ডালমিয়ার এক ধমকেই বাংলাদেশে ধোনি-কোহলি
20 May, 2015
জগমোহন ডালমিয়ার এক ধমকেই সুড় সুড় করে বাংলাদেশ সফরে যেতে রাজি হয়ে গেলেন এম এস ধোনি বা বিরাট কোহলির মতো ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকারা। প্রায় গত এক বছর ধরে টানা ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্লান্ত ধোনি-কোহলিরা চেয়েছিলেন জুনের গরমে বাংলাদেশ সফর থেকে নিস্তার পেতে, কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন প্রধান তাদের সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কোনও ছুটি মিলবে না, যতই সিনিয়র হও বা ক্লান্ত থাক – বাংলাদেশে যেতে হবেই।
আর তার কারণটাও খুব সহজ। ডালমিয়া ঘনিষ্ঠ মহলে বলেই দিয়েছেন, ওয়ান-ডে আর টোয়েন্টি টোয়েন্টি সিরিজে তরুণ বাংলাদেশ দল পাকিস্তানকে যেভাবে নাকানিচোবানি খাইয়েছে তাতে ভারতের পক্ষে কোনও ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে প্রথম সিরিজেই ভারতকে যাতে পাকিস্তানের মতো অপদস্থ হতে না-হয়, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব’, তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের ক্রিকেট নির্বাচকদের – বাংলাদেশ সফরের জন্য যারা বুধবার মুম্বইতে দল বাছতে বসেছিলেন।
অগত্যা ভারতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে শেষপর্যন্ত পূর্ণ শক্তির দলই পাঠাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। মুম্বইতে আজ ওই সফরের জন্য দল নির্বাচনের পর জানানো হয়েছে, সফরের ওয়ান-ডে ম্যাচগুলোতে এম এস ধোনি এবং একমাত্র টেস্টে বিরাট কোহলিই ভারতের নেতৃত্ব দেবেন – যে দুজনেই এই সফরের জন্য বিশ্রাম চেয়েছিলেন। তাছাড়া বহুদিন পর টেস্ট দলে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ অফ স্পিনার হরভজন সিংকেও – কিন্তু নির্বাচকরা জানিয়েছেন, অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের নাম বিবেচনাই করা হয়নি।
আসলে এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল যতবার বাংলাদেশ সফরে গেছে – প্রায় প্রতিবারই সিনিয়রদের কয়েকজনকে বিশ্রাম দিয়ে অনভিজ্ঞ তরুণদের ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বিসিসিআই বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সেটা কখনও সচীন তেন্ডুলকার, কখনও রাহুল দ্রাবিড় –আবার কখনও বা জাহির খান, ধোনি। ফলে বীরেন্দ্র সেহওয়াগ বা সুরেশ রায়নাদের বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে বার বার। এমনকি গত বছরের বাংলাদেশ সফরেও ছুটি মিলেছিল ধোনি-কোহলি-রোহিত শর্মাদের, কিন্তু এবারে ছুটি বাতিল করে তাদেরও উঠতে হচ্ছে ঢাকাগামী বিমানে।
ধোনির ছুটি চাওয়ার পেছনে ক্লান্তিটা বড় কারণ হলেও বোর্ড কর্তারা তাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেন, টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর শুধু ওয়ান-ডে দলেই আছেন তিনি – ফলে সেখানে ক্লান্তির অজুহাত দেওয়া মানায় না। তাছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে এন শ্রীনিবাসনের জমানা গিয়ে ডালমিয়া-যুগ শুরু হওয়ার পর ধোনিরও ছড়ি ঘোরানোর দিন ফুরিয়েছে –ফলে বাংলাদেশ যাওয়া নিয়ে তিনি আর একেবারেই ট্যাঁ-ফু করতে পারেননি।
অনেকটা একইরকমভাবে বিরাট কোহলিও নিমরাজি হয়েই ঢাকাতে যাচ্ছেন। মি. ডালমিয়ার বার্তা তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন নির্বাচকরা – ভারতের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেন যদি দায়িত্ব পাওয়ার পর তার দ্বিতীয় টেস্টেই বিশ্রাম নিতে চায় তাহলে সেটা খুব ভাল সংকেত দেবে না। তাছাড়া সম্প্রতি আইপিএলের ম্যাচ ব্রেকে বান্ধবী আনুশকা শর্মার সঙ্গে দেখা করে আইসিসি-র নিয়ম ভেঙেছেন – আর তার জন্য একই বোর্ডের তোপের মুখে আছেন তিনি, ফলে তিনিও আর বিদ্রোহ করার সাহস দেখাননি। ফলে সুড়সুড় করে কোহলিও আজ মুম্বইতে এসেছিলেন টেস্টের দল নির্বাচনের বৈঠকে যোগ দিতে।
