মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প পেছাচ্ছে
অরুণ কর্মকার | আপডেট: ০৬:৫৫, অক্টোবর ০২, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
১
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক সমন্বিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের যথাসময়ে বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত জাপানি দুটি প্রতিষ্ঠান আলোচনায় আসতে রাজি না হওয়া এই অনিশ্চয়তার কারণ। গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর প্রতিষ্ঠান দুটি ঢাকায় আসতে অনীহা প্রকাশ করছে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কয়লা আমদানির জন্য একটি জেটি নির্মাণ এবং সেই জেটিতে কয়লা পরিবাহী জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বঙ্গোপসাগরকে সংযুক্ত করে একটি খাল খনন ও কয়লার মজুতাগার তৈরি এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। সমন্বিত এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো (প্রায় ৪০০ কোটি ডলার)। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করার কথা জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার।
প্রকল্পটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রাক্-যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি ও সুমিতোমো করপোরেশন যোগ্য বিবেচিত হয়। তাদের সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার নির্ধারিত সময় ছিল গত ২৪ জুলাই। কিন্তু ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে এসে আলোচনায় অংশ নিতে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। সে অনুযায়ী প্রথমে এক মাস এবং পরে আরও দুই মাস সময় বাড়ানো হয়েছে।
মাতারবাড়ী প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী ‘বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিজিসিএল)’। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে আলোচনা হবে বলে তাঁরা আশা করেন।
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, তারা আপাতত আলোচনায় বসতে পারবে না। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে জাপানেই প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলোচনা পর্ব শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তারা রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে তারা জানিয়েছে, আলোচনা শেষ হলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, যাঁদের দিয়ে কাজ করানো হবে, তাঁরা আপাতত বাংলাদেশে আসতে রাজি নন। তাঁদের পরিবারগুলোরও এ ব্যাপারে আপত্তি আছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ সে দেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত মাসে আলোচনা করেন। কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর গত সপ্তাহে আবারও প্রতিমন্ত্রী জাপানের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সভা করেছেন।
এই সভার ফলাফল এবং মাতারবাড়ি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহের সভায় তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মাতারবাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তবে কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
মাতারবাড়ি প্রকল্প ২০২০ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জাপানিদের মনে একটাই প্রশ্ন—তাঁদের ওপর আঘাত কেন? জাপানিরা নিজেদের ধর্ম নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করেন না, তেমনি অন্য কারও ধর্ম নিয়েও কোনো কথা বলেন না। তাহলে তাঁদের ওপর আক্রমণ কেন? এর আগে রংপুরে আরেক জাপানি নাগরিক হোশিও কুনিকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর ও ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী হওয়াই কি এর কারণ? যদি তা-ই হয়, তাহলে তাঁদের করণীয় কী হবে। এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে ভাবছেন। তাই এ দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আগের মতো ফিরে আসতে জাপানিদের সময় লাগবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের দুটি লাইনের সমীক্ষার কাজে আসা সাত জাপানি নাগরিক হলি আর্টিজানে নিহত হয়েছেন, সেই কাজও এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। সেখানেও জাপানিরা আসছেন না।
সরকার বর্তমানে ২৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে। এর মধ্যে সাতটি সরকারি, আটটি বেসরকারি ও আটটি বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্প। এই ২৩টি কেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ২০ হাজার ৬২২ মেগাওয়াট। তবে এর মধ্যে মাত্র চারটি কেন্দ্রের কাজ এগোচ্ছে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এই কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে রামপাল, বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে পায়রা, সরকারি খাতের বড়পুকুরিয়া (তৃতীয় ইউনিট) এবং বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপের চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রথম দুটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে, তৃতীয়টি ২৭৫ মেগাওয়াট এবং চতুর্থটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণচুক্তি এ মাসেই সই হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে সরকারের সহজ শর্তের ঋণ (কনসেশনাল লোন) বিষয়ক কমিটির অনুমোদন হয়েছে। এখন বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের (ভেটিং) অপেক্ষায় রয়েছে। এটা হলেই ঋণচুক্তি সই এবং আগামী মাসে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা।
পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। পুনর্বাসন ও বৃক্ষরোপণের কাজও শুরুর পথে। চীনে গত ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের ঋণের বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের জন্য ঋণ দিচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) এবং বিদ্যুৎ কেনাবেচার চুক্তি (পিপিএ) সই হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, রামপাল কেন্দ্রের পরপরই হয়তো পায়রা কেন্দ্রটির নির্মাণকাজও শুরু করা যাবে।
বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ মধ্য পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছরের জুলাই মাসে এই কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা।
মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপের চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) ও বিদ্যুৎ কেনাবেচার চুক্তি (পিপিএ) সই হয়েছে। ২৯ জুন সই হয়েছে নির্মাণচুক্তি। ৫ আগস্ট নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশন ট্রেডিং কোম্পানির (নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ২০ আগস্ট থেকে তারা মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের অর্থ সংস্থানের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন (ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজার) হবে।
