Follow along with the video below to see how to install our site as a web app on your home screen.
Note: This feature may not be available in some browsers.
Good!
Lets hope it gets completed soon! Its supposed to be a boost for Bangladeshi economy.
thanks for the shareআমাদের পদ্মা সেতু - সঠিক তথ্য ও ছবি
15 Dec, 2015
দেব অর্ণব রায়
পদ্মা সেতু স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো অবকাঠামো প্রকল্প। শুরু থেকেই নানা কারনে আলোচিত এই প্রকল্প। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি, নানামুখী ষড়যন্ত্র, কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে দাতাদের পিছুটান, মন্ত্রীর পদত্যাগ, বাংলাদেশ সরকারের পিছু না হঠা, নিজেদের টাকায় সেতু করার মত উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত, গুটি গুটি পায়ে সেই সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া, পরে দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পেরে বিশ্বব্যাংকের পুনরায় অর্থায়নের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশ সরকারের সেই অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের টাকাতেই সেতু করার গর্বিত সিদ্ধান্তে অটল থাকা এমন নানা রকম ঘটন অঘটনে পরিপূর্ণ এই সেতুর আপাত ইতিহাস।
স্বাভাবিকভাবেই বৃহত্তম ও আলোচিত এই প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং প্রত্যাশার কমতি নেই। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খবরটিও হয়েছে সংবাদের শিরোনাম। আর সেই সুযোগে নানারকম ভুল এবং মিথ্যা তথ্য, উপাত্ত এবং ছবিও হয়েছে খবরের শিরোনাম। এর মধ্যে অনেক ভুল ইচ্ছাকৃত, অনেক ভুল অনিচ্ছাকৃত, অনেক ভুল বিভিন্ন রকম প্রকৌশলগত শব্দ ও একক এর কোন জ্ঞান না থাকা কেউ ওই বিষয় নিয়ে খবর করার ফল, অনেক ভুল আসলে এই বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে অহেতুক প্রগলভতার কারনে হচ্ছে। ভুলের মাত্রা এতোই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে জাপানের একটি ব্রিজের ছবি পদ্মা সেতুর ছবি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যখনি দেখেছি ভুল ধরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গতকাল একজন মন্ত্রীও সেই ছবি পোষ্ট দিয়েছেন, দুইটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকেও সেই ছবিই দেখলাম পদ্মা সেতুর ছবি হিসেবে। এটি একটি বড় মাপের ভুল। আরও আছে। দুইদিন আগে দেখলাম একটি বহুল প্রচারিত অনলাইন দৈনিকে, পাইলের গভীরতা উল্লেখ করা হয়েছে ৪০০ মিটার যা ৪০ তলা ভবনের সমান, এটি আসলে ভুল। ৪০ তলা ভবন হচ্ছে ৪০০ ফুট বা ১২০ মিটার। আরেক নিউজে এসেছে পাথরের স্তর পাওয়া গেছে সাড়ে দশ কিলোমিটার নীচে। অত গভীরে যাওয়ার কোন প্রযুক্তি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে বলে জানা নেই। এমন অনেক ভুল অজান্তেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। আসুন সঠিক তথ্য জানি।
সবার আগে জানা দরকার যে এটি পদ্মা সেতুর ছবি নয়। এটি জাপানের একটি ব্রিজের ছবি (Tokyo Bay Aqua-Line - Wikipedia, the free encyclopedia
জাপানের ব্রিজ, পদ্মার নয়...
