
‘শিবাজী-উৎসব’ নামক কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতে চেয়েছেন যে,শিবাজী চেয়েছিলেন হিন্দুত্বের ভিত্তিতে ভারতজুড়ে এক ধর্ম রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু বাঙালিরা সেটা বোঝেনি। না বুঝে করেছে ভুল। এই কবিতা আর তিলকের সাম্প্রদায়ীক আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের মত ব্যক্তিত্ব শরীক হয়ে কবির কবিতা দিয়ে যে শিবাজী-ভক্ত সৃষ্টি করে ছিলেন তাতে লাভের লাভ হয়েছিল এই যে, গো-খাদক মুসলিমদের প্রতি হিন্দুরা বিদ্বেষী হয়ে পড়ে। কারন মুসলিমরা গরু খায় অথচ গরু তাঁদের উপাস্য। তাই গরু হত্যা করা মহা অপমান। তাই শুরু হয় হিন্দু মুসলিমের মধ্যে গরু রক্ষা নিয়ে মারা মারি। অথচ মুসলিমরা যতটুকু গো মাংস খায় তার চেয়ে বেশি ইংরেজরা খায় কিন্তু তার জন্য তাঁরা ইংরেজদের সাথে মারামারি হানাহানি করেনা বা বিবাদ বিদ্বেষ পোষণ করে না।
কাজী নজরুল মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েও যে ভাবে শেষ বয়সে মা আনন্দময়ীর গান রচনা করে হিন্দু মুসলিমের মধ্যে একটি মিলন আনার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বিশ্ব কবির সমগ্র সাহিত্যের ভাণ্ডারে হাজার বার ‘আনন্দময়ী মা’র আগমন হলেও সে আকাশে একটি বার ঈদের চাঁদ কিংবা মোহররমের চাঁদ উঠেনি।
রবীন্দ্রনাথ তার বিচার, মাসী, বন্দীবীর, হোলীখেলা কবিতায় এবং সমস্যা, পুরাণ, দুরাশা ও কাবুলিওয়ালা গল্পে যে ভাবে মুসলিমদের চিত্র উপস্থাপন করেছেন তা পড়েও প্রাথমিক দিকে রবীন্দ্রনাথ মুসলিমদের প্রতি কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন তাও অনুমান করা যাবে।
প্রাথমিক দিকে রবীন্দ্রনাথের কেমন ছিল মুসলিমদের প্রতি ভালবাসা তার ‘রীতিমত নভেল’ নামক ছোটগল্পে পড়লে জানতে পারা যাবে।
“আল্লাহো আকবর শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছে। একদিকে তিন লক্ষ যবন সেনা অন্য দিকে তিন সহস্র আর্য সৈন্য। … পাঠক, বলিতে পার … কাহার বজ্রমন্ত্রিত ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ কণ্ঠের ‘আল্লাহো আকবর’ ধ্বনি নিমগ্ন হয়ে গেলো। ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র।”
শুধু তাই নয় -‘দুরাশা’ গল্পের কাহিনীটি আরো স্পর্শকাতর। এখানে দেখানো হয়েছে, একজন মুসলিম নারীর হিন্দু ধর্ম তথা ব্রাহ্মণদের প্রতি কি দুর্নিবার আকর্ষণ এবং এই মুসলিম নারীর ব্রাহ্মণ হবার প্রাণান্তকর কোশেশের চিত্র।
সবেধন নীলমণি রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনে যখন নিজ হাতে লিখতে পারতেন না তখন শ্রুতি লিখন করে যে মুসলমানির গল্পটি তিনি লিখিয়েছিলেন সেই গল্পের নায়ক হবি খাঁর এই উদারতার কারণ হিসাবে হবি খাঁ'র মা যে হিন্দু অভিজাত রাজপুতিনী ছিলেন তা উল্লেখ করে গেছেন। তাই প্রমাণিত হয় যে মুসলিম একক ভাবে মহৎ হতে পারেনা।
মুসলমান সমাজের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় ‘কণ্ঠরোধ’ (ভারতী, বৈশাখ-১৩০৫) নামক প্রবন্ধে। সিডিশন বিল পাস হওয়ার পূর্বদিনে কলকাতা টাউন হলে এই প্রবন্ধটি তিনি পাঠ করেন। এই প্রবন্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী যবন, ম্লেচ্ছ রবীন্দ্রনাথ একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে বলেন-
“কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্র খন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে- উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষরূপে ইংরেজদেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে- ইটটি মারিলেই পাটকেলটি খাইতে হয়; কিন্তু মূঢ়গণ (মুসলমান) ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল। অপরাধ করিল, দণ্ড পাইল; কিন্তু ব্যাপারটি কি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট বুঝা গেল না। এই নিম্নশ্রেণীর মুসলমানগণ সংবাদপত্র পড়েও না, সংবাদপত্রে লেখেও না। একটা ছোট বড়ো কাণ্ড – হইয়া গেল অথচ এই মূঢ় (মুসলমান) নির্বাক প্রজা সম্প্রদায়ের মনের কথা কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই সাধারণের নিকট তাহার একটা অযথা এবং কৃত্রিম গৌরব জন্মিল। কৌতূহলী কল্পনা হ্যারিসন রোডের প্রান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া তুরস্কের অর্ধচন্দ্র শিখরী রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সম্ভব ও অসম্ভব অনুমানকে শাখা পল্লবায়িত করিয়া চলিল। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই আতঙ্ক চকিত ইংরেজি কাগজ কেহ বলিল, ইহা কংগ্রেসের সহিত যোগবদ্ধ রাষ্ট্র বিপ্লবের সূচনা; কেহ বলিল মুসলমানদের বস্তিগুলো একেবারে উড়াইয়া পুড়াইয়া দেয়া যাক, কেহ বলিল এমন নিদারুণ বিপৎপাতের সময় তুহিনাবৃত শৈলশিখরের উপর বড়লাট সাহেবের এতটা সুশীতল হইয়া বসিয়া থাকা উচিত হয় না।”
