What's new

Bangabandhu satellite to be launched May 10

> ফেসবুক
কতটা সফল হবে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট?







018
১। পৃথিবীর যত দেশই স্যাটেলাইট উড়িয়েছে তারা প্রত্যেকেই ইনিশিয়াল স্যাটেলাইট নিজের অক্ষরেখায় উড়িয়েছে। বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৮৬-৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা রেখায়। সে হিসেবে বাংলাদেশ এ অবস্থানেই স্যাটেলাইট পাওয়ার কথা। ৮৮-৯১ এ রাশিয়ার দুটিসহ মোট চারটি স্যাটেলাইট রয়েছে। তাই এখানে স্থান পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু ৮৬-৮৮ ডিগ্রি খালি থাকার পরও মহাকাশ সংস্থা আইটিইউ বাংলাদেশকে স্লট দেয় নি।
বাংলাদেশ চেষ্টা করে ১০২ ডিগ্রিতে। সেখানে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং গ্যালির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের বন্ধু ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ আপত্তি জানায়। তাদের আপত্তি ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তাদের সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটাবে। দৌড়ানি খেয়ে বাংলাদেশ চেষ্টা করে ৬৯ ডিগ্রিতে। সেখানে একই আপত্তি নিয়ে চীন, সিঙ্গাপুর,মালেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ দৌড়ানি দেয়। ৪০ টির মধ্যে অর্ধেক দেশই বাংলাদেশকে দ্বিমুখী দৌড়ানি দেয়।
দ্বিমুখী দৌড়ানি খেয়ে বাংলাদেশ সবশেষে স্থান পায় ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা রেখায়।
প্রশ্ন হচ্ছে ৯০ ডিগ্রির বাংলাদেশকে ১১৯.১ ডিগ্রির স্যাটেলাইট কতটা নিখুঁতভাবে কাভার করবে? যে কোন অবস্থানে থাকলেই যদি নিখুঁত কাভার করা সম্ভব হত তবে প্রতিটা দেশ কেন নিজের অবস্থানেই স্যাটেলাইট উড়ায়?
কিংবা কোন সমস্যা না হলে বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা আপত্তি জানাল কেন? সবশেষে আইটিইউ কেন খালি থাকার পরও বাংলাদেশকে ৮৬-৮৮ ডিগ্রিতে স্লট দিল না? উত্তর যাই হোক না কেন সেগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না।
২। বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেল বা বেসরকারি কোম্পানি কি বলা মাত্রই নিজের স্যাটেলাইট থেকে সেবা গ্রহণ করবে?
সেবার মান বিদেশী স্যাটেলাইট থেকে উন্নত হবে এই নিশ্চয়তা কে দেবে? অতীতে টেলিটকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ‘দেশের টাকা দেশে রাখুন’ বলে স্লোগান তুললেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নি। টেলিটকসহ যেকোন সরকারি সেবার মান কত জঘন্য সেটা সবাই জানে। জেনে শুনে কোন প্রতিষ্ঠান কেন এ পথে পা বাড়াবে?