পদ্মা সেতুর অবস্থান নীচের ম্যাপে দেখুন।
পদ্মা সেতুর অবস্থান
কেমন হবে দেখতে পদ্মা সেতু? নীচে দেখুন কিছু ইলাস্ট্রেটেড ছবি। সূত্রঃ http://iabse-bd.org/old/94.pdf এই ছবিগুলোও ইলাস্ট্রেটেড মানে কাল্পনিক এবং নির্মাণের সময় ও পরে পরিবর্তন হতে পারে।
টপ ভিউ
রাতের বেলার ইলাস্ট্রেশনসাইড ভিউ
কিছু তথ্যঃ জেনে নেয়া যাক ( সূত্রঃ Padma Multipurpose Bridge | Bangladesh Bridge Authority
- ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি। ৪০টা সেন্টার পিয়ার বা স্তম্ভ, ২টা ট্রানজিশন পিয়ার। মোট ৪৩ টা পিয়ারের মধ্যে ৪১টা স্প্যান। ১৫০মিঃ করে ৪১টা স্প্যান ৪১ * ১৫০ = ৬১৫০ মিঃ বা ৬.১৫ কি মিঃ। এই পুরা দৈর্ঘ্যটা আবার ৭ টা মডিউলে ভাগ করা। ৬টা মডিউলের প্রতিটাতে আছে ৬টা করে স্প্যান, আর পাঁচটা মডিউলে ১ টা করে স্প্যান। মোট ৪১ টা স্প্যান।
- পাইলিং হবে লোহার পাইপের। পাইলের ব্যাস ৩মিঃ বা ১০ ফিট। গভীরতা পারের কাছে ১১৭ মিঃ বা ৩৯ তলা ভবনের সমান উঁচু, আর নদীর মাঝখানে ১০৪ মিঃ বা ৩৪ তলা ভবনের সমান উঁচু। মোট পাইলিং হবে ২৪০ টি। ৪০ টি সেন্টার পিয়ারের প্রতিটিতে ৬টি করে। পাইলগুলোর পাইপের মতো মাঝখানে হলো বা খালি থাকবে। এই স্টিল পাইপগুলোর পুরুত্ব হবে ৫০ মিঃ মিঃ বা দুই ইঞ্চির সমান। এমন ছয়টি লোহার পাইল বসিয়ে পরে মাথায় নির্মান করা হবে পাইল ক্যাপ। পাইল গুলো সোজা না বসিয়ে ৮০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে বসানো হবে পাইলের কাঠামোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের জন্যে। প্রথমে যদিও কনক্রিটের পাইলের কথা বিবেচনা করা হয়েছিল কিন্তু পুরো কাঠামোটিকে বেশি ভূমিকম্প সহ করে তোলার জন্যে পরে স্টিলের পাইলই বেশী কার্যকর বলে বিশদ হিসাব নিকাশে প্রমাণিত হয়।
ছয়টি বাঁকানো পাইল মিলে একটি পাইলক্যাপ
- ব্রিজ হচ্ছে দুই ডেকের। নীচে রেল লাইনের ডেক। দুইটি লাইন যাবে পাশাপাশি। উপরে মোট ২২মিঃ প্রস্থের ৪ লেনের রাস্তা। দুই ডেকের মোট উচ্চতা ১৩.৬ মিঃ। ডেকের নীচ থেকে পানির মধ্যে উচ্চতা ১৮.৩ মিঃ।
স্কাউরিং: সেতুর নকশা তে স্কাউরিং সব সময়েই অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। পদ্মা সেতুর লাইফ স্প্যান ধরা হয়েছে ১০০ বছর। অর্থাৎ, নির্মানের পরে ১০০ বছরের নদীগর্ভে বা সমতলের যে পরিবর্তন হতে পারে, সেইগুলো ধরেই ডিজাইন করা হয়েছে। স্কাউরিং কি জিনিস তা বুঝতে নীচের ছবিটা দেখুন।
স্কাউরিংয়ের ফলে ব্রিজের পাইল বেরিয়ে গিয়ে ব্রিজের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়
