আবুল মালের কাছে হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা বড় না হলেও জনগণের এক লক্ষ টাকা বড়
ব্যাংক ডাকাতি
- ৯ জুন ২০১৭
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : : ব্যাংকিং সেক্টরে একের পর এক দুর্নীতি ডাকাতি লুটপাট চললেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আবুল মাল। ব্যাংকিং সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশের ব্যাংক ডাকাত সিন্ডিকেটে এবং ব্যাংক ডাকাতদের গডফাদার সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমর্থন রয়েছে আবুল মালের ওপর। কারণ ব্যাংক ডাকাত এবং বিদেশে টাকা পাচারকারীদের কাছে আবুল মাল নিরাপদ। শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে গত নয়/দশ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ কোটি টাকা। কোনো ঘটনারই কোনো বিচার হয়নি।
২০১২ সালে প্রথম হলমার্ক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে।
এতে দেখা যায়, ২০১২ সালে হলমার্ক ও তার পাঁচ সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেডসহ মোট ৩ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা আত্মসাত্ করে। তানভীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী জেসমিন সোনালী ব্যাংক থেকে লুট করেন চার হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার ক্ষমতা দখলে পরই কপাল খুলে যায় তানভীর-জেসমিন দম্পতির। শূন্য থেকে যাত্রা করে ২০১২ সাল, একের পর নামকাওয়াস্তে তৈরী করা ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বছর তিনেকের মধ্যেই সোনালী ব্যাংক থেকে তানভীর তুলে নেয় চার হাজার কোটি টাকা। তানভীর-জেসমিন দম্পতির ব্যাংক ডাকাতির কোম্পানি হলমার্ককে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হয় ২০১০-২০১২ সালে। তার লুটপাটের কথা প্রকাশ হয়ে পড়লে শুরু হয় তদন্ত
এতে দেখা যায়, তানভীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা পেতেন শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনার সেই সময়কার স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্ঠা সৈয়দ মোদাসসের আলীর। এর মধ্যে পোশাক শিল্পে ‘বিশেষ অবদানের জন্য’ ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ট্রফি নেন তানভীর মাহমুদ। শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীও হলমার্ক গ্রুপের তানভীর ও জেসমিনকে সোনার মেডেল দিয়ে পর্যন্ত বরণ করেছিলেন।
তবে চার হাজার কোটি টাকা লুটের খবর নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় পৃষপোষকতায় সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটের জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে আগে থেকেই সবকিছু সাজানো ছিল।
শেখ হাসিনা সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ১০ জনকে নিয়োগ দেন। এরা হলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক সাইমুম সরওয়ার কামাল এবং মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরি, মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ মিঞা, মোঃ আনোয়ার শহীদ, এ এস এম নাইম, কে এম জামান রোমেল, সত্যেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত এবং মতিয়া চোধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক নামধারী কাশেম হুমায়ুন। পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক ব্যাংকার কাজী বাহারুল ইসলাম ও পদাধিকারবলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আওয়ামী লীগ -ছাত্রলীগের পরিচালক নামের দুর্বৃত্তরা তানভীরকে ব্যাংকে জনগনের জমানো টাকা অকাতরে বিলিয়েছে। তানভীরের টাকার অংশ শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সৈয়দ মোদাসসের আলী কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ভাগ পেতো। এই কারণে দেখা যায় বাধ্য হয়ে দুদক তানভীর এবং তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করলেও ছেড়ে দিয়েছে শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠা সৈয়দ মোদাস্সের আলী এবং সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদেরকে। তানভীরের স্ত্রী জেসমিনকে গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়।
শুধু তাই নয়, সকল লুটেরাদের বাঁচাতে আবুল মাল ২০১২ সালের মে মাসে বলেছিলেন “চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না” । আবুল মালের কাছে চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না অথচ জনগণ ব্যাংকে এক লক্ষ টাকা জমা রাখলে সেখান থেকে কেন আবগারি শুল্ক নেয়া হবে এ নিয়ে জনমনে খবর সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকিং সেক্টরে আরো বড় বড় কেলেংকারি এখন হলমার্ক কেলেংকারির ঘটনা প্রায় ধামা চাপা পরে যাচ্ছে। চার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী ব্যাংক ডাকাত সিন্ডিকেটের সদস্যদের কারাগারে থাকার পরিবর্তে আরো প্রমোশন হচ্ছে। ব্যাংক ডাকাত সিন্ডিকেটের সদস্য প্রবীর কুমার দত্ত সোনালী ব্যাংকে এখনো আরো প্রভাবশালী। ব্যাংক ডাকাত চক্রের সদস্য সুভাষ সিংহ রায় এখন জয়ের বন্ধু আরাফাতের মতো বুদ্ধিজীবীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন। কাশেম হুমায়ুন যোগ দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকে। এভাবে হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে কিছুদিন আলোচনার পর বিষয়টি বিনা বিচারে ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় অব্যাহত রয়েছে ব্যাংক ডাকাতি এবং টাকা পাচার।
গত ৭ জুন বুধবার সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “হলমার্ক গ্রুপকে ঋণ বিতরণ করা হয়নি, হয়েছে লুণ্ঠন। এ জন্য ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপকে যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার বিপরীতে সমপরিমাণ সম্পদ নেই। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে বর্তমানে ব্যাংকের ২০টি শাখার অবস্থা খুবই নাজুক। এসব শাখার প্রায় ৮৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ”।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংকের কথা এলেই ঘুরেফিরে হলমার্কের কথা উঠে আসে। ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালে পুরো ব্যাংকিং সেক্টর, য়ারবাজার এবং আবাসন খাতে বড় ধস নেমেছে। ব্যাংকিং সেক্টরে একটা সুনামি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্রীয়ভাবেই কাজ করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে।তার মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হলমার্ক গ্রুপের ওপর প্রশাসক বসানো উচিত।
তবে যে যাই বলুক, ব্যাংক থেকে লুটপাট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষপোষকতায় তাই এই ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।আর অর্থমন্ত্রীর কাজ হলো কিভাবে জনগণের টাকা লুট করা সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা।
http://dailybdtimes.com/2017/06/09/আবুল-মালের-কাছে-হলমার্কে/