i love to hear this from my pakistani brothers too.i'm glad someone realised the fact from pakistan .
Read this
শাহবাগ স্কয়ার। এটা আবার কোথায়? আবদুল কাদের মোল্লা। এটা আবার কে?
গতকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি
ইসলামাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলাম। ওরা কেউই শাহবাগ স্কয়ার বা কাদের মোল্লার নাম শোনেনি। অবশ্য ওরা তাহরির স্কয়ারের কথা জানে; জানে সম্প্রতি আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরও। কিন্তু ওরা যখন জানতে পেল, শাহবাগ স্কয়ার জায়গাটি বাংলাদেশের ঢাকায়, তখন ওদের মধ্যে আরও জানার আগ্রহ দেখতে পেলাম না। কিন্তু যে মুহূর্তে আমরা গল্প করছিলাম, তখন ঢাকা মহানগর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে টগবগ করে ফুটছিল। ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মতো মানুষ সমবেত হয়েছেন শাহবাগে। তাঁরা দেশাত্মবোধক গান গাইছেন, কবিতা আবৃত্তি করছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের কথা বলছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি-দাওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আবদুল কাদের মোল্লার পরিণতি।
ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। ঢাকার মিরপুর এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের ওপর বর্বরতা চালানোর জন্য তিনি মিরপুরের কসাই (বুচার অব মিরপুর
নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে একজন কবিকে (মেহেরুননেসা
গলা কেটে হত্যা করা, ১১ বছর বয়সী এক বালিকাকে ধর্ষণ করা এবং ৩৪৪ জন মানুষকে হত্যা করা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এই কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। কিন্তু শাহবাগ স্কয়ারের বিক্ষোভকারীদের কাছে তাঁর এই শাস্তি যথেষ্ট নয়, তাঁরা কাদের মোল্লার ফাঁসি চান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সহিংস প্রতিবাদ জানায় এই রায়ের বিরুদ্ধে; তারা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাতে মিছিল করে। কিন্তু প্রচুর অর্থকড়ি খরচ করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জনমতকে প্রভাবিত করার জামায়াতি প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।
কৌতূহলের বিষয়, কাদের মোল্লার মামলাটির দিকে দৃষ্টি পড়েছে তুরস্কের সরকারের। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল গত মাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি চিঠি লিখে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সৌভাগ্যের বিষয়, তুর্কি প্রেসিডেন্টকে এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে একা, পৃথিবীর আর কোনো দেশ গণহত্যাকারীদের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা দেখায়নি।
কাদের মোল্লার নিয়তি নিয়ে পাকিস্তান কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এ দেশের সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে নীরব; পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিভাগ এ নিয়ে কোনো বিবৃতিও প্রকাশ করেনি। এটি বেশ পরিহাসের বিষয় যে পূর্ব পাকিস্তানের বিহারিদের পাকিস্তান যেভাবে ভুলে গেছে, তেমনিভাবে ত্যাগ করেছে কাদের মোল্লাকেও। অথচ কাদের মোল্লা ছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থক, অখণ্ড পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করেছেন। ১৯৭১ সালে বাঙালিদের গণহারে হত্যা করা, বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করার কাজে পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতা করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মিলিশিয়া গ্রুপগুলো—রাজাকার, আলবদর, আলশামস। এসব মিলিশিয়া বাহিনীর অনেক সদস্য জামায়াতে ইসলামীরও সদস্য ছিলেন।
শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন নিয়ে পাকিস্তানিদের আগ্রহের অভাব যেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার দূরত্বের মতোই প্রকট। পাকিস্তানের ৫৪ শতাংশ মানুষ অন্য ৪৬ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছে—আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সেই পর্বটি পাকিস্তানিদের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন রয়ে গেছে। তাদের কাছে বাংলাদেশ দিব্যি হতে পারে চাঁদের উল্টো পিঠের কোনো দেশ।
প্রশ্ন হলো: কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম কিছু পাঠ্যবই, যেগুলো পড়ানো হয় পাকিস্তানের স্কুলগুলোতে। ১২ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য পঞ্চম শ্রেণীর সমাজবিদ্যার পাঠ্যবইয়ের (ইংরেজি ভাষায়
শুরুতেই রয়েছে হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যকার পার্থক্যের বিবরণ (যেমন: একজন হিন্দু লোক যখন মারা যায়, তখন তার লাশের সঙ্গে তার বউকেও জ্যান্ত পোড়ানো হয়, কিন্তু মুসলমানরা এটা করে না
। পাকিস্তানের লুকোনো শত্রুদের থেকে হুঁশিয়ার থাকার প্রয়োজনীয়তা আর অবিরাম জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্বের কথা। অবিভক্ত, ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান সম্পর্কে পুরো বইটিতে রয়েছে মোট তিনটি মাত্র বাক্য। শেষ বাক্যটি হলো: ‘ভারতের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেছে।’
অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই পাকিস্তান স্টাডিজে (ইংরেজি ভাষায়
বিষয়টি আছে আরও সংক্ষেপে; লেখা রয়েছে: ‘সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের কিছু নেতা ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তান ভাঙতে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।’ নবম-দশম শ্রেণীর (উর্দু ভাষায়