যখন বর্ষাকালে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হয় তখন সেই প্রবাহ ব্রিজের ফাইন্ডেশনে বাধা পেয়ে প্রবল বেগে গিয়ে নদীর তলার মাটিতে আঘাত করে সেই মাটি আলগা করে দেয়। এভাবে শক্ত মাটি আলগা হতে হতে পাইলের এফেক্টিভ ডেপথ কমতে থাকে ফলে ব্রিজের ভিত্তি দুর্বল হতে থাকে। ব্রিজের ডিজাইনার বিশ্বখ্যাত AECOM কোম্পানির এসোসিয়েট ডিরেক্টর সুজাত ডি সিলভার লিখা একটি পাবলিকেশনে (An Error Occurred Setting Your User Cookie জানা যায়, ১০০ বছরে স্কাউরিং হবে ৬২ মিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ, যদিও পাইলের গভীরতা ১১৭ মিটার কিন্তু সেতুর ডিজাইন লাইফের শেষের দিকে গিয়ে এই গভীরতার মাত্র (১১৭-৬২) = ৫৫ মিঃ দৈর্ঘ্য হবে এফেক্টিভ ডেপথ।
ভূমিকম্প সহতাঃ এই ব্যাপারটা নিয়েও নানা পত্রিকায় নানা রকম তথ্য দেখেছি, বলতে গেলে কেউই ঠিক নিউজ করেনি এবং ব্যাপারটা বুঝতে ভুল করেছে। একটি কাঠামোর ভূমিকম্প সহতা মূলত ৫টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। ভূমিকম্পের তীব্রতা, স্থায়িত্বকাল, কাঠামো থেকে ভূমিকম্পের দূরত্ব, ওই এলাকার মাটির গঠন, কাঠামোর নির্মান উপাদান। পদ্মা সেতুর সাইটে মাটির স্যাম্পল নেয়া হয়েছে নদী গর্ভের ১৬০মিঃ গভীর থেকে, যাতে ওই এলাকার মাটীর প্রকৃতি সঠিকভাবে জানা যায়।
ভূমিকম্প সহতার ডিজাইন প্যারামিটার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
Level 1 – Operating Level Earthquake (OLE)
Seismic Hazard - The OLE events have a 65% probability of being exceeded in the design life of 100 years or a return period of 100 years. The OLE events have a PGA of 0.052g in the very dense sand at an elevation of -120 m PWD.
Level 2 – Contingency Level Earthquake (CLE)
Seismic Hazard - The CLE events have a 20% probability of being exceeded in the design life of 100 years or a return period of 475 years. The CLE events have a PGA of 0.144g in the very dense sand at an elevation of - 120 m PWD.
এখানে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। অপারেটিং লেভেল আর্থকোয়্যাক বলতে বুঝনো হচ্ছে, কাঠামোটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এই পরিমাণ গ্রাউন্ড মুভমেন্ট হলেও এর ক্ষতির পরিমাণ যা হবে তাতেও সেতুর উপড়ে যান চলাচল বন্ধ করতে হবে না। অর্থাৎ সেতু অপারেশনাল থাকবে। সেই স্কেল এখানে ধরা হয়েছে ০.০৫২g বা 5.2% of g in terms of Peak Ground Acceleration (PGA) যেখানে g হচ্ছে Gravitational Acceleration 9.81 m/s2. আর কনটিঞ্জেন্সি লেভেল আর্থকোয়াক বলতে বুঝানো হয়েছে যে এই পরিমাণ গ্রাউন্ড মুভমেন্ট হলে সেতুটি আর অপারেশনাল থাকবে না অর্থাৎ বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু তা মেরামত করা যাবে। সেই স্কেল এখানে ধরা হয়েছে ০.১৪৪ g বা 14.4% of g in terms of Peak Ground Acceleration (PGA) যেখানে g হচ্ছে Gravitational Acceleration 9.81 m/s2.
