আমি আমার এক ভাইয়ের কথা বলছি
ভেবেছিলাম লেখালেখি ছেড়ে দেব , অনেক তো হলো
. কি হবে আর এসব ছাইপাশ লিখে ? কেউ পড়ে এসব ?
কিন্তু আজ এমন একটি দিন , অনেক কষ্ট সত্ত্বেও আমাকে লিখতে হচ্ছে , হাত কাঁপছে , চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে
কিন্তু আমি লিখছি ; আমি লিখছি আমার এক ভাইয়ের জন্য ।
আমরা যারা জলপাই পোশাক পড়ে বাংলার আকাশে ডানা মেলি , যারা একইসাথে বড় হই , একইসাথে দু:খে বিষন্ন হই , একইসাথে আনন্দে মাতি
.যাদের প্রত্যয়ে মুক্ত থাকে বাংলার আকাশ
. আমরা যারা বৈমানিক ; পরিবার বহু দূরে ফেলে একসাখে থাকতে থাকতে কেমন যেন এক অদৃশ্য , নামহীন সম্পর্কে জড়িয়ে যাই । কথনো মনে হয় , এই বুঝি আমাদের পরিবার , এই আকাশী পোশাকের লোকগুলো আমাদের ভাই , আমাদের আত্নার আত্নীয় , বড় আপনজন ।
আজ তেমনই এক আপনজন হারাবার বেদনায় লিখছি ।
শাওন ।পোশাকী নাম পাইলট অফিসার শরীফুল
. সদাহাস্যজ্জ্বল , লিকলিকে শুকনো একটা ছেলে । মুখ থেকে এখনও ছেলেমানুষির আদল যায়নি
সামরিক পোশাক পড়লে মাঝে মাঝে মনে হয় কোন কিশোর বুঝি ভুলে বাবার পোশাক পড়ে চলে এসেছে
ভাবতে খুব খুব কষ্ট হচ্ছে, আর কখনো লাজুক ভঙ্গিতে হাসবে না
বলবে না , স্যার , কেমন আছেন ?
জন্ম ১৮ জানুয়ারি , রাইফেলস্ স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্র
. বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বৈমানিক হিসেবে নিবন্ধন ২০০৮ সালে , জুন মাসে
. সাফল্যের সাথে এক এক করে সবগুলো বাধা পার করে কমিশন লাভ ২০১০ সালে
ক্রমে ক্রমে সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করে পিটি -৬ , এরপরে টি-৩৭
.এই সেদিনের কথা ।
এই কথাগুলো এখন স্মৃতি ।
আজ আমার প্রমোশন পরীক্ষা ছিলো
. পরীক্ষার হলেই শুনলাম , একটা এল-৩৯ বিমান ক্রাশ করেছে
ভাবলাম , হয়তো পাইলটদের কিছু হয়নি
.. ভাবতে চাইছিলাম না অন্যকিছু ।
পরীক্ষা শেষে শুনলাম , আমাদের শরিফ আর আমাদের মাঝে নেই । এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় এই দেশ হারাল আর একজন দু:সাহসী বৈমানিককে , আর একজন মা হারাল তার স্নেহের সন্তানকে , আমরা হারালাম আমাদের আর একজন ভাইকে ।
গত সপ্তাহে মেসেজ পাঠিয়েছিল
স্যার নতুন ক্যামেরা কিনেছি , কেমন হয়েছে ?
. গতরাত্রে পরীক্ষার চাপ কাটাতে ওদের কালচারাল প্রোগ্রামের ভিডিও দেখে হাসছিলাম
. আজ
সেই মানুষটা লাশ
আগামীকাল ওর জানাজা ।
ওর সারল্যে ভরা মুখখানি ভুলতে পারছি না কিছুতেই
.. মনে হচ্ছে এখনই ওর ফেসবুক থেকে একটা মেসেজ আসবে , কিছু হয়নি আমার , আমি ভালো আছি
. বিশ্বাস করতে পারছি না , যে ছেলেটার সাথে একসাথে ক্রিকেট খেলেছি সেদিন , সে আজ কফিনে বন্দী
.. বিশ্বাস করতে পারছিনা কিছুতেই ।
শরিফ , তোর পরিবারকে বলার মতো কোন ভাষা আমার নেই
নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছিনা রে
আমরাও তো তোর পরিবারই
. বল , আমি তোর ভাই না ?
যেখানেই থাক , আমি দোয়া করি
. ভালো থাকিস
.. আবার আমাদের দেখা হবে একদিন , আবার আমরা একসাথে উড়ব , দেখিস
. এই আকাশে নয় , অন্য কোথাও , অন্য কোন আকাশে ।
হয়তো একদিন এভাবে আমিও আছড়ে পড়বো কোথাও
আমার জন্যও হয়তো কোথাও কেউ লিখবে
কোথাও কাদবে একপাশ স্বপ্নচারী বৈমানিক
আমি জানি না
. আমি , অথবা আমাদের কেউ ।
যারা লেখাটি পড়ছেন , সবাইকে অনুরোধ করছি
. আমার এই ভাইটির আত্নার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন
. আমাদের তো আর করার মত কিছুই নেই ।
শুধু জানি , শরিফরা মরে না কখনো
. যখন সেকেন্ড টার্ম শেষ করে একজন ক্যাডেট সবুজ কভারঅল পরে পিটি ৬ বিমানের সামনে দাড়ায় , আর একজন শরিফের জন্ম হয়
. বারংবার ।
" এখন আসি বিমান বাহিনীর কথা। এখানে যেসব প্রশিক্ষন প্রাপ্ত বিমান ব্যাব হার করে উইকি ঘাটলে দেখবেন এগুলোর কি অবস্হা। পাকিস্হানের সেনাবাহিনী তাদের এয়ারক্রাফটগুলোর আধুনিকীকরনে ২০০৯ থেকে এটমেলের ব্যাব হার করছে। ইন্ডিয়া নিজেরাই এফপিজিএ এমবেডেড ডিএসপি দিয়ে কাজ করে। যেগুলো অনেক বেশি আধুনিক সেগুলোই শুধু এরা কিনে।
একটা ৮ বিট এটমেলের দাম কত জানেন? ৪$ থেকে শুরু করে ৩২$ ডলার পর্যন্ত যায়। ইন্টারফেস সার্কিট গুলোর কম্পোনেন্ট এর দাম আরও সস্তা!
আপনে বুয়েট বাদ দেন অনেক নীচের ইউনি চুয়েটেও সেনাবাহিনীর জন্য উপযোগী রোবট স হ নানা কিছু বানায়া প্রজেক্ট করে। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী এতটাই অক্ষম যে তাদের এমআইএসটির কিছু ইন্টিগ্রেট করে না। কারন নিজেরা যখন এত সস্তায় এসব উন্নতকরন শুরু করবে তাহলে এই সেনাবাহিনীতে চাকুরীর জৌলুস হারাবে, শেষ বয়সে বারীধারা বাদ দেন নিজের গ্রামের ভিটায় ছাপড়া উঠাতে পারবে না যদিনা তারা ঐ সস্তা নিলামের জাতিসংঘের কাজে না যায়। তবে এটা ঠিক, সেনাবাহিনীকে সুযোগ দিলে ভালো কাজ করতে পারে যেটা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন উদাহরন রাখে। "