জুন মাসের ৭ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত হবে ভারতের আসন্ন বাংলাদেশ সফর। বোর্ডের সচিব অনুরাগ ঠাকুর আজ মুম্বইতে প্রথমে ওয়ান-ডে সিরিজের জন্য ১৫ সদস্যের যে স্কোয়াড ঘোষণা করেন তাতে প্রথমেই ছিল ক্যাপ্টেন এম এস ধোনির নাম। আঘাতের জন্য শুধু দলের বাইরে থাকছেন মহম্মদ শামি, যার সেরে উঠতে আরও অন্তত সপ্তাহ চারেক লাগবে। তার জায়গায় আসছেন ধবল কুলকার্নি, তাছাড়া মোটামুটি বিশ্বকাপের টিমই অবিকৃত রাখছে ভারত। মি. ঠাকুর আরও জানান, সফরের টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিই।
টেস্ট স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় চমক ছিল পঁয়ত্রিশ ছুঁই-ছুঁই অভিজ্ঞ অফ স্পিনার হরভজন সিংয়ের অন্তর্ভুক্তি। প্রায় সোয়া দুবছর হতে চলল ভারতের হয়ে শেষবার টেস্ট খেলেছেন হরভজন, কিন্তু চলতি মৌসুমে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে আইপিএলে ব্যাট আর বল হাতে তার পারফরম্যান্স ছিল তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। ভারতের ক্রিকেট নির্বাচক কমিটির প্রধান সন্দীপ পাটিল অবশ্য জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দল আর সেখানকার কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই হরভজনকে দলে নেওয়া হয়েছে।
পাটিল জানান, ‘মূলত বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের গভীরতার কথা মাথাই রেখেই আমরা হরভজনকে স্কোয়াডে নিয়েছি। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে এতজন শক্তিশালী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে বলেই নির্বাচকরা মনে করেছেন, আমাদের একজন দ্বিতীয় অফ স্পিনার প্রয়োজন হবে। বিষয়টা নিয়ে নির্বাচকরা ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির সঙ্গেও সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। তবে যুবরাজ সিংয়ের নাম আমাদের আলোচনাতেই আসেনি।’
বাংলাদেশকে যে হালকাভাবে নিলে তার ফল ভুগতে হবে, পাকিস্তানি তারকা ওয়াসিম আক্রামও সে ব্যাপারে ভারেতকে আগেই সতর্ক করে দেন। আক্রাম একটি ভারতীয় চ্যানেলকে এ সপ্তাহেই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যে খুব বিপজ্জনক দল, সম্প্রতি পাকিস্তানকে ওয়ান-ডে আর টোয়েন্টি টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েই তারা সেই প্রমাণ দিয়েছে। গত বছরও নিউজিল্যান্ডকে তারা দেশের মাটিতে ৫-০তে হারিয়েছে। টিমটা খুব সাঙ্ঘাতিক, দলে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে – যাদের আমি ‘পকেট রকেট’ বা ক্ষুদে বিচ্ছু বলতে পারি। ফলে ভারত যদি তরুণদের পাঠায় তাহলে কিন্তু সিরিজটা তাদের জন্য ভীষণ টাফ হয়ে যাবে!’
আড়াই সপ্তাহের বাংলাদেশ সফরে জুনের ১০ তারিখে ফতুল্লায় স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে ভারত। তারপর ১৮, ২১ আর ২৪ জুন মিরপুরে পরপর তিনটি ওয়ান-ডে ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও বাংলাদেশ। সফরের এই প্রতিটা ম্যাচেই যে পুরো শক্তির ভারতীয় দলকে খেলতে দেখা যাবে, সেটা নির্বাচকরা আজই নিশ্চিত করে রাখলেন।
কিন্তু এই পুরো গল্পের ‘বটমলাইন’ একটাই – বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আর দুর্বল বলে তাচ্ছিল্য করার সাহস দেখাতে পারছে না ভারত।
উৎসঃ
বাংলা ট্রিবিউন
@bongbang @Khalid Newazi @ others
seems we are going to see a war of titan