কাঠামোর নকশায় সাধারণত রিখটার স্কেলের হিসাব ব্যবহৃত হয় না। PGA ব্যবহৃত হয় (https://goo.gl/R2eXqH)। এবং রিখটার স্কেলকে PGA তে রূপান্তরের সরাসরি কোনও ফর্মুলা বা সূত্র নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী নানা রকম ফর্মুলা দিয়েছেন কিন্তু এগুলোর অনেকটাই অনেকরকম সম্ভাব্যতার উপর ভিত্তি করে যা সবসময়ে একই ফলাফল দেয় না।
ব্যাপারটা আসলে এমন যে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মোট শক্তির পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। ৬ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০ গুণ বেশি প্রবল এবং ৩১ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করে। সেই শক্তি নানাভাবে নির্গত হয়। কিছু শক্তি যায় তাপ তৈরিতে, কিছু যায় ভুগর্ভস্থ পাথরের স্তরে ফাটল তৈরীতে। এভাবে শক্তি শেষ হতে হতে ভূমিকম্পের পুরো শক্তির একটা ক্ষুদ্র অংশ ভূপৃষ্ঠে এসে গতি এবং ত্বরণ তৈরি করে যা কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। রিখটার স্কেল হচ্ছে ভূমিকম্পের ফলে নিঃসরিত পুরো শক্তির পরিমাপ আর PGA হচ্ছে সেই ভূমিকম্পের ফলে ভু পৃষ্ঠে সৃষ্ঠ গতিবেগ ও ত্বরণ যার ফলে কাঠামো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার পরিমাপ। এখন একই রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট PGA অনেক পরিমাণে কম বেশি হতে পারে ভূমিকম্পের চোখ থেকে কাঠামোর দূরত্বের কারনে, মাটির প্রকৃতি, বিভিন্ন প্রকৃতির মাটির স্তরের পুরুত্বের ভিন্নতার সহ নানা কারনে।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে আপনি একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা খেলনা গাড়ি দিলেন। দিয়ে বললেন যে খেলনাটাকে আমি দুইটা প্যারামিটারের উপর ডিজাইন করেছি। এটা ১মিঃ/সেঃ বেগে ছুঁড়ে মারলেও এটার কিছুটা ক্ষতি হবে কিন্তু চলবে (অপারেশনাল লেভেল), আর ২মিঃ/সেঃ বেগে ছুঁড়ে ফেললে এটার চলা বন্ধও হয়ে যাবে কিন্তু আমি ঠিক করতে পারবো (কন্টিঞ্জেন্সি লেভেল)। এখন আপনি বাচ্চার কাছে খেলনাটা দিলেন, সে ১ মিঃ/সেঃ বেগে যদি বিছানায় ছুঁড়ে মারে তাহলে হয়তো কিছুই হবে না, একই বেগে কাদায় মারলে হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কিন্তু একই বেগে পাথরে ছুঁড়ে মারলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। ভূমিকম্পের ব্যাপারটাও অনেকটা একই রকম। ভূমিকম্পের ফলে নির্গত মোট শক্তির কতভাগ এসে সেতুতে আঘাত করবে সেটা জানা নেই। আর তাই বলা যাবে না যে সেতু ৬, ৭, ৮, বা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করোতে পারবে।
নদীশাসনঃ দুইপারে মোট নদী শাসন করা হবে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তর পার বা মাওয়া ভাগে ১.৬ কিমি। এক কোটি কিউবিক মিটার ড্রেজিং করে সাড়ে আট লক্ষ টন পাথর ফেলা হবে। দক্ষিণ পার বা জাজিরা ভাগে ১২.৪ কিমি নদীশাসন করা হবে। ৪ কোটি কিউবিক মিটার ড্রেজিং করে ৩০ লক্ষ টন পাথর ফেলা হবে (http://goo.gl/9cngIY)।
পরিশেষে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প, তাও নিজেদের অর্থায়নে। এটা যেমন গর্বের তেমনি কার্যকরী। সকল বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পেই জনগণ লাভবান হয়। এখানেও ব্যতিক্রম কিছু না। যমুনা নদিতে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মঙ্গা বিলুপ্ত হয়েছে, সচ্ছলতা এসেছে অনেক ক্ষেত্রেই। পদ্মা সেতুও দক্ষিণ বঙ্গের সাথে ঢাকার যোগাযোগ অনেক সহজ ও দ্রুততর করবে। সেই সেতু নিয়ে ভুল, অসত্য তথ্য প্রচার না করে সঠিক এবং যাচাই করা তথ্য ব্যবহার করা উচিৎ।
found a very good article regarding Padma multi purpose bridge from facebook.
