monitor
ELITE MEMBER

- Joined
- Apr 24, 2007
- Messages
- 8,571
- Reaction score
- 7
- Country
- Location
সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠন, আধুনিকায়ন চলছে
একটি অত্যাধুনিক, সুশৃঙ্খল ও দক্ষ সামরিক বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কেনা হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম।
জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৬,২৭০ কোটি টাকা, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ১,২৪৫ কোটি টাকা বেশি। অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের বরাদ্দের মধ্যে মূলধন ব্যয় ৫,২১৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৫,০২৪ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩,৩৭৫ কোটি টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ১২,০৫৬ কোটি টাকা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর ভিত্তিতে একটি লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে চার ধাপের একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। বাহিনীগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোতে যেমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তেমন প্রতিরক্ষা সম্ভারও সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও সম্পদের সীমাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাংক, এপিসি ও অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিমানবাহিনীর জন্য যোগাড় করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল। নৌবাহিনীর জন্য অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে আনা হচ্ছে ফ্রিগেট ও সাবমেরিন।
মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের মতো এখন বাংলাদেশকে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে একটু বেশি মনযোগ দিতে হচ্ছে। কারণ আমাদের সমুদ্রসীমা (নতুনভাবে) চিহ্নিত হচ্ছে। সেখানে বিপুল সম্পদ আছে। তা রক্ষার দায়িত্ব নৌবাহিনীর।”
“অবশ্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনী চাইলেই নিজের বাজেট উপস্থাপন করতে পারে না। সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয়। সে অনুযায়ী বাহিনীগুলোকে নিজ নিজ প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা নিতে হয় এবং তা বাস্তবায়ন করতে হয়। এ কারণে আধুনিকায়নের বিশাল কাজটি কিছুটা খাপছাড়া ভাবে হচ্ছে বলেও মনে হতে পারে।” যোগ করলেন মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা। পিলখানায় বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। সদ্য গঠিত সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজাতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করানো হয় সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করতে সক্ষম হয় মহাজোট সরকার। আইনী প্রক্রিয়ায় বিদ্রোহী ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা পরিবারগুলোকে মোটা অংকের অর্থ সহায়তা ছাড়াও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নৃশংস ওই ঘটনার পর সরকার সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা আরও অটুট রাখার চেষ্টা শুরু করে। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়। এর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর শক্তি ও পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সরকার। এছাড়া সৈনিক ও অফিসারদের সুযোগ-সুবিধা ও পদমর্যাদাও বাড়ানো হয়।
তবে দেশে এখনও পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নেই। এ নীতি প্রণয়নের জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে তা থেমে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-১৩ আমলে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, একটি খসড়াও হয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
জাতীয় নিরাপত্তা নীতি না থাকলেও সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি চার ধাপের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর প্রথম ধাপ ২০১১ থেকে ২০১৫ চলছে। দ্বিতীয় ধাপ ২০১৬ থেকে ২০২০ এবং তৃতীয় ধাপ ২০২১ থেকে ২০২৫ এবং চতুর্থ ধাপ ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান সরকারের আমলে যেসব কেনাকাটা হচ্ছে, তা প্রথম ধাপের অংশ ।
ফোর্সের গোলে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- প্রদত্ত মিশন ও কর্মপরিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যুগোপযোগী সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত জনবলকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ করা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক সংগঠনে যথাসম্ভব কম জনবল বৃদ্ধি করে আধুনিক সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদী অন্তর্ভূক্তি এবং এর কার্যকরী ব্যবহার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। সকল পদবীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পদোন্নতি পরিকল্পনায় গতিশীলতা আনয়ন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সদরদফতর ও ইউনিটগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। যেমন ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ভৌগলিক অবস্থানভিত্তিক সেনা কমান্ডের বাস্তবায়ন করা। বিভিন্ন ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ, ব্যবহার্য সরঞ্জাম ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে আধুনিক বেতারযন্ত্র অন্তর্ভুক্তকরণ। দেশের অভ্যন্তরে যে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় অধিকতর মেধাসম্পন্ন, শক্তিশালী, কার্যকরী ও নিবেদিত বিশেষ (কমান্ডো) ফোর্স গঠন করা। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য ইউনিটগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসা। এছাড়া শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি আধুনিকায়ন ও সাংগঠনিক কাঠামোতে সেগুলোর অন্তর্ভুক্তকরণ এবং ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের যথাযথ পদোন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাঠামোতে পদোন্নতির গ্রহণযোগ্য আনুপাতিক হার বিন্যস্ত করা।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় পাঁচ বছরে সামরিক খাতে কেনাকাটার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করা হয়েছে। এ সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) জন্য ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার চুক্তি হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অংশ বেলারুশের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম কেনা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি করেছে সরকার। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলারুশ সফরের সময় দুই পক্ষের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়।
এর বাইরে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এ বছরের শুরুর দিকে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ জিডিপি’র এক থেকে এক দশমিক তিন শতাংশ খরচ করছে সামরিক খাতে এবং এর বেশিরভাগই খরচ হয়েছে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে। গত সাড়ে চার বছরে কেনা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের রাডার।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সামরিক কেনাকাটা ও সামরিক সরঞ্জামের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তবে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে তিন বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার তথ্য জানান। তার আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বেও তিনি সামরিক সরঞ্জাম কেনার কথা জানান।
১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর স্টাফ কলেজে ২০০৫ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য ‘ভবিষ্যৎ সশস্ত্র বাহিনীর রূপরেখা’ দিয়েছিলেন। এতে তিনি সেনাবাহিনীর ‘যুদ্ধশক্তি’ এবং ‘সাজসরঞ্জামের জোগান’কে নতুন ধারণায় পুনর্গঠন, যুদ্ধের অংশে সব ‘অস্ত্র’র সমন্বয়ে সুষম দলবিন্যাস, সেনাকে আকাশপথেও গতিশীল করার কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি তাদের ‘সাজসরঞ্জাম’ বহুমুখী করা, যা যুদ্ধক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজস্ব কাজ সম্পাদনে সক্ষম, এমন এক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, বিমানবিধ্বংসী বাহিনীকে নতুন সাজে সাজানো হবে, যা বিমান ও ট্যাংকের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে সামরিক খাতের এই কেনাকাটা সম্পর্কে একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেন, সশস্ত্রবাহিনী থাকলে সামরিক সরঞ্জাম কিনতেই হবে। কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষানীতি হবে আত্মরক্ষামূলক। আক্রমণকারী আঘাত হানার পর আমরা প্রত্যাঘাত করব, নাকি আগেভাগেই হামলা চালিয়ে তাকে অকার্যকর করে দেব, সেটা আগে ঠিক করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জার এক রূপরেখা দেন। লন্ডনের বিখ্যাত জেন’স ডিফেন্স উইকলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বেশি শক্তি, বেশি দাপট, বেশি অস্ত্র থাকতে হবে। কারণ তা হলেই আপনি যুদ্ধকালে কৌশলগত প্রয়োজনে আপনার সমরাস্ত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।’
সামরিক খাতে যত কেনাকাটা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর- এই চার বছরে তিন বাহিনীর জন্য ১৮৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে সেনাবাহিনীর জন্য। এ বাহিনীর জন্য চার বছরে পাঁচ হাজার ৪০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য চার হাজার ৯৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ও বিমানবাহিনীর জন্য চার হাজার ৭২২ কোটি ১৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়।
এসব কেনাকাটার বাইরে রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়ে আট হাজার কোটি টাকার ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান (এপিসি), পন্টুন সেতু, প্রশিক্ষণ বিমান, সামরিক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছর ধরে বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে এ ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে। এ চুক্তির আওতায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হবে ২০১৭ সালের মধ্যে।
এ ছাডা আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় দুটি ডুবো যুদ্ধজাহাজ (সাবমেরিন) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাশে সাবমেরিন ঘাঁটি করার জন্য জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীর ২৬০টি সাঁজোয়া যান, ১৮টি সামরিক উদ্ধার যান, ১৫টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স, ৪৪টি তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাংক, দুটি হেলিকপ্টার, ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান ও সামরিক রাডার কেনা হয়।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় জাপান থেকে কেনা হয় ১৮৪টি তিন টনের ট্রাক। পরের বছর রাশিয়া থেকে কেনা হয় ১২০টি সাঁজোয়া যান (আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি), ১০টি সামরিক উদ্ধারযান (আরমার্ড রিকভারি ভেহিকেল-এআরভি) ও ১০টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স।