পাঠ্যবইতে আছে সবচেয়ে বিস্তারিত; পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রায় তিন পৃষ্ঠাজুড়ে। এই অংশের উপশিরোনামগুলো এ রকম: ক. ইয়াহিয়া খান সরকারের অযোগ্যতা-অদক্ষতা; খ. ব্যবসা-বাণিজ্যে হিন্দুদের আধিপত্য; গ. হিন্দু শিক্ষকদের অত্যন্ত খারাপ, দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকা; ঘ. ভাষাগত সমস্যা; ঙ. ভারতীয় হস্তক্ষেপ; চ. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।
পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের শুধু কিম্ভূত কেরিক্যাচারই দেখে এসেছে, তাই তাদের পক্ষে ১৯৭১ সালকে বোঝা অসম্ভব। কিন্তু আমি কী করে তাদের দোষ দেব? আমরা যারা গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বড় হয়েছি, আমরা মনেপ্রাণে জানতাম যে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে একটা দেশ হয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা কোনো জাতি হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানে আজকের তরুণ প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না, সেই সময় পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে বাঙালি-বিদ্বেষ ছিল কত ব্যাপক। গভীর লজ্জার সঙ্গে আমি নিজেও আজ স্বীকার করি, ছোট্ট অবুঝ বালক বয়সে আমিও অস্বস্তি বোধ করতাম বাঙালিদের দেখে; ভাবতাম, এই ছোট ছোট, কালো মানুষগুলো আমার দেশের লোক হয় কী করে! আমরা এমনই এক বিভ্রমের শিকার ছিলাম যে মনে করতাম, ভালো মুসলমান আর পাকিস্তানিরা সবাই হবে লম্বা-চওড়া, সুন্দর, তারা কথা বলবে চোস্ত উর্দুতে। রেডিও পাকিস্তানে যখন বাংলা সংবাদ পড়া হতো, অদ্ভুত উচ্চারণের ভাষাটি শুনে আমার স্কুলমেটদের কেউ কেউ হাসাহাসি করত।
অনেক পাকিস্তানি পূর্ব পাকিস্তানকে হারানোর জন্য দুঃখ করে। কিন্তু তাদের অনেকেই আজও মনে করে, ১৯৭১ সালে যা ঘটেছে, তা আমাদের একটা সামরিক পরাজয়, রাজনৈতিক পরাজয় নয়। আবদুল কাদির খান, যিনি এ সপ্তাহে বৈঠক করেছেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নেতা সৈয়দ মুনাওয়ার হাসানের সঙ্গে, তিনি লিখেছেন যে পারমাণবিক বোমা পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারত: ‘১৯৭১ সালের আগে যদি
আমাদের পারমাণবিক শক্তি-সামর্থ্য থাকত, তাহলে অপমানজনক পরাজয়ের পর আমাদের দেশের অর্ধেকটা হারাতে হতো না, যেটা
এখন বাংলাদেশ।’
কিন্তু আসলেই কি তাই? পারমাণবিক বোমায়ও কি কাজ হতো? পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তো পারমাণবিক বোমাসহই ঘেরাও হয়ে থাকত এক বিরূপ, শত্রুমনোভাবাপন্ন জনগোষ্ঠীর দ্বারা, আর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের ঝড়ও চলতেই থাকত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যতই ট্যাংক আর যুদ্ধবিমান থাক, পশ্চিম পাকিস্তান যে অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, তা থেকে আর ফেরার উপায় ছিল না। মাঝখানে শত্রুমনোভাবাপন্ন ভারত, তার ওপর দিয়ে হাজার মাইল পথ পেরিয়ে ৯০ হাজার সৈন্যের জন্য রসদ সরবরাহ অব্যাহত রাখা ছিল ভীষণ ঝক্কির ব্যাপার। তা ছাড়া, ভারত তার আকাশসীমার ওপর দিকে পাকিস্তানের বিমান চলাচলের অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছিল, ফলে সমুদ্রপথ ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। যুদ্ধ আরও বেশি দিন চললে পাকিস্তান সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ত। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দখলদার বাহিনীগুলো সবখানেই—সেটা কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী হোক বা আফগানিস্তানে আমেরিকান বাহিনী হোক—আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ চালাতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে, ভীষণ বাড়াবাড়ি করে। আগ্রাসী বাহিনীর বাড়াবাড়ি রকমের নৃশংসতার কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়, আর তার ফলে বিদ্রোহের শক্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
আমি তবু আমাদের ডক্টর সাহেবের কথাটা বোঝার চেষ্টা করছি: আসলেই কি পারমাণবিক বোমা দিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভাঙন ঠেকানো যেত? ঢাকায় স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল জনসমুদ্রের ওপর কি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল? অথবা কলকাতা ও দিল্লি নগর পুড়িয়ে ছাই করে দিতে ব্যবহার করা যেত পারমাণবিক বোমা? এবং তার যথা-প্রতিদানে ভস্ম হয়ে যেত আমাদের লাহোর-করাচি? পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে ভারতকে হয়তো যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রাখা যেত, কিন্তু তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আরও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের শিকার হতো।
ইতিহাস ওল্টানো যায় না, কিন্তু এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। বাংলাদেশের এই দাবি সঠিক যে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছি। আসুন, এখন আমরা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই; আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করি। আমরা যদি সৎ হই, আমাদের যদি এই পদক্ষেপ গ্রহণের সাহস থেকে থাকে, তাহলে বাড়তি পাওনা হিসেবে বেলুচিস্তানের সমস্যাটি বোঝা ও উপলব্ধি করা আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হবে; এমনকি সমস্যাটার সমাধানও হয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
পারভেজ হুদভয়: ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও কলাম লেখক।