@BDforever @bongbang @masud @Riyad @iajdani @al zakir @Doyalbaba @asad71
আমাদের পদ্মা সেতু - সঠিক তথ্য ও ছবি
15 Dec, 2015
দেব অর্ণব রায়
পদ্মা সেতু স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো অবকাঠামো প্রকল্প। শুরু থেকেই নানা কারনে আলোচিত এই প্রকল্প। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি, নানামুখী ষড়যন্ত্র, কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে দাতাদের পিছুটান, মন্ত্রীর পদত্যাগ, বাংলাদেশ সরকারের পিছু না হঠা, নিজেদের টাকায় সেতু করার মত উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত, গুটি গুটি পায়ে সেই সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া, পরে দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পেরে বিশ্বব্যাংকের পুনরায় অর্থায়নের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশ সরকারের সেই অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের টাকাতেই সেতু করার গর্বিত সিদ্ধান্তে অটল থাকা এমন নানা রকম ঘটন অঘটনে পরিপূর্ণ এই সেতুর আপাত ইতিহাস।
স্বাভাবিকভাবেই বৃহত্তম ও আলোচিত এই প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং প্রত্যাশার কমতি নেই। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খবরটিও হয়েছে সংবাদের শিরোনাম। আর সেই সুযোগে নানারকম ভুল এবং মিথ্যা তথ্য, উপাত্ত এবং ছবিও হয়েছে খবরের শিরোনাম। এর মধ্যে অনেক ভুল ইচ্ছাকৃত, অনেক ভুল অনিচ্ছাকৃত, অনেক ভুল বিভিন্ন রকম প্রকৌশলগত শব্দ ও একক এর কোন জ্ঞান না থাকা কেউ ওই বিষয় নিয়ে খবর করার ফল, অনেক ভুল আসলে এই বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে অহেতুক প্রগলভতার কারনে হচ্ছে। ভুলের মাত্রা এতোই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে জাপানের একটি ব্রিজের ছবি পদ্মা সেতুর ছবি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যখনি দেখেছি ভুল ধরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গতকাল একজন মন্ত্রীও সেই ছবি পোষ্ট দিয়েছেন, দুইটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকেও সেই ছবিই দেখলাম পদ্মা সেতুর ছবি হিসেবে। এটি একটি বড় মাপের ভুল। আরও আছে। দুইদিন আগে দেখলাম একটি বহুল প্রচারিত অনলাইন দৈনিকে, পাইলের গভীরতা উল্লেখ করা হয়েছে ৪০০ মিটার যা ৪০ তলা ভবনের সমান, এটি আসলে ভুল। ৪০ তলা ভবন হচ্ছে ৪০০ ফুট বা ১২০ মিটার। আরেক নিউজে এসেছে পাথরের স্তর পাওয়া গেছে সাড়ে দশ কিলোমিটার নীচে। অত গভীরে যাওয়ার কোন প্রযুক্তি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে বলে জানা নেই। এমন অনেক ভুল অজান্তেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। আসুন সঠিক তথ্য জানি।
সবার আগে জানা দরকার যে এটি পদ্মা সেতুর ছবি নয়। এটি জাপানের একটি ব্রিজের ছবি (Tokyo Bay Aqua-Line - Wikipedia, the free encyclopedia
জাপানের ব্রিজ, পদ্মার নয়...