এসব সরঞ্জামের দাম ৫১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে চীন থেকে কেনা হয় এক হাজার ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকার এমবিটি ২০০০ মডেলের ৪৪টি চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক ও তিনটি সামরিক উদ্ধারযান। ফ্রান্সের তৈরি ইউরোকপ্টার ব্র্যান্ডের দুটি হেলিকপ্টার কেনা হয় ১৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। ওই বছর চীন থেকে রাডার কেনা হয় ১৩৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ করে। পরের বছর সার্বিয়া থেকে ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রোপেলড গান-এসপিগান) কেনা হয় ৫৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। রাশিয়া থেকে ২২২ কোটি সাত লাখ টাকায় কেনা হয় ১১৩টি ট্যাংক বিধ্বংসী সরঞ্জাম। একই বছর রাশিয়া থেকে ৬৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় কেনা হয় ১৪০টি সাঁজোয়া যান, পাঁচটি উদ্ধারযান ও পাঁচটি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স।
সূত্র জানায়, এ ছাড়া সেনাবাহিনীর জন্য আরও দুটি বিমান, তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণ রাডার, কিছু বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, বেশ কিছু ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র, স্বল্পপাল্লার ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড উইপন, এপিসিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নৌবাহিনী: সরকারের প্রথম চার বছরে নৌবাহিনীতে ১৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি কেনা হয়েছে আর চীনের সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে ছোট আকারের পাঁচটি জাহাজ।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইতালি থেকে ১৬৩ কোটি টাকায় কেনা হয় দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার। একই দেশ থেকে ১৪১ কোটি টাকায় কেনা হয় এমকে-১ ক্ষেপণাস্ত্র। পরের বছর ৮৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় চীন থেকে দুটি বড় টহল জাহাজ (এলপিসি) ও পাঁচটি ছোট টহল জাহাজ কেনা হয়। ১৩৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় যুক্তরাজ্য থেকে কেনা হয় দুটি জাহাজ ও একটি জরিপ জাহাজ। এ ছাড়া ৩০২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় চীন থেকে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৫৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় কেনা হয় রাডার যন্ত্রপাতি।
২০১০-১১ অর্থবছরে নৌবাহিনীর জন্য জার্মানি থেকে আনা হয় দুটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট। এর দাম ২৪১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের ৩ জুন নৌবাহিনীর প্রধান কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই বছর এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় চীন থেকে কেনা হয় আরও দুটি যুদ্ধজাহাজ। এ বছর ৬৫২ কোটি টাকায় কেনা হয় আরও দুটি ফ্রিগেট।
বিমানবাহিনী: ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিমানবাহিনীর জন্য ৩৩২ কোটি টাকায় চীন থেকে কেনা হয় স্বল্পপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পদ্ধতি (এসএইচওআরএডি)। এফ-৭ বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা স্থাপনে খরচ করা হয় ২০৪ কোটি টাকা। এ সময় এফ-৭ বিমানের জন্য চীন থেকে এবং মিগ-২৯ বিমানের জন্য রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে খরচ হয় ২৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয় চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজি-১ এবং ৩৪৫ কোটি টাকায় রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এগুলো বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর চারটি মিগ-২৯-এর রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা হয় ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চীন থেকে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার কেনায় খরচ করা হয় আরও ২১৫ কোটি আট লাখ টাকা।
রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনার চুক্তির পর সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, “সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের অস্বচ্ছতার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হচ্ছে।”
একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সক্ষমতার জন্য দ রকার সামরিক সরঞ্জাম। তবে এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। তবে দাম যাই হোক না কেন, কেনাকাটা অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে মানুষের কোনও সন্দেহ না থাকে।
২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি লন্ডনে প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সামরিক খাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঝুঁকি রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংসদে যেমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তেমনি নিরাপত্তা খাতের বার্ষিক হিসাবের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়েও কোনও বিতর্কের প্রমাণ মেলে না।”
যোগাযোগ করা হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরে (আইএসপিআর) এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট হওয়ায় এসব বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই।
