যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির প্রতিবেদন
ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএলের মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন!
?????? ??????, ?????????? ??????? ????? ???????! - ????? ???
মো. ফারুক হোসেন | তারিখ: ১৮-০৭-২০১২
০ মন্তব্য
প্রিন্ট
ShareThis
Share on Facebook
prothom-alojobs news details small ad
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
অর্থের অবৈধ লেনদেন ও সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান দেওয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাংক দুটি হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। অপরাধমূলক এই ধরনের কাজে তাদের সহযোগিতা করেছে অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক ব্যাংক হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন বা এইসএসবিসি। এই ব্যাংকটির দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক দুটি এ কাজ করতে পেরেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
মেক্সিকোর মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবাজারে প্রবেশের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত মার্কিন সিনেটের একটি উপকমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত সোমবার প্রতিবেদন দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে এ প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংক, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পথ করে দিয়েছে এইচএসবিসি। এইচএসবিসির যুক্তরাষ্ট্র শাখা এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। সৌদি আরব ও বাংলাদেশের এই তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে আল-কায়েদাসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহের তালিকাভুক্ত এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে বিধিনিষেধ থাকলেও এইচএসবিসির যুক্তরাষ্ট্র শাখা তা মানেনি।
মার্কিন সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনমতে, এইচএসবিসি ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য ইসলামী ব্যাংক প্রথম আবেদন করে ২০০০ সালে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এইচএসবিসির ২৪টি শাখায় ইসলামী ব্যাংকের হিসাব আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এইচএসবিসির শাখায় ইসলামী ব্যাংক মার্কিন ডলারের হিসাব খোলে ২০০০ সালে এবং ভারত ও পাকিস্তানে এইচএসবিসির সংশ্লিষ্ট শাখায় মার্কিন ডলারের ক্লিয়ারিং হিসাব খোলা হয় ২০০৬ সালে। এরপর ২০০৭ সালে এইচএসবিসি যুক্তরাষ্ট্রের সিঙ্গাপুর শাখা ইসলামী ব্যাংককে সরাসরি মার্কিন ডলার, ডলারের ট্রাভেলার চেক ও পে-অর্ডার সরবরাহের জন্য একটি হিসাব খোলার অনুমতি চায়।
ইসলামী ব্যাংকের জন্য এইচএসবিসি যুক্তরাষ্ট্রের সিঙ্গাপুর শাখা এই হিসাব খোলার অনুমতি চাওয়ার পরপরই অর্থের অবৈধ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রশ্ন শুধু এই জন্য নয় যে, বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশের একটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক এবং এখানে অর্থ পাচারের বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। বরং এই জন্য যে, এই ইসলামী ব্যাংকের ৩৭ শতাংশ মালিকানা আছে সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংকের হাতে। সৌদি এই ব্যাংকটি অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরও ২০০৭ সালের শেষের দিকে ইসলামী ব্যাংকের জন্য ওই হিসাব খোলার অনুমতি দেয় এইচএসবিসি যুক্তরাষ্ট্র শাখা।
মার্কিন সিনেট কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব ঘটনার প্রায় এক বছর আগে এইচএসবিসির আর্থিক গোয়েন্দা গ্রুপের (এফআইজি
প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সন্ত্রাসী বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে একটি হিসাব আছে আবদুর রহমানের।
এফআইজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখা ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ করছে বলে জানতে পেরেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য ২০ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংক পাঁচ কর্মীকে বরখাস্ত এবং অপর ১৫ কর্মীকে সতর্ক করে দেয়। এ ছাড়া, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা করেছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে।
মার্কিন সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের আরেকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের মতো কর্মকাণ্ডের তথ্য আছে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক নামের এই ব্যাংকের সঙ্গে সৌদিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিলিফ অর্গানাইজেশনের (আইআইআরও
অংশীদারির সম্পর্ক আছে। আইআইআরওর দুটি এবং এবং তাদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগ আছে। আইআইআরও মার্কিন তালিকভুক্ত প্রতিষ্ঠান, যাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে মার্কিন নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