পদ্মা সেতুর অবস্থান নীচের ম্যাপে দেখুন।
পদ্মা সেতুর অবস্থান
কেমন হবে দেখতে পদ্মা সেতু? নীচে দেখুন কিছু ইলাস্ট্রেটেড ছবি। সূত্রঃ http://iabse-bd.org/old/94.pdf এই ছবিগুলোও ইলাস্ট্রেটেড মানে কাল্পনিক এবং নির্মাণের সময় ও পরে পরিবর্তন হতে পারে।
টপ ভিউ
রাতের বেলার ইলাস্ট্রেশনসাইড ভিউ
কিছু তথ্যঃ জেনে নেয়া যাক ( সূত্রঃ Padma Multipurpose Bridge | Bangladesh Bridge Authority
- ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি। ৪০টা সেন্টার পিয়ার বা স্তম্ভ, ২টা ট্রানজিশন পিয়ার। মোট ৪৩ টা পিয়ারের মধ্যে ৪১টা স্প্যান। ১৫০মিঃ করে ৪১টা স্প্যান ৪১ * ১৫০ = ৬১৫০ মিঃ বা ৬.১৫ কি মিঃ। এই পুরা দৈর্ঘ্যটা আবার ৭ টা মডিউলে ভাগ করা। ৬টা মডিউলের প্রতিটাতে আছে ৬টা করে স্প্যান, আর পাঁচটা মডিউলে ১ টা করে স্প্যান। মোট ৪১ টা স্প্যান।
- পাইলিং হবে লোহার পাইপের। পাইলের ব্যাস ৩মিঃ বা ১০ ফিট। গভীরতা পারের কাছে ১১৭ মিঃ বা ৩৯ তলা ভবনের সমান উঁচু, আর নদীর মাঝখানে ১০৪ মিঃ বা ৩৪ তলা ভবনের সমান উঁচু। মোট পাইলিং হবে ২৪০ টি। ৪০ টি সেন্টার পিয়ারের প্রতিটিতে ৬টি করে। পাইলগুলোর পাইপের মতো মাঝখানে হলো বা খালি থাকবে। এই স্টিল পাইপগুলোর পুরুত্ব হবে ৫০ মিঃ মিঃ বা দুই ইঞ্চির সমান। এমন ছয়টি লোহার পাইল বসিয়ে পরে মাথায় নির্মান করা হবে পাইল ক্যাপ। পাইল গুলো সোজা না বসিয়ে ৮০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে বসানো হবে পাইলের কাঠামোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের জন্যে। প্রথমে যদিও কনক্রিটের পাইলের কথা বিবেচনা করা হয়েছিল কিন্তু পুরো কাঠামোটিকে বেশি ভূমিকম্প সহ করে তোলার জন্যে পরে স্টিলের পাইলই বেশী কার্যকর বলে বিশদ হিসাব নিকাশে প্রমাণিত হয়।
ছয়টি বাঁকানো পাইল মিলে একটি পাইলক্যাপ
- ব্রিজ হচ্ছে দুই ডেকের। নীচে রেল লাইনের ডেক। দুইটি লাইন যাবে পাশাপাশি। উপরে মোট ২২মিঃ প্রস্থের ৪ লেনের রাস্তা। দুই ডেকের মোট উচ্চতা ১৩.৬ মিঃ। ডেকের নীচ থেকে পানির মধ্যে উচ্চতা ১৮.৩ মিঃ।
স্কাউরিং: সেতুর নকশা তে স্কাউরিং সব সময়েই অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। পদ্মা সেতুর লাইফ স্প্যান ধরা হয়েছে ১০০ বছর। অর্থাৎ, নির্মানের পরে ১০০ বছরের নদীগর্ভে বা সমতলের যে পরিবর্তন হতে পারে, সেইগুলো ধরেই ডিজাইন করা হয়েছে। স্কাউরিং কি জিনিস তা বুঝতে নীচের ছবিটা দেখুন।
স্কাউরিংয়ের ফলে ব্রিজের পাইল বেরিয়ে গিয়ে ব্রিজের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়