এই প্রবন্ধে উল্লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি শব্দ প্রয়োগ লক্ষ্য করলে মুসলমান সমাজের প্রতি রবীন্দ্রনাথের উগ্র সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির একটা সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়।
বলা প্রয়োজন যে, রবীন্দ্রনাথের পরিবারের জমিদারী ছিল পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া, শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর, রাজশাহী প্রভৃতি অঞ্চলে। আর এইসব অঞ্চল ছিল মুসলিম প্রধান। এই উন্নাসিক মানসিকতা ও বক্তব্য তার জমিদারীতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিমদের প্রতি উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী যবন, ম্লেচ্ছ রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির একটা উজ্জ্বল উদাহরণ।
‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকে প্রতাপাদিত্যের উক্তি- খুন করাটা যেখানে ধর্ম, সেখানে না করাটাই পাপ। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মুসলিম বিদ্বেষ এবং বিরোধিতার অবস্থান চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়। এখানেও তিনি সাম্প্রদায়িক ভূমিকায় অবতীর্ণ। তার নাটকের এই বক্তব্য হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটায় এবং হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভূমি তৈরি করে দেয়। তাই ঐতিহাসিকভাবে বলা হয়- বিশ শতকের প্রথম দশক থেকে শুরু হওয়া হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার দায়ভার রবীন্দ্রনাথ কোনো ক্রমেই এড়াতে পারেন না।
মুসলিম জননেতা সৈয়দ নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের মুসলিম বিদ্বেষমূলক লেখনী বন্ধ করার আহবান জানালে রবীন্দ্রনাথ জবাবে বললেন-
"মুসলমান বিদ্বেষ বলিয়া আমরা আমাদের জাতীয় সাহিত্য বিসর্জন দিতে পারি না। মুসলমানদের উচিত তাহারা নিজেদের সাহিত্য নিজেরাই সৃষ্টি করার।…." (এখানে লক্ষ্য করুন যে কবিকে আমরা আমাদের কবি বলে গর্ব করি এবং তাঁর সংকলিত গান আমার সোনার বাংলাকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দিয়েছি সেই কবি কিন্তু এই পূর্ববাংলার মানুষকে কখনও বাঙ্গালী বলে স্বীকার করে নাই। আমাদেরকে মুসলিম বলেই চিহ্নিত করে গেছেন)
১৯০৫ সালের ২০ জুলাই নতুন প্রদেশ ঘোষণা দেয়া হয়। কার্যক্রম শুরু হয় ১৬ অক্টোবর থেকে। এ সময় বাংলাদেশে আমাদের প্রতিবেশী সমাজ সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের জন্ম দেয়। রবীন্দ্রনাথ এই সময় বঙ্গ মাতার অঙ্গচ্ছেদের দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে গগন হরকরা নামক এক বাউলের করুন বিয়োগাত্মক সুরে রচিত “আমার মনের মানুষ যে রে কোথায় পাব তারে” গীতকে নকল করে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি" গানটি রচনা করেন, এবং তখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত সঙ্গীত হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
বঙ্গভঙ্গ রোধের জন্য ১৯০৮ সালের ৩০ মে তারিখে কলিকাতার যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদকীয়তে সন্ত্রাসী আন্দোলন শুরুর জন্য আহবান জানানো হয়েছিল এভাবে-
মা জননী পিপাসার্ত হয়ে নিজ সন্তানদের জিজ্ঞাসা করছেন ‘রক্ত দে।' একমাত্র মানুষের রক্ত ও মস্তক ছাড়া মা-জননীর পিপাসা নির্বৃত্ত হবে না। (দেখুন: বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-৩৪, আব্বাস আলী খান)
১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও রাণী ভারতে আসেন। তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয়। সে উপলক্ষে ব্রিটিশ সম্রাটকে তেল মেরে রবীন্দ্রনাথ লিখেন-
জনগণ মন অধিনায়ক, জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে
গাহে তব জয় গাঁথা।
জন গণ মঙ্গল দায়ক জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা।