উৎসঃ

একটি অত্যাধুনিক, সুশৃঙ্খল ও দক্ষ সামরিক বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কেনা হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম।
জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৬,২৭০ কোটি টাকা, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ১,২৪৫ কোটি টাকা বেশি। অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের বরাদ্দের মধ্যে মূলধন ব্যয় ৫,২১৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৫,০২৪ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩,৩৭৫ কোটি টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ১২,০৫৬ কোটি টাকা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর ভিত্তিতে একটি লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে চার ধাপের একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। বাহিনীগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোতে যেমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তেমন প্রতিরক্ষা সম্ভারও সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও সম্পদের সীমাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাংক, এপিসি ও অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিমানবাহিনীর জন্য যোগাড় করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল। নৌবাহিনীর জন্য অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে আনা হচ্ছে ফ্রিগেট ও সাবমেরিন।
মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের মতো এখন বাংলাদেশকে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে একটু বেশি মনযোগ দিতে হচ্ছে। কারণ আমাদের সমুদ্রসীমা (নতুনভাবে) চিহ্নিত হচ্ছে। সেখানে বিপুল সম্পদ আছে। তা রক্ষার দায়িত্ব নৌবাহিনীর।”
“অবশ্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনী চাইলেই নিজের বাজেট উপস্থাপন করতে পারে না। সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয়। সে অনুযায়ী বাহিনীগুলোকে নিজ নিজ প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা নিতে হয় এবং তা বাস্তবায়ন করতে হয়। এ কারণে আধুনিকায়নের বিশাল কাজটি কিছুটা খাপছাড়া ভাবে হচ্ছে বলেও মনে হতে পারে।” যোগ করলেন মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা। পিলখানায় বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। সদ্য গঠিত সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজাতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করানো হয় সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করতে সক্ষম হয় মহাজোট সরকার। আইনী প্রক্রিয়ায় বিদ্রোহী ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা পরিবারগুলোকে মোটা অংকের অর্থ সহায়তা ছাড়াও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নৃশংস ওই ঘটনার পর সরকার সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা আরও অটুট রাখার চেষ্টা শুরু করে। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়। এর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর শক্তি ও পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সরকার। এছাড়া সৈনিক ও অফিসারদের সুযোগ-সুবিধা ও পদমর্যাদাও বাড়ানো হয়।
তবে দেশে এখনও পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নেই। এ নীতি প্রণয়নের জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে তা থেমে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-১৩ আমলে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, একটি খসড়াও হয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
জাতীয় নিরাপত্তা নীতি না থাকলেও সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি চার ধাপের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর প্রথম ধাপ ২০১১ থেকে ২০১৫ চলছে। দ্বিতীয় ধাপ ২০১৬ থেকে ২০২০ এবং তৃতীয় ধাপ ২০২১ থেকে ২০২৫ এবং চতুর্থ ধাপ ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান সরকারের আমলে যেসব কেনাকাটা হচ্ছে, তা প্রথম ধাপের অংশ ।
ফোর্সের গোলে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- প্রদত্ত মিশন ও কর্মপরিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যুগোপযোগী সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত জনবলকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ করা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক সংগঠনে যথাসম্ভব কম জনবল বৃদ্ধি করে আধুনিক সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদী অন্তর্ভূক্তি এবং এর কার্যকরী ব্যবহার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। সকল পদবীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পদোন্নতি পরিকল্পনায় গতিশীলতা আনয়ন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সদরদফতর ও ইউনিটগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। যেমন ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ভৌগলিক অবস্থানভিত্তিক সেনা কমান্ডের বাস্তবায়ন করা। বিভিন্ন ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ, ব্যবহার্য সরঞ্জাম ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে আধুনিক বেতারযন্ত্র অন্তর্ভুক্তকরণ। দেশের অভ্যন্তরে যে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় অধিকতর মেধাসম্পন্ন, শক্তিশালী, কার্যকরী ও নিবেদিত বিশেষ (কমান্ডো) ফোর্স গঠন করা। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য ইউনিটগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসা। এছাড়া শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি আধুনিকায়ন ও সাংগঠনিক কাঠামোতে সেগুলোর অন্তর্ভুক্তকরণ এবং ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের যথাযথ পদোন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাঠামোতে পদোন্নতির গ্রহণযোগ্য আনুপাতিক হার বিন্যস্ত করা।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় পাঁচ বছরে সামরিক খাতে কেনাকাটার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করা হয়েছে। এ সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) জন্য ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার চুক্তি হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অংশ বেলারুশের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম কেনা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি করেছে সরকার। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলারুশ সফরের সময় দুই পক্ষের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়।
এর বাইরে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এ বছরের শুরুর দিকে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ জিডিপি’র এক থেকে এক দশমিক তিন শতাংশ খরচ করছে সামরিক খাতে এবং এর বেশিরভাগই খরচ হয়েছে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে। গত সাড়ে চার বছরে কেনা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের রাডার।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সামরিক কেনাকাটা ও সামরিক সরঞ্জামের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তবে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে তিন বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার তথ্য জানান। তার আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বেও তিনি সামরিক সরঞ্জাম কেনার কথা জানান।
১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর স্টাফ কলেজে ২০০৫ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য ‘ভবিষ্যৎ সশস্ত্র বাহিনীর রূপরেখা’ দিয়েছিলেন। এতে তিনি সেনাবাহিনীর ‘যুদ্ধশক্তি’ এবং ‘সাজসরঞ্জামের জোগান’কে নতুন ধারণায় পুনর্গঠন, যুদ্ধের অংশে সব ‘অস্ত্র’র সমন্বয়ে সুষম দলবিন্যাস, সেনাকে আকাশপথেও গতিশীল করার কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি তাদের ‘সাজসরঞ্জাম’ বহুমুখী করা, যা যুদ্ধক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজস্ব কাজ সম্পাদনে সক্ষম, এমন এক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, বিমানবিধ্বংসী বাহিনীকে নতুন সাজে সাজানো হবে, যা বিমান ও ট্যাংকের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে সামরিক খাতের এই কেনাকাটা সম্পর্কে একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেন, সশস্ত্রবাহিনী থাকলে সামরিক সরঞ্জাম কিনতেই হবে। কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষানীতি হবে আত্মরক্ষামূলক। আক্রমণকারী আঘাত হানার পর আমরা প্রত্যাঘাত করব, নাকি আগেভাগেই হামলা চালিয়ে তাকে অকার্যকর করে দেব, সেটা আগে ঠিক করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জার এক রূপরেখা দেন। লন্ডনের বিখ্যাত জেন’স ডিফেন্স উইকলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বেশি শক্তি, বেশি দাপট, বেশি অস্ত্র থাকতে হবে। কারণ তা হলেই আপনি যুদ্ধকালে কৌশলগত প্রয়োজনে আপনার সমরাস্ত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।’
সামরিক খাতে যত কেনাকাটা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর- এই চার বছরে তিন বাহিনীর জন্য ১৮৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে সেনাবাহিনীর জন্য। এ বাহিনীর জন্য চার বছরে পাঁচ হাজার ৪০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য চার হাজার ৯৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ও বিমানবাহিনীর জন্য চার হাজার ৭২২ কোটি ১৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়।
এসব কেনাকাটার বাইরে রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়ে আট হাজার কোটি টাকার ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান (এপিসি), পন্টুন সেতু, প্রশিক্ষণ বিমান, সামরিক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছর ধরে বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে এ ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে। এ চুক্তির আওতায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হবে ২০১৭ সালের মধ্যে।
এ ছাডা আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় দুটি ডুবো যুদ্ধজাহাজ (সাবমেরিন) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাশে সাবমেরিন ঘাঁটি করার জন্য জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীর ২৬০টি সাঁজোয়া যান, ১৮টি সামরিক উদ্ধার যান, ১৫টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স, ৪৪টি তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাংক, দুটি হেলিকপ্টার, ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান ও সামরিক রাডার কেনা হয়।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় জাপান থেকে কেনা হয় ১৮৪টি তিন টনের ট্রাক। পরের বছর রাশিয়া থেকে কেনা হয় ১২০টি সাঁজোয়া যান (আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি), ১০টি সামরিক উদ্ধারযান (আরমার্ড রিকভারি ভেহিকেল-এআরভি) ও ১০টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স।
