ভূমি বিনিময়ে ১,২০০ একর জমি বেশি পাচ্ছি এতে কি ভুল হয়েছে?
.:: World News - Headline news, local news, sports news, Entertainment news, polical news and more ::.
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ভূমি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আসামে যে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত করতে পেরেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তিনি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে বলেন, চুক্তিতে বাংলাদেশকে বেশি ভূমি দেয়া হয়েছে বলে বিরোধী দলের প্রচারিত তথ্য সঠিক নয়।
বরং এই চুক্তি অনুযায়ী আসাম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছ থেকে এক হাজার ২০০ একর ভূমি বেশি পেয়ে লাভবান হতে চলেছে।
আসামের বিধানসভা ও জনগণকে অবহিত না করে অপ্রকাশিত এক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বেশি ভূমি দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো ব্যাপক প্রচার চালায়। পরিসি'তি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে ১৭ অক্টোবর এক দিনের জন্য আসাম বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে হয়।
তরুণ গগৈ বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন জনগণকে ভূমি হস্তান্তর নিয়ে বিভ্রান্ত না করেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘দেশ ভাগের সময় থেকে যে ভূমি বাংলাদেশের অপদখলে ছিল আমরা বরং সেই ভূমি ফিরে পেয়েছি। এর দ্বারা কি ভুল করা হয়েছে?’ তিনি বলেন, এটা অবশ্য সত্য, কয়েক জায়গায় আমাদের সামান্য কিছু ভূমি হাতবদল হবে। কিন' প্রকৃত তথ্য হলো, যেভাবে ভারত সরকার বিষয়টির মীমাংসা করেছে তাতে আসাম এক হাজার ২০০ একর জমি বাংলাদেশের কাছ থেকে ফিরে পাবে।
তরুণ গগৈ আরো বলেন, ‘আসামের জমি দিয়ে সমঝোতা করার কোনো প্রশ্নই নেই। আর যে অংশটুকু আমরা ছেড়ে দিয়েছি তা দেশ ভাগের সময় থেকেই কখনো ভারতের দখলে ছিল না। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চুক্তির ফলে আমরা এক হাজার ২০০ একর ভূমি বাংলাদেশের দখলদারি থেকে ফেরত পাচ্ছি।’
তরুণ গগৈ বিধানসভায় এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। আমাদের প্রয়োজন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কলকাতা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে সরাসরি ট্রানজিট সুবিধা। এ ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার। উপরন' বর্তমান হাসিনা সরকার জঙ্গি নেতৃবৃন্দকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে ভারতকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।’
বিধানসভার এই বিশেষ অধিবেশনের শুরুতে বিরোধী দলগুলোর অন্যতম নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত বলেন, আসামের ভূমির এক ইঞ্চিও অন্য রাষ্ট্রকে হস্তান্তর করা বরদাশত করা হবে না।
আসামের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় ‘নাম্বার টু’ বলে পরিচিত মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আলোচনার সময় স্বীকার করেন, রাজ্যসরকার উলফার কমান্ডার-ইন-চিফ পরেশ বড়-য়ার ফাঁদে পড়ে ভারত-বাংলাদেশ ভূমি হস্তান্তর চুক্তির বিশদ বিবরণ অনেকটাই প্রকাশ করে দিয়েছে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার বিবরণ প্রকাশ না করাই হচ্ছে সরকারগুলোর প্রচলিত রীতি। হিমন্ত বিশ্বশর্মা আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধানসভায় বলেন, দেশ ভাগের সময় থেকেই চলে আসা সীমান্ত বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে দু’দেশেরই পারস্পরিক স্বার্থ দেখা হয়েছে।
আমরা বোরইবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশকে ১৯৩ একর জমি দিয়েছি, বদলে পেয়েছি এক হাজার ২৪০ একর জমি। এটা ছিল ‘ডিপ্লোম্যাসি’ বা ‘কূটনীতি’। কিন' যেহেতু আমরা এটা প্রকাশ করে দিলাম তাতে আমাদের বন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে এখন সমস্যায় পড়েছেন। কারণ তিনি তার দেশবাসীর কাছ থেকে প্রতিবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন।’
হেমন্ত বিশ্বশর্মা আরো বলেন, ‘আমরা খানিকটা উপলব্ধি না করেই উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়-য়ার ফাঁদে পড়ে গিয়েছি।
পরেশ বড়-য়া এমন এক খেলা শুরু করেন যাতে ভূমি হস্তান্তরের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করে দেয়া ছাড়া সরকারের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না। পরেশ বড়-য়ার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করা। কারণ শেখ হাসিনার সরকারই নিজ দেশ থেকে উলফাকে বিতাড়িত করেছে এবং ওই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের পাকড়াও করতে আমাদের সাহায্য করেছে। বড়-য়া চায়, খালেদা জিয়া ফের সরকারে আসুক। কারণ ওই সরকার নিজ দেশে উলফাকে দীর্ঘ দিন ধরে আশ্রয় দিয়েছিল।’
চুক্তি স্বাক্ষরের পরই উলফা নেতা পরেশ বড়-য়া এক বিবৃতি দিয়ে আসামের ভূমি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ করেন এবং এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এর ফলে আসামে যে বিক্ষোভ শুরু হয় তা সামলাতে গিয়ে তরুণ গগৈকে ভূমি হস্তান্তরের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করে দিতে হয়।