http://m.banglatribune.com/national/news/157597/চীনা-সাবমেরিনের-ঢেউ-সামলাতে-ঢাকা-আসছেন-পারিক্কর
চীনা সাবমেরিনের ঢেউ সামলাতে ঢাকা আসছেন পারিক্কর
রঞ্জন বসু, দিল্লি ০৫:৫১ , নভেম্বর ১৬ , ২০১৬
ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মরোহর পারিক্কর
চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের নৌবাহিনী দুটি সাবমেরিন হাতে পাওয়ার মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে নতুন করে ঝালিয়ে নিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর এ মাসের শেষে বাংলাদেশ সফরে যাবেন। বহু বছরের মধ্যে এটাই হবে কোনও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে একটা নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে গত বেশ কিছুদিন ধরেই। ঠিক এই মুহূর্তেই বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে চলছে দু’দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ সামরিক মহড়া বা ‘সম্প্রীতি ২০১৬’ – যার আওতায় একসঙ্গে জঙ্গী-বিরোধী তৎপরতার তালিম নিচ্ছে দু’দেশের সেনারা। পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘ফার্স্ট ট্রেনিং স্কোয়াড্রন’ও দিনকয়েক আগেই ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে – যাতে আছে রণতরী আইএনএস তীর ও সুজাতা, আর উপকূলরক্ষী বাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজ বরুণা।
দু’দেশের যৌথ সামরিক কর্মকাণ্ডের পরিসর এভাবে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে – আর সেই পটভূমিতেই ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু এ সপ্তাহের গোড়ায় চীন যেভাবে তাদের লিয়াওনিং প্রদেশের ডালিয়ান সমুদ্রবন্দরে সফররত বাংলাদেশের নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন আহমেদের হাতে দুটি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন তুলে দিয়েছে, তাতে ভারত মনে করছে মি. পারিক্করের সফর নিয়ে আর এতটুকুও দেরি করার কোনও অবকাশ নেই।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপাতত স্থির হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর এ মাসের শেষে, ৩০ নভেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে যাবেন। তার সফরটা হবে দু’দিনের – আর সেই সফরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে একটা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই চেষ্টা করা হবে।’
‘নতুন উচ্চতা’ বলতে বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশিক্ষণ, আরও বেশি সংখ্যায় যৌথ মহড়া আয়োজন বা জঙ্গী-দমনে সহযোগিতার নানা বিষয়ই থাকছে। মনোহর পারিক্করের বাংলাদেশ সফরেই এই বিষয়গুলোর রূপরেখা চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, আর ডিসেম্বরে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে আসবেন তখন দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হবে সেই সব প্রতিরক্ষা চুক্তি – আপাতত পরিকল্পনা এটাই।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা এমনও আভাস দিয়েছেন যে মনোহর পারিক্করের সফর হয়তো আগামী কিছুদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতো – কিন্তু সাবমেরিন কেনার ঘটনায় এই সফর যে ত্বরান্বিত হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাও ধারণা করছেন যে বাংলাদেশ সফরে মি. পারিক্করের একটা প্রধান উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে প্রশমিত করা।
নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের কাছে সাবমেরিন হস্তান্তর করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল লিউ জিঝু। ছবি আইএসপিআরের সৌজন্যে
বস্তুত অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রায় ৩০ বছর পর যখন কোনও চীনা প্রেসিডেন্ট প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন, তখন থেকেই ভারত বাংলাদেশে চীনের কর্মকাণ্ডের ওপর সতর্ক নজর রাখছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সেই ঢাকা সফরে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মোট ২৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তখন থেকেই দিল্লির নীতি-নির্ধারকদের কপালে কিছুটা দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
চীনের এই বিপুল অর্থনৈতিক শক্তি বা এমনকি সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা যে ভারতের নেই, সেটা দিল্লিরও জানা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের অন্য কিছু সুবিধা নিশ্চয় আছে।
‘ভৌগোলিক অবস্থান, স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের নিরিখে প্রতিরক্ষা খাতে ভারতই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ‘ন্যাচারাল পার্টনার’ বা স্বাভাবিক সঙ্গী– চীন নয়। এমন কী শ্রীলঙ্কাও সেই একই জিনিস উপলব্ধি করেছে - আমি নিশ্চিত বাংলাদেশও অচিরেই সেটা বুঝতে পারবে’, বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন দিল্লির একটি নামী প্রতিরক্ষা থিঙ্কট্যাঙ্কের কর্ণধার।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করও তার আসন্ন বাংলাদেশ সফরে ঠিক সেই বার্তাটাই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশে নিয়ে যাবেন।
/এইচকে/