যখন বর্ষাকালে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হয় তখন সেই প্রবাহ ব্রিজের ফাইন্ডেশনে বাধা পেয়ে প্রবল বেগে গিয়ে নদীর তলার মাটিতে আঘাত করে সেই মাটি আলগা করে দেয়। এভাবে শক্ত মাটি আলগা হতে হতে পাইলের এফেক্টিভ ডেপথ কমতে থাকে ফলে ব্রিজের ভিত্তি দুর্বল হতে থাকে। ব্রিজের ডিজাইনার বিশ্বখ্যাত AECOM কোম্পানির এসোসিয়েট ডিরেক্টর সুজাত ডি সিলভার লিখা একটি পাবলিকেশনে (An Error Occurred Setting Your User Cookie জানা যায়, ১০০ বছরে স্কাউরিং হবে ৬২ মিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ, যদিও পাইলের গভীরতা ১১৭ মিটার কিন্তু সেতুর ডিজাইন লাইফের শেষের দিকে গিয়ে এই গভীরতার মাত্র (১১৭-৬২) = ৫৫ মিঃ দৈর্ঘ্য হবে এফেক্টিভ ডেপথ।
ভূমিকম্প সহতাঃ এই ব্যাপারটা নিয়েও নানা পত্রিকায় নানা রকম তথ্য দেখেছি, বলতে গেলে কেউই ঠিক নিউজ করেনি এবং ব্যাপারটা বুঝতে ভুল করেছে। একটি কাঠামোর ভূমিকম্প সহতা মূলত ৫টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। ভূমিকম্পের তীব্রতা, স্থায়িত্বকাল, কাঠামো থেকে ভূমিকম্পের দূরত্ব, ওই এলাকার মাটির গঠন, কাঠামোর নির্মান উপাদান। পদ্মা সেতুর সাইটে মাটির স্যাম্পল নেয়া হয়েছে নদী গর্ভের ১৬০মিঃ গভীর থেকে, যাতে ওই এলাকার মাটীর প্রকৃতি সঠিকভাবে জানা যায়।
ভূমিকম্প সহতার ডিজাইন প্যারামিটার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
Level 1 – Operating Level Earthquake (OLE)
Seismic Hazard - The OLE events have a 65% probability of being exceeded in the design life of 100 years or a return period of 100 years. The OLE events have a PGA of 0.052g in the very dense sand at an elevation of -120 m PWD.
Level 2 – Contingency Level Earthquake (CLE)
Seismic Hazard - The CLE events have a 20% probability of being exceeded in the design life of 100 years or a return period of 475 years. The CLE events have a PGA of 0.144g in the very dense sand at an elevation of - 120 m PWD.
এখানে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। অপারেটিং লেভেল আর্থকোয়্যাক বলতে বুঝনো হচ্ছে, কাঠামোটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এই পরিমাণ গ্রাউন্ড মুভমেন্ট হলেও এর ক্ষতির পরিমাণ যা হবে তাতেও সেতুর উপড়ে যান চলাচল বন্ধ করতে হবে না। অর্থাৎ সেতু অপারেশনাল থাকবে। সেই স্কেল এখানে ধরা হয়েছে ০.০৫২g বা 5.2% of g in terms of Peak Ground Acceleration (PGA) যেখানে g হচ্ছে Gravitational Acceleration 9.81 m/s2. আর কনটিঞ্জেন্সি লেভেল আর্থকোয়াক বলতে বুঝানো হয়েছে যে এই পরিমাণ গ্রাউন্ড মুভমেন্ট হলে সেতুটি আর অপারেশনাল থাকবে না অর্থাৎ বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু তা মেরামত করা যাবে। সেই স্কেল এখানে ধরা হয়েছে ০.১৪৪ g বা 14.4% of g in terms of Peak Ground Acceleration (PGA) যেখানে g হচ্ছে Gravitational Acceleration 9.81 m/s2.
