বাঙালি বউকে নিয়ে নাইজেরীয় ফুটবল পরিবারে উৎসব
শাশুড়ি এলিটা জাস্টিনের সঙ্গে লিজা ও তাঁর মেয়ে সামিরা। সংগৃহীত ছবি
পরিবারের চার ছেলের সবাই ফুটবলার। বিনিন শহরের অকবোনা পাড়ায় তাঁদের পরিচিতি ফুটবল পরিবার নামেই। পরিবারটিতে এখন উৎসব চলছে। উৎসবের মধ্যমণি লিজা। শাশুড়ি থেকে ননদ—সবাই-ই ফুটফুটে এই বাঙালি মেয়েকে পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা। এলাকাটিতে মানুষের মুখে মুখেও ঘুরছে বাংলার মেয়ের গুণগান।
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলছেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে। সেই সুবাদে ২০১২ সালে লিজার সঙ্গে পরিচয় হয় এলিটার। পরে মন দেওয়া-নেওয়া ও বিয়ের পিঁড়িতে বসা। বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর তাঁদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সামিরা। ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘বাঙালি বউ নিয়ে সুখের সংসার আফ্রিকান ফুটবলারের’ শিরোনামে প্রকাশ পেয়েছিল তাঁদের ভালোবাসা ও বিয়ের গল্পটি। আফ্রিকান ফুটবলারের সঙ্গে বাঙালির সুখের সংসারের গল্পে মুগ্ধ হয়ে অনেক পাঠকই অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অনুরোধও ছিল প্রথমবারের মতো লিজার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরের গল্পটা যেন শোনানো হয়। নাইজেরিয়ান পরিবারে বাঙালি মেয়ের বউ হিসেবে প্রথম পা রাখা বলে কথা!
২৬ জানুয়ারি নাইজেরিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন লিজা। দেশ ছাড়ার আগে প্রথমবারের মতো শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি টের পাওয়া গিয়েছিল তাঁর আচার-আচরণে। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শাশুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাঁর উচ্ছ্বাসটা বেড়ে যায় বহুগুণ। শাশুড়ি তো ছেলের বাঙালি বউ দেখার জন্যই পথ চেয়ে ছিলেন। সঙ্গে আছে প্রায় সাড়ে তিন বছরের ফুটফুটে নাতনিও।
অনেকটা বাঙালি রীতিতেই বউবরণ করেছে কিংসলে পরিবার। শাশুড়ি এলিটা জাস্টিনা বউয়ের জন্য গলার হার বানিয়ে রেখেছিলেন। নিজের হাতে বউয়ের গলায় পরিয়েও দিয়েছেন। লিজাও বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘বিদেশি মানুষ বলে ভেবেছিলাম, শাশুড়ি আমাদের দেশের মতো অতটা আপন করে নিতে পারবেন না। কিন্তু উনি তো আমাকে পেয়ে একেবারে আনন্দে আছেন। আমার জন্য গলার হার বানিয়ে রেখেছিলেন। রান্না করছেন নিজে। বিশেষ করে নাতনির জন্যই তাঁর বেশি ভালোবাসা।’ অনেক দূর থেকেও লিজার আনন্দটা টের পাওয়া গেল ঠিকই।
লিজা শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পর থেকেই পাড়াপ্রতিবেশী খুব আগ্রহ নিয়ে বউ দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন উপহারও। দাওয়াতও পাচ্ছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে। স্বামী এলিটার বড় ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে গিয়ে তো অবাকই হয়েছেন লিজা, ‘আমার ভাশুরের বউ আমার জন্য দুটি ড্রেস বানিয়ে রেখেছিলেন। আর এলিটার বড় ভাই আমাকে একটা আংটি দিয়েছেন।’
লিজাও তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য কম করছেন না। যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন বিভিন্ন রকমের মসলাদি। তা দিয়েই প্রতিদিন দু-চার পদ বাঙালি খাবার রান্না করে দিচ্ছেন শাশুড়ির সামনে। শাশুড়ি তো খুশিই। মায়ের প্রতি বউয়ের কর্তব্য পালন দেখে স্বামী এলিটা কিংসলেও বেজায় খুশি। এলিটা বাবা হারিয়েছেন অনেক আগে, তাই শ্বশুর সেবাটা করা হয়ে ওঠেনি লিজার।
ফুটবলার এলিটার জীবনে কষ্ট আছে আরও। ২০০৬ সালে জন ওবি মিকেলের সঙ্গে অনূর্ধ্ব ২১ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ এসেছিল এলিটার সামনে। যে বিশ্বকাপে খেলে লিওনেল মেসির আজ ‘মেসি’ হয়ে ওঠা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলার জন্য দেশ ছাড়ার আগের দিন প্রীতি ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েন কিংসলে। তবুও বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিংসলেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক্তার তাঁকে দেশে রেখে যেতে বাধ্য হন। তাই আর বিশ্বকাপে পা পড়ার সৌভাগ্য হয়নি বাঙালি মেয়ের জামাইয়ের। তবে নাইজেরিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দাপটের সঙ্গে খেলেই পা রেখেছিলেন বাংলাদেশে।
এসবই এখন অতীত। এলিটা এখন লাল-সবুজেই পেতেছেন সংসার। তাই নাইজেরিয়া গিয়েও আবার বাংলাদেশে ফেরার ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে এলিটা-লিজা দম্পতির।
https://www.prothomalo.com/sports/article/1427981
A Nigerian football player married to a Bangladeshi girl.
Marriage success depends on mental compatibility, not on skin colors. My maternal uncle also happily married to white woman and has two boys. If two people find themselves attractive and compatible, I see no reason not to be married.