এইচএসবিসির ২০০৯ সালের এফআইজি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক—এই দুই ব্যাংকেই আইআইআরওর হিসাব ছিল। তবে ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার খবরে জানানো হয়, ২০০৬ সালে মার্কিন প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আইআইআরওর হিসাব জব্দ করে ইসলামী ব্যাংক। তবে কবে ওই হিসাব খোলা হয়েছিল এবং জব্দ করা ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না এবং ওই সব হিসাবে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ ছিল, তা এফআইজির প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। ২০১০ সালের ৩০ জুন এইচএসবিসি যুক্তরাষ্ট্র শাখায় একটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংকে আইআইআরওর হিসাব আছে, যা বন্ধ করা প্রয়োজন।
মার্কিন সিনেটের উপকমিটিকে ইসলামী ব্যাংক নিশ্চিত করেছে, তাদের ব্যাংকে আইআইআরওর দুটি হিসাব ছিল এবং তা খোলা হয় ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালে। তবে ২০০৬ সালে আইআইআরওকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত করার পর ইসলামী ব্যাংক ওই হিসাব দুটি জব্দ করে এবং তা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করে। ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সালে তারা ওই জব্দ করা হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে।
এফআইজির ২০০৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২০০২ সালে হতাহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় আইআইআরওর নাম আছে। এ ছাড়া ১৯৯৮ সালে আফ্রিকার দুটি দেশে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার ঘটনায় আইআইআরও মূল অভিযুক্ত। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে বোমা হামলার ঘটনায় অর্থের জোগান দেওয়ার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ১৯৯০-এর দশকে ফিলিপাইনে আইআইআরওর শাখার প্রধান ছিলেন আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেনের বোনের স্বামী মোহাম্মাদ জামাল খলিফা। ফিলিপাইন সরকার আইআইআরওর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে।
আহমেদ আকবর সোবহান প্রসঙ্গ: সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি শাহ আলম নামে পরিচিত। প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকে শাহ আলম এবং তাঁর ছেলের শেয়ার ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শাহ আলম এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয় ২০০৬ সালে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শাহ আলম এবং তাঁর ছেলে ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় তাঁর আট বছরের কারাদণ্ড হয়।
সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনে সবশেষে বলা হয়, দীর্ঘ চিঠি চালাচালি শেষে চলতি বছরের মে মাসে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছেদ করে এইচএসবিসি।
এইচএসবিসির বক্তব্য: এইচএসবিসির বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে গতকাল একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটি বলেছে, বিশ্বের যেখানেই আমরা কার্যক্রম চালাই, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন পুরোপুরি মেনেই আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সচেষ্ট থাকি। আমরা অবগত হয়েছি যে, অতীতে বিশ্বের কোন কোন স্থানে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা আমাদের গ্রাহকদের প্রত্যাশার তুলনায় আমাদের যাচাই-বাছাই বা আইনি কাঠামো প্রয়োগ-প্রক্রিয়া যথেষ্ট সুসংহত বা নিবিড় ছিল না।
যেসব ক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রমের ত্রুটি ছিল যা অন্যদের অগ্রহণযোগ্য কাজের সুযোগ নিতে দিয়েছে—সেগুলো আমরা চিহ্নিত করছি, সেগুলোর ব্যাপারে দায় স্বীকার করছি এবং আমাদের দায় বা ত্রুটির জায়গাগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এই বিষয়টি অতীতের, সেটি ধরে নিয়েও আমরা বলতে চাই যে আমাদের জন্য এটি অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণের একটি সুযোগ।
২০১১-এর শুরুতে এইচএসবিসি গ্রুপের শীর্ষপর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী আমাদের কার্যক্রমে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আইনের প্রয়োগ, যাচাই-বাছাই ও সতর্কতামূলক প্রক্রিয়া ও কাঠামো নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডের নির্ভুলতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সার্বিকভাবে ব্যবসায়িক সংস্কৃতিতে গুণগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
দুই ব্যাংকের বক্তব্য: যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ যাহের গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের আইনকানুন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধান মেনে ব্যাংকিং করি। আল রাজি গ্রুপ আমাদের ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারের মালিক। মুনাফা নিয়ে যায়। এর বাইরে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই।’
অন্যদিকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন (আইআইআরও
এবং ইসলামিক চ্যারিটেবল সোস্যাইটি লাজনাথ আল-বির আল ইসলামিয়া তাদের ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিল। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না। উপরন্তু যে কেউ শেয়ার কিনতে চাইলে আমরা তো না করতে পারি না। অবশ্য এর মধ্যেই এদের শেয়ার অনেক কমে এসেছে। বাকিটাও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’