অন্যান্য প্রকল্পের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলে জানিয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, কয়লাভিত্তিক সব কটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে গতিসঞ্চার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অরুণ কর্মকার | আপডেট: ০৬:৫৫, অক্টোবর ০২, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
১
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কয়লা আমদানির জন্য একটি জেটি নির্মাণ এবং সেই জেটিতে কয়লা পরিবাহী জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বঙ্গোপসাগরকে সংযুক্ত করে একটি খাল খনন ও কয়লার মজুতাগার তৈরি এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। সমন্বিত এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো (প্রায় ৪০০ কোটি ডলার)। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করার কথা জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার।
প্রকল্পটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রাক্-যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি ও সুমিতোমো করপোরেশন যোগ্য বিবেচিত হয়। তাদের সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার নির্ধারিত সময় ছিল গত ২৪ জুলাই। কিন্তু ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে এসে আলোচনায় অংশ নিতে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। সে অনুযায়ী প্রথমে এক মাস এবং পরে আরও দুই মাস সময় বাড়ানো হয়েছে।
মাতারবাড়ী প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী ‘বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিজিসিএল)’। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে আলোচনা হবে বলে তাঁরা আশা করেন।
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, তারা আপাতত আলোচনায় বসতে পারবে না। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে জাপানেই প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলোচনা পর্ব শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তারা রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে তারা জানিয়েছে, আলোচনা শেষ হলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, যাঁদের দিয়ে কাজ করানো হবে, তাঁরা আপাতত বাংলাদেশে আসতে রাজি নন। তাঁদের পরিবারগুলোরও এ ব্যাপারে আপত্তি আছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ সে দেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত মাসে আলোচনা করেন। কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর গত সপ্তাহে আবারও প্রতিমন্ত্রী জাপানের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সভা করেছেন।
এই সভার ফলাফল এবং মাতারবাড়ি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহের সভায় তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মাতারবাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তবে কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
মাতারবাড়ি প্রকল্প ২০২০ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জাপানিদের মনে একটাই প্রশ্ন—তাঁদের ওপর আঘাত কেন? জাপানিরা নিজেদের ধর্ম নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করেন না, তেমনি অন্য কারও ধর্ম নিয়েও কোনো কথা বলেন না। তাহলে তাঁদের ওপর আক্রমণ কেন? এর আগে রংপুরে আরেক জাপানি নাগরিক হোশিও কুনিকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর ও ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী হওয়াই কি এর কারণ? যদি তা-ই হয়, তাহলে তাঁদের করণীয় কী হবে। এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে ভাবছেন। তাই এ দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আগের মতো ফিরে আসতে জাপানিদের সময় লাগবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের দুটি লাইনের সমীক্ষার কাজে আসা সাত জাপানি নাগরিক হলি আর্টিজানে নিহত হয়েছেন, সেই কাজও এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। সেখানেও জাপানিরা আসছেন না।
সরকার বর্তমানে ২৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে। এর মধ্যে সাতটি সরকারি, আটটি বেসরকারি ও আটটি বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্প। এই ২৩টি কেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ২০ হাজার ৬২২ মেগাওয়াট। তবে এর মধ্যে মাত্র চারটি কেন্দ্রের কাজ এগোচ্ছে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এই কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে রামপাল, বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে পায়রা, সরকারি খাতের বড়পুকুরিয়া (তৃতীয় ইউনিট) এবং বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপের চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রথম দুটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে, তৃতীয়টি ২৭৫ মেগাওয়াট এবং চতুর্থটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণচুক্তি এ মাসেই সই হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে সরকারের সহজ শর্তের ঋণ (কনসেশনাল লোন) বিষয়ক কমিটির অনুমোদন হয়েছে। এখন বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের (ভেটিং) অপেক্ষায় রয়েছে। এটা হলেই ঋণচুক্তি সই এবং আগামী মাসে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা।
পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। পুনর্বাসন ও বৃক্ষরোপণের কাজও শুরুর পথে। চীনে গত ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের ঋণের বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের জন্য ঋণ দিচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) এবং বিদ্যুৎ কেনাবেচার চুক্তি (পিপিএ) সই হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, রামপাল কেন্দ্রের পরপরই হয়তো পায়রা কেন্দ্রটির নির্মাণকাজও শুরু করা যাবে।
বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ মধ্য পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছরের জুলাই মাসে এই কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা।
মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপের চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) ও বিদ্যুৎ কেনাবেচার চুক্তি (পিপিএ) সই হয়েছে। ২৯ জুন সই হয়েছে নির্মাণচুক্তি। ৫ আগস্ট নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশন ট্রেডিং কোম্পানির (নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ২০ আগস্ট থেকে তারা মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের অর্থ সংস্থানের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন (ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজার) হবে।
অন্যান্য প্রকল্পের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলে জানিয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, কয়লাভিত্তিক সব কটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে গতিসঞ্চার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।