কাঠামোর নকশায় সাধারণত রিখটার স্কেলের হিসাব ব্যবহৃত হয় না। PGA ব্যবহৃত হয় (https://goo.gl/R2eXqH)। এবং রিখটার স্কেলকে PGA তে রূপান্তরের সরাসরি কোনও ফর্মুলা বা সূত্র নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী নানা রকম ফর্মুলা দিয়েছেন কিন্তু এগুলোর অনেকটাই অনেকরকম সম্ভাব্যতার উপর ভিত্তি করে যা সবসময়ে একই ফলাফল দেয় না।
ব্যাপারটা আসলে এমন যে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মোট শক্তির পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। ৬ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০ গুণ বেশি প্রবল এবং ৩১ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করে। সেই শক্তি নানাভাবে নির্গত হয়। কিছু শক্তি যায় তাপ তৈরিতে, কিছু যায় ভুগর্ভস্থ পাথরের স্তরে ফাটল তৈরীতে। এভাবে শক্তি শেষ হতে হতে ভূমিকম্পের পুরো শক্তির একটা ক্ষুদ্র অংশ ভূপৃষ্ঠে এসে গতি এবং ত্বরণ তৈরি করে যা কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। রিখটার স্কেল হচ্ছে ভূমিকম্পের ফলে নিঃসরিত পুরো শক্তির পরিমাপ আর PGA হচ্ছে সেই ভূমিকম্পের ফলে ভু পৃষ্ঠে সৃষ্ঠ গতিবেগ ও ত্বরণ যার ফলে কাঠামো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার পরিমাপ। এখন একই রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট PGA অনেক পরিমাণে কম বেশি হতে পারে ভূমিকম্পের চোখ থেকে কাঠামোর দূরত্বের কারনে, মাটির প্রকৃতি, বিভিন্ন প্রকৃতির মাটির স্তরের পুরুত্বের ভিন্নতার সহ নানা কারনে।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে আপনি একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা খেলনা গাড়ি দিলেন। দিয়ে বললেন যে খেলনাটাকে আমি দুইটা প্যারামিটারের উপর ডিজাইন করেছি। এটা ১মিঃ/সেঃ বেগে ছুঁড়ে মারলেও এটার কিছুটা ক্ষতি হবে কিন্তু চলবে (অপারেশনাল লেভেল), আর ২মিঃ/সেঃ বেগে ছুঁড়ে ফেললে এটার চলা বন্ধও হয়ে যাবে কিন্তু আমি ঠিক করতে পারবো (কন্টিঞ্জেন্সি লেভেল)। এখন আপনি বাচ্চার কাছে খেলনাটা দিলেন, সে ১ মিঃ/সেঃ বেগে যদি বিছানায় ছুঁড়ে মারে তাহলে হয়তো কিছুই হবে না, একই বেগে কাদায় মারলে হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কিন্তু একই বেগে পাথরে ছুঁড়ে মারলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। ভূমিকম্পের ব্যাপারটাও অনেকটা একই রকম। ভূমিকম্পের ফলে নির্গত মোট শক্তির কতভাগ এসে সেতুতে আঘাত করবে সেটা জানা নেই। আর তাই বলা যাবে না যে সেতু ৬, ৭, ৮, বা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করোতে পারবে।
নদীশাসনঃ দুইপারে মোট নদী শাসন করা হবে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তর পার বা মাওয়া ভাগে ১.৬ কিমি। এক কোটি কিউবিক মিটার ড্রেজিং করে সাড়ে আট লক্ষ টন পাথর ফেলা হবে। দক্ষিণ পার বা জাজিরা ভাগে ১২.৪ কিমি নদীশাসন করা হবে। ৪ কোটি কিউবিক মিটার ড্রেজিং করে ৩০ লক্ষ টন পাথর ফেলা হবে (http://goo.gl/9cngIY)।
পরিশেষে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প, তাও নিজেদের অর্থায়নে। এটা যেমন গর্বের তেমনি কার্যকরী। সকল বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পেই জনগণ লাভবান হয়। এখানেও ব্যতিক্রম কিছু না। যমুনা নদিতে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মঙ্গা বিলুপ্ত হয়েছে, সচ্ছলতা এসেছে অনেক ক্ষেত্রেই। পদ্মা সেতুও দক্ষিণ বঙ্গের সাথে ঢাকার যোগাযোগ অনেক সহজ ও দ্রুততর করবে। সেই সেতু নিয়ে ভুল, অসত্য তথ্য প্রচার না করে সঠিক এবং যাচাই করা তথ্য ব্যবহার করা উচিৎ।
found a very good article regarding Padma multi purpose bridge from facebook.
@BDforever @bongbang @masud @Riyad @iajdani @al zakir @Doyalbaba @asad71