জুতা উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ
বদরুল আলম | ২৩:১১:০০ মিনিট, অক্টোবর ২১, ২০১৬
5
জুতা উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক জুতার বাজার প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলারের। বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি জোড়া জুতা উৎপাদন করে এ বাজারের শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। তবে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। গত জুনে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার ইয়ারবুক ২০১৬-এর তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ কোটি জোড়ার বেশি জুতা উৎপাদন করে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার অষ্টম স্থানে।
পর্তুগালভিত্তিক জুতা প্রস্তুতকারকদের সংগঠন পর্তুগিজ ফুটওয়্যার, কম্পোনেন্টস, লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এপিআইসিসিএপিএস)। ফুটওয়্যার শিল্পে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর উৎপাদন, ব্যবহার ও আমদানি-রফতানির তথ্য সংগ্রহের পর তা বিশ্লেষণ করে থাকে সংগঠনটি। এর ভিত্তিতে বৈশ্বিক ফুটওয়্যার শিল্পের গতিবিধির একটা ধারণা দেয় তারা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিচারে ফুটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে এপিআইসিসিএপিএস।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বিশ্বব্যাপী জুতা উৎপাদনের হিসাব দেখিয়েছে এপিআইসিসিএপিএস। ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার ইয়ারবুক ২০১৬ ও এপিআইসিসিএপিএসের তথ্য বলছে, শুধু ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাপী জুতা উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি জোড়া। ওই বছর চীন জুতা উৎপাদন করেছে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ১০ লাখ জোড়া। শীর্ষ দশের অষ্টম স্থানে থাকা বাংলাদেশ আলোচ্য বছরে জুতা উৎপাদন করেছে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ জোড়া।
সম্ভাবনার বিচারে ফুটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, চীনের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে এসেছে। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে দেশটিকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। এটি ত্বরান্বিত হবে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর হলে।
কারণ সামাজিক দায়বদ্ধতার বিচারে বাংলাদেশের উন্নতি হলেও পরিবেশগত দায়বদ্ধতায় দেশ এখনো পিছিয়ে আছে। আর বৈশ্বিক বাজার বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আরো অনেক দেশ রয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হলে শিল্পটিকে আরো টেকসই রূপ দিতে হবে।
এপিআইসিসিএপিএসের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে জুতা উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৩ সালে দেশে জুতা উৎপাদন হয়েছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ জোড়া। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ কোটি ৫০ লাখ জোড়ায়। ২০১৫ সালে তা ৩৫ কোটি জোড়া ছাড়িয়ে যায়। এ হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের জুতা উৎপাদন বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।
জুতা উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। ২০১৫ সালে দেশটি জুতা উৎপাদন করে ২২০ কোটি জোড়া। তৃতীয় থেকে সপ্তম অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো যথাক্রমে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান ও তুরস্ক। জুতা উৎপাদনে বাংলাদেশের নিচে নবম ও দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো ও থাইল্যান্ড।
জুতা উৎপাদনে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে থাকলেও তালিকায় শীর্ষ সাতটি দেশের জুতা উৎপাদন অনেক বেশি। তৃতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনাম ২০১৫ সালে জুতা উৎপাদন করে ১১৪ কোটি জোড়া। একই বছর ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদন হয় ১০০ কোটি জোড়া জুতা। আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা ব্রাজিল আলোচ্য বছরে জুতা উৎপাদন করে ৮৭ কোটি জোড়া।
ফুটওয়্যার শিল্পে স্থানীয় ও রফতানি দুই বাজারেই নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে বড় করপোরেটরাও নতুন নতুন ব্র্যান্ড নিয়ে আসছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সক্ষমতা শ্রমিকের মজুরি। কিন্তু পরিবেশ ও কারখানার কর্মপরিবেশের মানদণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবধারার পরিবর্তনে শুধু কম মূল্য দিয়ে ক্রয়াদেশ বাড়াতে পারছেন রফতানিকারকরা। পরিবেশ ও কারখানার কর্মপরিবেশের মান ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনের বিচারে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে থাকলেও রফতানিকারক হিসেবে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এপিআইসিসিএপিএসের হিসাবে, চামড়াজাত জুতা রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম। এ ধরনের জুতার রফতানি বাজারে বাংলাদেশের দখল মাত্র ১ শতাংশ। রফতানি বাজার প্রসারে বাংলাদেশের মূল প্রতিবন্ধকতা পরিবেশগত ও কর্মপরিবেশের মানদণ্ড।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল মোমেন ভূইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলে পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। আর কর্মপরিবেশের উন্নয়নে এরই মধ্যে অনেকটাই এগিয়েছি আমরা। ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের চাপে মালিকদের ব্যয় বাড়লেও ধীরে ধীরে এ দিকটিতে উন্নয়ন হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার সফল মোকাবেলার মধ্য দিয়ে জুতা উৎপাদনের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি রফতানিতেও আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
এপিআইসিসিএপিএসের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনের মতো রফতানিতেও ফুটওয়্যার শিল্পে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে চীন। রফতানি বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি রয়েছে চীনের দখলে। শুধু চামড়াজাত জুতায় চীনের বাজার দখল ২০ শতাংশের বেশি। রফতানির বিচারে চীনের পরই রয়েছে ভিয়েতনাম। জুতা রফতানিতে শীর্ষ ১৫টি দেশের মধ্যে পরের স্থানগুলোয় রয়েছে যথাক্রমে ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ভারত, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, কম্বোডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
http://bonikbarta.com/news/2016-10-21/91737/জুতা-উৎপাদনে-শীর্ষ-দশে-বাংলাদেশ--/