৩। সরকার বিদেশে সেবা দিয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছে। কিনবে কারা? ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, আরব কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আমরা নিজেরা এখনো সম্পূর্ণ রূপে ভারতনির্ভর। সে জায়গায় ভারত বাদ দিয়ে নেপাল ভুটান আমাদের কাছে থেকে সেবা নেবে, এটা হাস্যকর যুক্তি। যুক্তিটাকে আরো হাস্যকর করার জন্য এশিয়ায় স্যাটেলাইট সংখ্যা দেখি।
ইন্দোনেশিয়া ১৩, জাপান ১৯৭, মালেশিয়া ৯/৭, পাকিস্তান ৩, ফিলিপাইন ২, থাইওয়ান ৯, আরব আমিরাত ৭, ভিয়েতনাম ৫, সিঙ্গাপুর ৪, থাইল্যান্ড ৮, সৌদি আরব ১৩, দক্ষিণ কোরিয়া ১৮, কাজাখস্থান ৫ টি, তুরষ্ক ১০, ইরান ৫, তুর্কেমেনিস্থান ১ টি। হিসেব শেষ না।
আরব স্টেট কমিউনিকিশন অর্গানাইজেশনের রয়েছে ১৩ টি, এশিয়া স্যাটেলাইট টেলিকম কোম্পানি ৭ টি, কমনওয়েলথের ১৪৯৬ টি। বাকি কে?
ভুটান, নেপাল, মায়ানমারের প্রতিবেশী ভারতের মাত্র ৬৭ টি (ISRO মতে ৮৪, স্যাটেলাইন ডেবরিস মতে ৭১) আর চীনের মাত্র ২৪৪ টি। এবার আপনি বলুন, এদের এতসব স্যাটেলাইট বাদ দিয়ে সদ্য আসমানে তোলা স্যাটেলাইট থেকে কে সেবা কিনবে?
আর যদি কেউ কিনতেই যায়, ভারত চীন তাদের ব্যবসার লসকে নিশ্চয়ই নীরবে মেনে নেবে না। বাংলাদেশ আশা করছে ভারতও আমাদের একমাত্র স্যাটেলাইট থেকে সেবা কিনবে। অথচ তাদের নিজেদেরই যে ৮৪ টা স্যাটেলাইট আছে এটা বোধহয় বাংলাদেশ জানে না।
সহজ কথায় বিদেশ আমাদের সেবা কিনবে, এটা কেবল গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁফে তেল দেয়া না, গোঁফ-মাথা সুদ্ধ নিজেই তেলের টিনে ডুব দেয়া।
৩। স্যাটেলাইটের বিভিন্ন রকমফের আছে। একেকটা দিয়ে একেক কাজ করা হয়। এ জন্য মাত্র দশটা দেশ ও সংস্থা ছাড়া সবকটা দেশের একাধিক স্যাটেলাইট রয়েছে। দাবী করা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে সব কাজ করা হবে।
এটা কি সম্ভব?
উদাহরণ হিসেবে যদি ভারতকে আনি তবে তাদের ৮৪ টা স্যাটেলাইটের মধ্যে ৩৪ টা স্যাটেলাইট কেবল টেলিকমিউনিকেশনের জন্য। বাকি গুলো আর্থ আবজারভেশন, নেভিগেশন বা স্পেস সায়েন্সের জন্য আলাদা আলাদা করা। ৮৪ স্যাটেলাইটের কেবল একটির কাজ দেখানো হয়েছে কমিউনিকেশন প্লাস আবহাওয়া মনিটরিং। আমাদের সবেধন নীলমণী দিয়ে বারমজা খাওয়া যাবে?
৪। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, আকাশে উৎক্ষেপণ করা ৪২% স্যাটেলাইট কক্ষপথে যেতেই ব্যর্থ হয়েছে। কক্ষপথে গিয়ে ঠিকঠাক কাজ করছে মাত্র ১৫% স্যাটেলাইট। আমাদের স্যাটেলাইট কি সেই ১৫% এর একটি হতে পারবে? সচিব সুনীল কান্তি বোস নিজেও এই তথ্য স্বীকার করে বলছেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ব্যর্থতা মেনে নেয়া হবে না।’ না মেনে আপনি কি করবেন? মহাকাশে মাস্তানি চলে?
আছেন কোন মহান ব্যাক্তি? ৪টা পয়েন্টের ঝাঁঝালো পয়েন্ট বাই পয়েন্ট একুরেট আন্সার দিয়ে দিবেন? আমি তাহলে নিরুঙ্কুশ ভাবে এই গর্বিত মিছিলে অংশগ্রহণ করতাম!
আসিফুর রহমানের ফেসবুক থেকে।
 
. . .
Back
Top Bottom