ব্রিটিশের প্রতি ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের আনুগত্য দেখে সম্রাট দিল্লীর দরবারেই বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল করার ঘোষণা দেন। মুসলমানরা ঘৃণাভরে সরকারের বিশ্বাস ভঙ্গের প্রতিবাদ জানায়। বঙ্গভঙ্গ রদের মধ্য দিয়েই সেদিন জন্ম নিয়েছে ভারত ভাগের ভ্রূণ এবং আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের ভ্রূণ।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রাচীন ভারতের বৈদিক ঋষি মন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি ভারতকে প্রাচীন আর্য ঋষিদের তপোবন হিসেবে ফিরিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতনকে তাই প্রাচীন ভারতের ঋষিদের তপোবনের আদলে গড়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্র নাথের মহাভারতের কল্পনা ছিল এরূপ:
হেথায় আর্য, হেথায় অনার্য
হেথায় দ্রাবিড় চীন
শকহুনদল মোঘল পাঠান
একদেহে হলো লীন।…
আমাদের দেশের একশ্রেণীর সেক্যুলার প্রগতিশীল ভাবুক বুদ্ধিজীবী সংস্কৃত সেবী রয়েছেন, যারা সেক্যুলারিজমের আড়ালে রবীন্দ্রচর্চা করার কাজে ব্যস্ত। তাদের উদ্দেশ্য কিংবা মিশন হচ্ছে এ দেশের সংখ্যাগুরুর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বদলে ফেলে সেখানে কলকাতার বাবু সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা। তাদের ভাবভঙ্গিতে মনে হয় এ দেশকে ব্রাহ্মণ্যবাদী সাংস্কৃতিক বলয়ের আওতায় নিয়ে যাওয়াই তাদের একমাত্র দায়িত্ব। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকেন, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন আমাদের জাতীয় মানসের আরাধ্য দেবতা। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সকল কাজের প্রেরণার উৎস। এদের অনেকে রবীন্দ্রনাথকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রেরণা শক্তি হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন। জানতে ইচ্ছা করে রবীন্দ্রনাথ কি কোনদিন বিশাল ভারতের মধ্যে স্রেফ বাঙালীদের জন্য পৃথক কোন রাষ্ট্র চেয়েছেন? রবীন্দ্রনাথ কি কোনদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চেয়েছেন? তিনি তো ভাষার প্রশ্নে আগাগোড়াই হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে সাংবাদিক-সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। আবুল মনসুর আহমদের রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট অভিমত ছিল তা হচ্ছে:
..মেজরিটি মানুষের সাথে নাড়ির যোগ না থাকিলে কেউ জাতীয় কবি হইতে পারেন না। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি হইয়াও বাংলার জাতীয় কবি নন। তিনি বাংলা জাতীয় কবি নন এই সহজ কারণে যে, বাংলায় কোন জাতি নাই। আছে শুধু হিন্দু-মুসলমান দুইটি সম্প্রদায়। তিনি বাংলার কৃষ্টিরও প্রতীক নন, এই সহজ কারণ যে, এখানে কোন জাতীয় কৃষ্টিই নাই। এখানে আছে দুইটি কৃষ্টি। একটা বাঙালী হিন্দু কৃষ্টি, অপরটি বাঙালী মুসলিম কৃষ্টি। ….(বিস্তারিত দেখুন : বাংলাদেশের কালচার)
১৯০৫ সালে নতুন প্রদেশ পূর্ব বাংলাকে বাতিল করতে ব্রিটিশ সরকারকে বাধ্য করতে যতো পথ অবলম্বন করা প্রয়োজন তখন বর্ণ হিন্দুরা করেছে। বাংলায় জ্বালায় পুড়াও হত্যা, ধ্বংস করার মত সন্ত্রাসী আন্দোলনের জন্মও তারাই তখন দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ঐ বর্ণহিন্দুরা বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে হিন্দুস্থানে যোগদান করেছিল স্রেফ মনস্তাত্ত্বিক কারণে, জাত্যাভিমানে, ম্লেচ্ছ মুসলমানদের ছোঁয়া থেকে বাঁচবার জন্য। দুঃখের বিষয়, আমাদের এই সময়ে এক শ্রেণীর সাহিত্যিক-সাংবাদিক বিভিন্ন সভা সেমিনার বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, রেডিও টিভিতে আকারে ইঙ্গিতে এটাই বুঝতে চেষ্টা করে থাকেন যে, সীমানার অস্তিত্বের চেয়ে সাংস্কৃতিক ঐক্যই মূখ্য।
আগেই উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, রবীন্দ্রনাথের পরিবারের জমিদারী ছিল পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া, শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর, রাজশাহী প্রভৃতি অঞ্চলে। আর এইসব অঞ্চল ছিল মুসলিম প্রধান। মুসলিমরা চিরকাল চাষাভূষা থাকুক এই চিন্তা ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ তার বিশাল জমিদারীতে একটি পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন কোন প্রমাণ নেই।