এসব সরঞ্জামের দাম ৫১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে চীন থেকে কেনা হয় এক হাজার ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকার এমবিটি ২০০০ মডেলের ৪৪টি চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক ও তিনটি সামরিক উদ্ধারযান। ফ্রান্সের তৈরি ইউরোকপ্টার ব্র্যান্ডের দুটি হেলিকপ্টার কেনা হয় ১৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। ওই বছর চীন থেকে রাডার কেনা হয় ১৩৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ করে। পরের বছর সার্বিয়া থেকে ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রোপেলড গান-এসপিগান) কেনা হয় ৫৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। রাশিয়া থেকে ২২২ কোটি সাত লাখ টাকায় কেনা হয় ১১৩টি ট্যাংক বিধ্বংসী সরঞ্জাম। একই বছর রাশিয়া থেকে ৬৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় কেনা হয় ১৪০টি সাঁজোয়া যান, পাঁচটি উদ্ধারযান ও পাঁচটি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স।
সূত্র জানায়, এ ছাড়া সেনাবাহিনীর জন্য আরও দুটি বিমান, তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণ রাডার, কিছু বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, বেশ কিছু ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র, স্বল্পপাল্লার ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড উইপন, এপিসিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নৌবাহিনী: সরকারের প্রথম চার বছরে নৌবাহিনীতে ১৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি কেনা হয়েছে আর চীনের সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে ছোট আকারের পাঁচটি জাহাজ।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইতালি থেকে ১৬৩ কোটি টাকায় কেনা হয় দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার। একই দেশ থেকে ১৪১ কোটি টাকায় কেনা হয় এমকে-১ ক্ষেপণাস্ত্র। পরের বছর ৮৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় চীন থেকে দুটি বড় টহল জাহাজ (এলপিসি) ও পাঁচটি ছোট টহল জাহাজ কেনা হয়। ১৩৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় যুক্তরাজ্য থেকে কেনা হয় দুটি জাহাজ ও একটি জরিপ জাহাজ। এ ছাড়া ৩০২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় চীন থেকে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৫৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় কেনা হয় রাডার যন্ত্রপাতি।
২০১০-১১ অর্থবছরে নৌবাহিনীর জন্য জার্মানি থেকে আনা হয় দুটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট। এর দাম ২৪১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের ৩ জুন নৌবাহিনীর প্রধান কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই বছর এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় চীন থেকে কেনা হয় আরও দুটি যুদ্ধজাহাজ। এ বছর ৬৫২ কোটি টাকায় কেনা হয় আরও দুটি ফ্রিগেট।
বিমানবাহিনী: ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিমানবাহিনীর জন্য ৩৩২ কোটি টাকায় চীন থেকে কেনা হয় স্বল্পপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পদ্ধতি (এসএইচওআরএডি)। এফ-৭ বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা স্থাপনে খরচ করা হয় ২০৪ কোটি টাকা। এ সময় এফ-৭ বিমানের জন্য চীন থেকে এবং মিগ-২৯ বিমানের জন্য রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে খরচ হয় ২৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয় চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজি-১ এবং ৩৪৫ কোটি টাকায় রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এগুলো বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর চারটি মিগ-২৯-এর রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা হয় ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চীন থেকে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার কেনায় খরচ করা হয় আরও ২১৫ কোটি আট লাখ টাকা।
রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনার চুক্তির পর সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, “সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের অস্বচ্ছতার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হচ্ছে।”
একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সক্ষমতার জন্য দ রকার সামরিক সরঞ্জাম। তবে এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। তবে দাম যাই হোক না কেন, কেনাকাটা অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে মানুষের কোনও সন্দেহ না থাকে।
২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি লন্ডনে প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সামরিক খাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঝুঁকি রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংসদে যেমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তেমনি নিরাপত্তা খাতের বার্ষিক হিসাবের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়েও কোনও বিতর্কের প্রমাণ মেলে না।”
যোগাযোগ করা হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরে (আইএসপিআর) এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট হওয়ায় এসব বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই।
উৎসঃ